প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫, ১৮:৩৮
এক মিনিটে তাণ্ডব, ভাইরাল ভিডিও, গ্রেপ্তার চার
মগবাজারে প্রকাশ্য ছিনতাইয়ের ঘটনায় চার ছিনতাইকারী তিন দিনের রিমান্ডে

|আরো খবর
“আমার ব্যাগটা নিয়ে নিয়েন না, ভাই! এটা আমার সবকিছু”—চাপাতির কোপের মাঝেই এই আর্তি জানিয়েছিলেন মগবাজারের এক তরুণ। কিন্তু ছিনতাইকারীদের মন গলেনি। ফলাফল—ব্যাগ ছিনতাই, শরীরে কোপ, এবং সর্বোপরি নিরাপত্তাহীন শহরের নতুন অধ্যায়।
রাজধানীর মগবাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি হাতে সংঘটিত ভয়ংকর ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার চার আসামির প্রত্যেককে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার (৩০ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিনের আদালতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়।
রিমান্ডে কারা আছেন?
- মো. সোহেল রানা
- মো. জীবন ওরফে হৃদয়
- মো. শামীম
- মকবুল হোসেন
মকবুল হোসেন ছিলেন চোরাই মালামাল সংগ্রাহক তথা ‘রিসিভার’। অন্য তিনজন সরাসরি ছিনতাইয়ে অংশ নিতেন। তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই চক্রের সঙ্গে আরও সদস্য যুক্ত থাকতে পারে।
গ্রেপ্তার অভিযান: চাপাতি, মোবাইল ও নগদ অর্থ উদ্ধার
ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সোহেল রানাকে কেরানীগঞ্জ থেকে এবং জীবন, শামীম ও মকবুলকে মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে—
- ছিনতাইকৃত ব্যাগ
- নগদ ৯,৬০০ টাকা
- একটি মোবাইল ফোন
- দুইটি চাপাতি
- একটি মোটরসাইকেল
পুলিশের দাবি, এসব সামগ্রী ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল।
সিসিটিভি ভাইরাল: নৃশংসতা জনসমক্ষে
ঘটনাটি ঘটে ১৮ মে, দুপুর ১২টার দিকে। মগবাজারের ব্যস্ত এলাকায়, গ্রিনওয়ে গলির মতো জনসমাগমপূর্ণ রাস্তায় এক তরুণ ছিনতাইয়ের শিকার হন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়:
- তিন যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে এক তরুণের গতিরোধ করে।
- বাইক থেকে দুজন নেমে তরুণকে বাড়ির গেটের সামনে চেপে ধরে।
- দুজনের হাতে ছিল ধারালো চাপাতি, যা দিয়ে তরুণকে কুপিয়ে ভয় দেখানো হয়।
- তরুণের ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় তারা এবং পালাতে গেলে ভুক্তভোগী বাধা দেন।
- বাধা দেয়ায় আবারও হামলার শিকার হন তিনি।
মামলার বিবরণ
ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে গত ২৬ মে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলায় চার আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাজধানীতে ছিনতাইয়ের নতুন রূপ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মগবাজারের ঘটনা নজিরবিহীন নয়—বরং এটি রাজধানীতে ক্রমবর্ধমান অপরাধের প্রতিফলন। এক সময় রাতে ছিনতাই ছিল সীমাবদ্ধ, এখন তা দিবালোকে ও জনসম্মুখে হচ্ছে। অস্ত্রের ভয় এবং সংঘবদ্ধ গ্যাংয়ের আগ্রাসন নগরবাসীর নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিশেষজ্ঞ মত
ক্রিমিনোলজিস্ট ড. মাহফুজুর রহমান বলেন:
“সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও অপরাধীরা নির্ভয়ে এমন হামলা চালাতে সাহস পাচ্ছে, কারণ তারা জানে, বিচারিক কার্যক্রমে ফাঁকফোকর আছে। দ্রুত বিচারের অভাবে অপরাধীরা বারবার একই অপরাধ করে।”
পুলিশের প্রতিশ্রুতি
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন—
“এই চক্রের সঙ্গে কারা জড়িত, কোথা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে, কোথায় চোরাই মাল বিক্রি হয়—সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও গ্রেপ্তার হবে।”
উপসংহার
মগবাজারের ছিনতাইয়ের ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি নগরজীবনের একটি বিপদসংকেত। প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে এমন তাণ্ডব আর কোনো নাগরিক যেন দেখতে না হয়—এই প্রত্যাশায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।
ডিসিকে/এমজেডএইচ