বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

তথ্য-প্রযুক্তি কি আমাদের এগিয়ে দিচ্ছে, নাকি পিছিয়ে দিচ্ছে?
এন এ রবিউল হাসান লিটন

বর্তমানে পুরো বিশ্বকে বলা হয় ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র তথ্য-প্রযুক্তির কারণে। দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি, গবেষণা সর্বক্ষেত্রে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের জন্যে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর সেক্টরগুলোতে বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ হলেও সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযুক্তি বাংলাদেশকে যোগ করেছে আধুনিক বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির সাথে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তথ্য-প্রযুক্তিতে উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।

তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের কারণে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় পৌঁছাতে পেরেছে। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির গোড়াপত্তন নিয়ে আলোচনা করা যাক।

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সূচনা হয়েছিল ১৯৬০ সালে পারমাণবিক গবেষণার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কয়েক দশকে, বৃহৎ বাংলাদেশী সংস্থাসমূহে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আই মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার হতো। এই খাতটি ’৯০-এর দশকে যথেষ্ট মনোযোগ পেতে শুরু করে। বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার ছিলো একটি ১৬২০ সিরিজের আইবিএ মেইনফ্রেম কম্পিউটার, এ কম্পিউটারটি ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের (পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন) ঢাকা অফিসে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রধানত বিভিন্ন শিক্ষামূলক, গবেষণা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আরও উন্নত তথ্য প্রযুক্তি সরঞ্জাম স্থাপন করা শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে একটি কম্পিউটার সেন্টার স্থাপন করা হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অধীনে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে নামকরণ করা হয়। কেন্দ্রটি শুরু থেকেই বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে, ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। ১৯৮৫ সালে বেশ কয়েকটি সফল স্বতন্ত্র উদ্যোগে কম্পিউটারে প্রথম বাংলা লিপি উদ্ভাবিত হয়, এতে আরও ব্যাপকভাবে কম্পিউটার ব্যবহারের পথ প্রশস্ত হয়। ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং স্থানীয়ভাবে তৈরি সফটওয়্যার রফতানি শুরু হয়।

১৯৮৩ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট খাতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরির জন্য একটি জাতীয় কম্পিউটার কমিটি গঠন করে। এই খাতটির কার্যকরী ব্যবহার, সম্প্রসারণ ও প্রচারের জন্য কর্মসূচি পরিচালনার জন্যও কমিটিটি দায়বদ্ধ ছিলো। ১৯৮৮ সালে উল্লিখিত কমিটি জাতীয় কম্পিউটার বোর্ড দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালে মন্ত্রণালয় কম্পিউটার ও আইটি সম্পর্কিত কাজসমূহ পর্যেবক্ষণের জন্য বোর্ডটির সংস্কার সাধন করে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নামে পুনর্গঠন করে। এছাড়াও ২০১৮ সালের ১১মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তির ধরণ ও বৈশিষ্ট্য : তথ্য-প্রযুক্তিকে বর্তমানে আলাদিনের জাদুর প্রদীপের সাথে তুলনা করলে খুব একটা ভুল হবে না। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সুফল আজ সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।

১. পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছবি, তথ্য আদান-প্রদান এক সময় নিতান্তই কল্পনা হলেও আজ তা বাস্তব রূপ পেয়েছে শুধুমাত্র তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে।

২. বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সাথে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

৩. ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের অনেক নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও তথ্য প্রযুক্তি : একবিংশ শতাব্দীর এই বিশ্বায়নের যুুগে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র বিরাজমান। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আমাদের পৃথিবী যেনো দিক্ভ্রান্ত হয়ে পড়বে। তাই যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার ও বিকাশের উপর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকার হাতে নিয়েছিল ‘রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ’।

যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ তার ও টেলিযোগাযোগ বোর্ড HF প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক টেলিফোন সেবা প্রদান করতো। কিন্তু এই টেলিসেবার সক্ষমতা ছিলো সীমাবদ্ধ। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র চালু করেন। পরবর্তীতে, তালিবাবাদ, মহাখালী ও সিলেটে ৩টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ৯০ দশকের পর ভি-স্যাটের ব্যবহার উন্মুক্ত ছিলো তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরে নতুন দিক উন্মোচন।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্জনগুলোর একটি হচ্ছে পুরো দেশব্যাপী ইন্টারনেটের প্রসার। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল, অনেক ক্ষেত্র বর্তমানে ইন্টারনেট নির্ভর।

