রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫, ০৭:৪৯

শৈশবে বাল্যবন্ধুকে লেখা চিঠি

উজ্জ্বল হোসাইন
শৈশবে বাল্যবন্ধুকে লেখা চিঠি

প্রিয় বন্ধু মনির

আশা করি তুমি ভালো আছো। বহুদিন তোমার সাথে দেখা হয়নি, অথচ আমাদের শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা আজও আমার মনে বড়ো বাজে। তোমার সেই নির্ভেজাল হাসি, খেলাধুলা, ছোটখাটো খুনসুটি, স্কুলে পড়া নিয়ে প্রতিযোগিতা আর সন্ধ্যা পর্যন্ত একসাথে সময় কাটানোর স্মৃতি এখনও আমার মন কাঁদায়। তোমাকে ছেড়ে আমি পড়াশুনার জনে চলে এলাম আমার নানা বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের লালপুরে।

বন্ধু, আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে স্কুলের দূরত্ব কয়েক মাইল। গ্রামের মেঠোপথ প্রতিদিন হেঁটে যেতে যেতে তোমার কথাই মনে পড়ে। আজ হঠাৎ করে যখন গ্রামের রাস্তায় হাঁটছিলাম তোমার কথা মনে পড়লো। মনে হলো, তোমাকে একটা চিঠি লিখি কারণ চিঠি ছাড়াতো তোমার মনের কথাগুলো শুনতে পাই না। স্কুল থেকে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিদিনই পোস্টমাস্টারকে বলি আমার কী কোনো চিঠি এসেছে। আর তোমার চিঠি পেলে যেন আমাদের হারানো দিনগুলোর কিছুমাত্র ফিরে আসতে পারে আমাদের কথোপকথনের মাধ্যমে।

বন্ধু, আজ আমার শৈশবের স্কুলে তোমার কেমন লাগে? তুমি কী জানো কেমন করে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছি? তুমি আর আমি কিছুদিন শহরের পরিবেশে চলে আসবো। আমি জানি, তুমি চটপটে আর প্রাণবন্ত বলে খুব দ্রুতই নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। এইতো কিছুদিন পরেই নতুন শহরে চলে আসবো। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয়, হয়তো কখনও কখনও তোমার ও আমাদের সেই ছোট্ট মাঠের কথা মনে পড়ে, যেখানে আমরা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াতাম।

মনে আছে সেই স্কুলের প্রথম দিনগুলোর কথা? তোমার দোকানে আমার যখন যেটা প্রয়োজন নিয়ে নিতাম। তখন ওই সহযোগিতা আর তোমার বন্ধুত্বের আচরণ আজও আমাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে আছে। যদিও এখন দূরত্ব আমাদের আলাদা করেছে, তবু মনের বন্ধন অটুট থেকেছে এটাই সবচেয়ে বড়ো পাওনা।

বন্ধু, জানো, এখনকার জীবন অনেক বদলে গেছে। ছোটবেলার সেই নিশ্চিন্ত দিনগুলো এখন মনে হয় কোনো স্বপ্নের মতো। মনে হয়, যদি আবার ছোট্ট সেই দিনে ফিরে যেতাম! যদি আবার সেই নির্ভেজাল আনন্দে হারিয়ে যেতে পারতাম!

তুমি এখন কী কী করছো? পড়াশোনা কেমন চলছে? নতুন বন্ধুদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে আমার মতো তোমার সব বোকামি, হাসি আর কান্না ভাগ করে নেয়? যদিও আমি জানি, এমন বন্ধুত্ব বারবার আসে না জীবনে। শৈশবের বন্ধুত্ব অমূল্য একবার গড়ে উঠলে সেটা কখনো মুছে যায় না।

তোমার প্রিয় টিফিনের দোকানটা, যেখানে আমরা গোপনে আইসক্রিম খেতে যেতাম, সেটাও এখন আর নেই। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু বদলে যাচ্ছে, কিন্তু মনের মধ্যে সেই পুরনো ছবি যেন জমে আছে অমলিন, অক্ষয়।

বন্ধু, তুমি কি মনে রেখেছো সেই গ্রীষ্মের ছুটিতে আমাদের কুমিরের গল্প তৈরি করার দিনগুলো? দুপুরের রোদ্দুর উপেক্ষা করে আমরা বাড়ির পেছনের ঝিলে গিয়ে গল্প বানাতাম, জলে হাত-পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম, আর বড়রা বকাবকি করলেও আমরা পাত্তা দিতাম না। সেই দিনগুলো কি ফিরবে আর কখনো?

এখন অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ভাষা যেন হারিয়ে যায়। এত কথা জমে আছে মনে, তোমাকে দেখলে হয়তো সারারাত ধরে গল্প করতাম। ইচ্ছে করে হঠাৎ একদিন তোমার কাছে চলে যাই, তোমাকে চমকে দেই, আবার একসাথে পুরনো দিনের মতো সময় কাটাই।

জানো, এখনো যখন খুব কষ্ট হয়, অথবা যখন কিছু আনন্দের মুহূর্ত আসে, আমি মনে মনে ভাবি যদি তুমি থাকতে, তাহলে এই মুহূর্তটা আরও সুন্দর হতো। সত্যিকারের বন্ধুর জায়গা কেউ নিতে পারে না, আর শৈশবের বন্ধুদের তো নয়ই।

তুমি কবে আসবে শহরে? বা আমি যদি আসি শহওে আসি, তখন কি আমাকে নিয়ে তোমার নতুন শহর ঘুরাবে? নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাবে? আমাদের বন্ধুত্বের পাতাটি যেন কখনও পুরনো হয়ে না যায়।

এই চিঠির সাথে আমি তোমার জন্য কিছু স্মৃতি পাঠাচ্ছি মনে মনে। হয়তো অনুভব করতে পারবে। একমুঠো বিকেলের রোদ, কিছু বৃষ্টিভেজা দুপুর, আর নির্ভেজাল হাসির ঝিলিক। যদি সময় পাও, আমাকে একটা চিঠি দিও। তোমার নতুন গল্প শুনতে চাই, তোমার স্বপ্নের কথা জানতে চাই। আর যদি কখনও মন খারাপ করে, মনে রেখো তোমার পুরনো বন্ধু উজ্জ্বল এখানে অপেক্ষা করছে, ঠিক যেমন আগের মতো।

চিঠির শেষেও যেন কথা শেষ হয় না। তবু আজ এখানেই ইতি টানছি। তোমার জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো। ভালো থেকো, সুখে থেকো এবং সর্বদা হাসিখুশি থেকো। আমাদের বন্ধুত্ব যেন চিরকাল টিকে থাকে দূরত্ব যতই থাকুক না কেন।

ভালোবাসা আর আন্তরিকতাসহ

তোমার বন্ধু

উজ্জ্বল হোসাইন, বিষ্ণুপুর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়