জাতীয় জীবনে তথ্য-প্রযুক্তি : উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে নিবিড় সেতুবন্ধনের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাদের জাতীয় জীবনেও দেখা দিয়েছে তথ্য-প্রযুক্তির অনিবার্য প্রয়োজন। আমাদের জাতীয় জীবনের অংশ হিসেবে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত বহুদিক যুক্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে সহজ ও সাবলীল। চিকিৎসাক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে প্রতিদিন নতুন করে জীবনদান করছে, রক্ষা করছে মরণব্যাধির হাত থেকে। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনার মধ্য দিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে শিক্ষার সব দরজা এখন আমাদের সামনে খোলা। তথ্য গ্রহণের অবাধ সুযোগ সারা পৃথিবীকে এক করে দিয়েছে। বৈশ্বিক পরিমন্ডলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আন্তঃমহাদেশীয় সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছে। জাতীয় জীবনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার তাই এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার : বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। ৯ বছর আগেও দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিলো ১২ লাখ। বর্তমানে, সে সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি ছাড়িয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির কারণে দূরত্ব কমেছে, অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অফিসের কাজ বর্তমানে সম্পূর্ণ তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর। তথ্য-প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমানে পাঠক্রমে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার বিনামূল্যে প্রত্যেক জেলায় কম্পিউটার শিক্ষার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। বর্তমানে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৭-৮ হাজার। রাজধানীতে বর্তমানে শতাধিক সফটওয়্যার কোম্পানি ও ৫ শতাধিক হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ফাইবার অপটিক ক্যাবলে বাংলাদেশ : ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উদ্ভব তথ্য আদান প্রদানের সম্ভাবনাকে আরো গতিশীল করে তুলেছে। ফলে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনায় এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। এই প্রযুক্তিতে আলোকরশ্মি পরিবাহী সূক্ষ্ম ফিলামেন্টের তৈরি স্বচ্ছ তারের ভেতর দিয়ে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিসরণের মাধ্যমে একই সাথে বয়ে নেয়া যায় অসংখ্য টেলিফোন কল, টেলিভিশন সংকেত ও বিপুল তথ্যসম্ভার। তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে আন্তঃমহাদেশীয় ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তথ্য মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য-প্রযুক্তি : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো আমরা তথ্য-প্রযুক্তি খাতে অনেকটা পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশের তথ্য প্রযুক্তি এখনো অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরশীল। দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বাইরের দেশের প্রযুক্তিবিদদের নিয়োগ দেয়া হয়। এর কারণ শিক্ষাখাতে মানের সেভাবে কোনো উন্নতি না হওয়া। আর কম্পিউটার শিক্ষা বা অন্যান্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে সে জ্ঞান প্রয়োগের ক্ষেত্র দেশে এখনো নেই বলবেই চলে। ফলে মেধাবীরা পাড়ি জমায় বিদেশে। তবে আশার কথা হচ্ছে-২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি করেছে। এ থেকে বোঝা যায় তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরের উন্নতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য প্রযুক্তি : বেকারত্ব সমস্যা আমাদের দেশের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। তবে বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংকে বেছে নিচ্ছে। এতে বেকারত্বের সমস্যা যেমন সমাধান হয় তেমনি সরকারি কোষাগারে রেমিট্যান্স জমা হয়। তাছাড়া, আমাদের দেশে এখনো নারীদের সেভাবে বাইরে এসে কাজ করতে দেখা যায় না। এটির প্রধান কারণ সামাজিক অবকাঠামো। অনেক নারী বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তাছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনেকে অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত হচ্ছে।

কৃষিক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি : কৃষকেরা আমাদের অন্নসংস্থানের উৎস। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষকেরা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলালেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে তারা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। এই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সরকার এমন একটি অ্যাপ চালু করেছে যেটি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা সরাসরি সরকারের কাছে ফসল বিক্রি করতে পারবে। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তথ্য-প্রযুক্তির কারণে। তাছাড়া ইন্টারনেটের কল্যাণে বর্তমানে কৃষকেরা বাইরের দেশে কৃষি কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত হতে পারছে। তাছাড়া শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সারাদেশে বিক্রয় করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তি : চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে যে কোনো সময় বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যায়। এতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা উন্নত চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। ডাক্তাররা রোগীদের সকল তথ্য সার্ভারে জমা রাখে। এতে সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনা কমে যায়। তাছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে আমরা ওয়েব পোর্টাল থেকে কোভিড টিকা করণের সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে সক্ষম হচ্ছি।

শিক্ষায় তথ্য-প্রযুক্তি : শিক্ষায় বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। ভর্তি, ক্লাসসহ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। দেশে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ আগেই শুরু হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলও অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে করোনাকালের অভিজ্ঞতা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও উদ্যোগী করেছে, যার মাধ্যমে ডিজিটাল শিক্ষার গুরুত্ব সামনে এসেছে। কোভিডের কারণে লকডাউন চলাকালীন পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ইন্টারনেট নির্ভর। করোনাকালে অনলাইনে পড়াশোনা করার যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা এখনো চলছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অভ্যস্ত হওয়ায় সেই অভিজ্ঞতা এখনও ব্যবহার করা যাচ্ছে। মূল ধারার শিক্ষার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আজকের দিনে আমরা ঘরে বসে বিশ্বের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বা স্কুলের শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছি। বাংলাদেশে আকাশ আমার পাঠশালা ‘মুক্তপাঠ’ একটি শিক্ষণীয় সরকারি প্লাটফর্ম বিদ্যমান আছে। যেখানে সবধরনের কোর্স করা যায় এবং সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এখানে বেকাররাও কোর্স সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারে এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। যেখানে শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা সবার আগে।

সফটওয়্যার শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি : সফটওয়্যার শিল্পে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে দেশের ১৬ শতাংশ সফটওয়্যার ফার্ম তাদের ডেভেলপ করা সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি করছে। এতে দেশের তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরের উন্নয়নের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের শিক্ষা ও বিনোদনের কম্পিউটার ভিত্তিক মাল্টিমিডিয়ার বাজারের প্রসার চোখে পড়ার মতো।

মুঠোফোনের ব্যবহার : পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তির উন্নতির পরও গ্রন্থবিমুখ হয়নি। কিন্তু আমরা হয়েছি। এমনিতে আমাদের পাঠাভ্যাস কম। তার ওপর প্রযুক্তি সেই ধারাকে আরো বেগবান করেছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত না হলে শুধু প্রযুক্তি আমাদের কোনো কাজে আসবে না। একসময় সবই বোঝা হয়ে চেপে বসবে আমাদের ঘাড়ে। নতুন প্রজন্ম বইমুখী নয়। তারা যতটা প্রযুক্তিনির্ভর ততটা গ্রন্থবিমুখ। মুঠোফোনে অবাধ ইন্টারনেট সংযোগের কারণে বর্তমান প্রজন্ম পর্নোগ্রাফি, গেমস, জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। যা আগামী দিনে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মেধাশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মুঠোফোন আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছে ঠিকই। কিন্তু উল্টো যে কাজটি হয়েছে, তা হলো মানুষ আর চিঠি লেখে না। চিঠি যে মহৎ সাহিত্য হতে পারে সেটা রবীন্দ্রনাথ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা আর চিঠি লিখি না। লেখার প্রয়োজন পড়ে না। চিঠি লেখার জায়গা দখল করেছে প্রযুক্তি। চিঠি লেখার আর প্রয়োজন হয় না। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আমরা মুহূর্তে কথা বলতে পারি এবং তার ভিডিও দেখতে পারি। সবই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ। কিন্তু অভিশাপ হলো আমরা গ্রন্থপাঠ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি। জাতির মননে তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ছে এবং পড়বে। আমাদের মেধার বিস্তৃৃতি ঘটবে না। আমরা আমাদের মেধার যথাযথ ব্যবহার করতে পারব না। একসময় আসবে আমরা সত্যিকার সাহিত্য সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাব।

ই-ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং : বর্তমানে, বাংলাদেশের সব ব্যাংক ই-ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। দেশের যেকোন ব্যাংকের শাখা থেকে আজকাল গ্রাহকেরা তাদের কাঙ্ক্ষিত শাখায় টাকা জমা ও টাকা উত্তোলন করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ব্যাংকিংয়ের সুফল ভোগ করতে পারছে। টাকার আদান-প্রদান কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। ২০২০ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

ই-পার্লামেন্ট ও আধুনিক বাংলাদেশ : ই-পার্লামেন্ট বা ইলেকট্রনিক সুবিধা সংবলিত সংসদ আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। ই-পার্লামেন্ট জনগণকে উন্নতমানের সেবা দিতে পারে। তথ্য প্রযুক্তিই হতে পারে এদেশের সংসদের জন্য অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের হাতিয়ার। আর সংসদ হতে পারে মত বিনিময় ও আলোচনার কেন্দ্রবৃন্দ। সম্প্রতি একটি বিদেশি সংস্থা পৃথিবীর ৯০টি দেশের উপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে যে, ৭৭টি দেশ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে অধিকতর সেবা দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য বিদ্যমান, যাকে বলা যায় ডিজিটাল ডিভাইস। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সংসদ বাংলাদেশের জন্য খুলে দিতে পারে অপার সম্ভাবনার দ্বার। গণতন্ত্রের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার হাতছানি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশও ই-পার্লামেন্টকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সংসদ বাংলাদেশে টেলিভিশন নামে বাংলাদেশে একটি সরকারি টেলিভিশন সেন্টারের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সম্প্রচার করা হয়।

গবেষণা ও তথ্য-প্রযুক্তি : বর্তমানে, গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য মুহূর্তের মধ্যেই সংগ্রহ করা যায়। এটি সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে। এক সময় গবেষণা সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য বিদেশ গমন করতে হলেও বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন দেশের গবেষকদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের গবেষকদের নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজেদের গবেষণায় সেটির ব্যবহার তুলনামূলক ফলপ্রসূ।

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তি : বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কোনো দেশকে এগিয়ে থাকতে হলে সর্বপ্রথম শর্ত হলো দেশের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা। আমাদের দেশে কোনো বৃহৎ স্থাপনা নির্মাণে বাইরের দেশে থেকে জনবল নিয়োগ করতে হয়। এটির একমাত্র কারণ, দেশে এখনো দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে অনেক সহায়তা করে। যেমন : অ্যাপের সাহায্যে ইংরেজি ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষা রপ্ত করা যায়। কম্পিউটার কোর্স, বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপিং কোর্স করা যায়।

সাংবাদিকতায় তথ্য প্রযুক্তি : বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমগুলো স্বাধীন মত প্রকাশের মাধ্যম হয়ে গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব আজ অনলাইন নির্ভর। এরই প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকগুলো বিবেচনা করে ধারণা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম পুরোটাই অনলাইন ভিত্তিক হয়ে যাবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অনলাইন সংবাদপত্র ও প্রিন্ট সংস্করণের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে।

সাংবাদিকের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এক যুগ আগেও যে কোনো খবরের জন্য টিভি অথবা খবরের কাগজের অপেক্ষায় থাকতে হতো পাঠকদের। এখন পছন্দনীয় অনলাইন পত্রিকায় সাবস্ক্রাইব করে রাখলে নতুন খবর এসে নোটিফিকেশনে নক করে। অনলাইন পত্রিকা চলমান ঘটনা প্রকাশের একটি প্রক্রিয়া। যেখানে আর্কাইভ থাকে, পাঠক ইচ্ছা করলেই তার পছন্দনীয় বিষয় নির্বাচন করে পড়তে পারে। প্রয়োজনে খবরের লিঙ্ক অন্যকে পাঠাতে পারেন। আবার প্রিন্ট করে সংগ্রহেও রাখা যায়। যখন যেখানে ইচ্ছা মোবাইল ফোনেই দেশের সকল খবরাখবর অনলাইনে পাঠক পড়তে পারছেন অনলাইন পত্রিকায়। এজন্য প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে অনলাইন মিডিয়ায় বেশি ঝুঁকছেন পাঠকরা। সংবাদের সবচেয়ে আধুনিক মাধ্যমে পরিণত হয়েছে অনলাইন সাংবাদিকতা। অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের সাধারণত চারটি মাধ্যম রয়েছে- লেখা, অডিও, ভিডিও ও ছবি। অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমে যা সম্ভব নয়। বর্তমানে অধিকাংশ দৈনিক পত্রিকারই রয়েছে অনলাইন ভার্সন।

তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে সরকার : দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের ভূমিকা সত্যি প্রশংসনীয়। সরকার দেশের তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরের অগ্রগতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

১. তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ গ্রাম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে প্রায় সারা দেশকে ডিজিটাল টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আওতায় এনেছে।

২. বাংলাদেশ সরকার তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে জাতীয় যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি নীতিমালা অনুমোদন করেছে।

৩. বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্য বিদেশে বাজারজাতকরণের জন্য বাংলাদেশ সরকার আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার স্থাপন করেছে।

৪. তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়। পার্কটি ২৬৫ একর জমির ওপর অবস্থিত। এতে প্রযুক্তির বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে।

৫. ৭০ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে অত্যাধুনিক সুযোাগ-সুবিধা সংবলিত একটি আইসিটি ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের নিমিত্তে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকার এ খাতকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বব্যাপী প্রয়োগ ও ব্যবহারে কারিগরি সহায়তা নিশ্চিতকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা সমূহ প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো, অবকাঠামো নিরাপত্তা বিধান, রক্ষণাবেক্ষণ, বাস্তবায়ন, সম্প্রসারণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও কম্পিউটার পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ই-সার্ভিস প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩১ জুলাই ২০১৩ তারিখে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়।

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা : বাংলাদেশের মত মধ্যম আয়ের দেশে তথ্য-প্রযুক্তি সেক্টরে উন্নয়ন বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই সেক্টরে পিছিয়ে থাকার সর্বপ্রথম কারণ হচ্ছে দক্ষ জনবলের অভাব। এই সেক্টরে উন্নতির জন্য দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে বাইরের দেশকে উৎসাহিত করতে হবে দেশে বিনিয়োগের জন্য। শেয়ার মার্কেটে আইটি কোম্পানির অংশগ্রহণ নিশ্চিত দেশের তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনা : অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোরসেরার বৈশ্বিক দক্ষতা সূচক বা ‘গ্লোবাল স্কিলস ইনডেক্স ২০১৯’ (জিএসআই) অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে বাংলাদেশের বর্তমান রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

দারিদ্র্য বিমোচন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য প্রযুক্তি : বর্তমান বিশ্বায়নে সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে আইসিটির আউটসোর্সিংয়ের জোয়ার। আইসিটির নতুন ধারাকে অব্যাহত রাখতে সৃষ্টি হয়েছে নতুনতর এক অর্থনীতি যার নাম Knowledge Economy । নতুন ধারার এই অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োজন হচ্ছে বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ। উন্নয়নশীল দেশ সমূহ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এর ফলে দেশের দরিদ্র ও বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ ইউরোপ বা আমেরিকার বিপরীত টাইম জোনে অবস্থান করছে। ফলে আউটসোর্সিংয়ের জন্যে বাংলাদেশ হতে পারে আদর্শ দেশ। ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরশেন সোসাইটি’ জেনেভা ঘোষণাপত্রে আইসিটিকে দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সুফল-কুফল : বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবন যাত্রায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের সুযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। বিজ্ঞানের এই নতুন ধারা আমাদের দূরত্বকে করে দিয়েছে সহজ অতিক্রম্য। মুহূর্তে তথ্য চলে যাচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। আর এর সবই সম্ভব হচ্ছে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তির এই সকল ভালো দিকের পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু মন্দ দিকও। অবাধ তথ্য প্রবাহের ফলে মানুষের নৈতিক স্খলন ঘটছে। অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগ থাকাতে চুরি হয়ে যাচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য। অনলাইনের অবাধ ব্যবহারের কারণে ভুল সংবাদ মুহূর্তে বিভ্রান্ত করতে পারে অসংখ্য মানুষকে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা না থাকাতে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরাও শিকার হচ্ছে অনলাইন ভায়োলেশনের। হ্যাকিং বা অনলাইন চুরির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু মানুষ। তাছাড়াও ব্ল্যাকমেইল করে অনলাইনে হুমকি দিয়েও এক ধরনের নব্য সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে। অনেক খারাপ দিক থাকা সত্ত্বেও আমাদের উচিত হবে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করা। আর কেবল তখনই আমাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা লাভ করা সম্ভব হবে।

পরিশেষে বলতে পারি, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। প্রযুক্তির সুবিধাগুলো সবার কাছে সমানভাবে না পৌঁছানোই বড় চ্যালেঞ্জ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বদ্ধপরিকর সরকার। এ লক্ষ্যে নতুন জোয়ার বইছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। আইসিটিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য বাংলাদেশকে আসীন করছে অনন্য উচ্চতায়। বিশেষ করে এই করোনাকালে প্রযুক্তির প্রভূত সুফল মিলছে। ব্যবসায়িক সম্পর্ক চালু রাখাসহ অনেকের বাসা-বাড়ি হয়ে উঠেছে ‘বিকল্প কার্যালয়’। নানামাত্রিক সুফল মিলছে দেশে-বিদেশে। বাংলাদেশের সামনে রয়েছে উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিস্তৃত রোডম্যাপ।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন সফটওয়্যার নির্মাতারা। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি তরুণদের নানা প্রচেষ্টা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। এতে দ্রুত বদলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাত। শুধু শহরেই নয়, জেলা উপজেলা সদর ছাড়িয়ে গ্রাম এমনকি প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার।

তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব দরবারে। কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।

(সূত্র : ইন্টারনেট, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বই ও বিভিন্ন ফিচার)

এন এ রবিউল হাসান লিটন : সহকারী অধ্যাপক, সাকোয়া ডিগ্রি কলেজ, বোদা, পঞ্চগড়। সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়