প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
পাশের ফ্ল্যাটের নীলু ভাবি বাচ্চার পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস। নিজেও রুটিন মাফিক চলেন; স্বামী, বাচ্চাকেও রুটিন মাফিক চালান। একটু এদিক-সেদিক হলেই তুলকালাম বাধিয়ে দেন। তার একমাত্র ছেলে পুনমের জন্য একজন হাউস টিউটর প্রয়োজন। তাই টিউটর চেয়ে বাড়ির দেয়ালে একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। বিজ্ঞাপনটা ছিল ঠিক এ রকমথ
হাউস টিউটর আবশ্যক :
আমার ৭ বছরের ছোট্ট সোনা পুনমের জন্য একজন দক্ষ, দায়িত্ববান, ধৈর্যশীল, ভালো রেজাল্টধারী হাউস টিউটর আবশ্যক। আরও যা যা থাকতে হবেথ
* গায়ের রঙ ফর্সা হতে হবে (পুনম কালো মানুষ দেখলে ভয় পায়)
* স্মার্ট হতে হবে (আমার ক্ষ্যাত মানুষ একদম পছন্দ না)
* অল্পভাষী হতে হবে (আমার উনি বেশি কথা বলা পছন্দ করেন না)
* প্রথম ৭ দিন ফ্রি পড়িয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। পরীক্ষায় পাস করলেই কেবল টিউশনি কনফার্ম করা হবে।
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
* প্রেম করা যাবে না। করলেও গোপনে। কোনো কথা বা আচরণে যেন তেমন ভাব প্রকাশ না পায়।
* সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে।
* আমার পুনমকে মাঝেমধ্যে গিফট দিতে হবে, যেন সে পড়াশোনায় উৎসাহিত হয়।
* যে কোনো প্রয়োজনে যখন-তখন ফোন করলে বিরক্তিবোধ করা যাবে না।
* মাঝেমধ্যে ফ্রি থাকলে বাচ্চাকে ওভারটাইম পড়াতে হবে। ‘না’ বলা যাবে না।
* বাচ্চা অসুস্থ হলে ছুটির দিনে পড়িয়ে মেকাপ করে দিতে হবে। তবে টিচার অসুস্থ হলে বেতন কেটে নেওয়া হবে।
* পরবর্তীকালে প্রয়োজন সাপেক্ষে শর্ত বৃদ্ধি হতে পারে। ধন্যবাদ।
আনিস সদ্য বেকার এক যুবক। ঢাকা শহরে মোটামুটি চলার জন্য তার ছোটখাটো একটা চাকরি ভীষণ দরকার। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার চোখ যায় বিজ্ঞাপনটির দিকে। এক নিঃশ্বাসে বিজ্ঞাপনটি পড়ে আনিসের ভ্রু কুঁচকে যায়। কারণ আনিসের ধারণা, এটি অতীতের সব বিজ্ঞাপনকে হার মানিয়েছে। তবু সাহস করে আনিস বাসার গেটে নক করল। দারোয়ান অনুমতি সাপেক্ষে আনিসকে ভেতরে ঢুকতে দিল। আনিস কাক্সিক্ষত ফ্ল্যাটের কলিংবেল টিপল। এরপর যা ঘটল তা কেবলই ইতিহাস।
‘একি তুমি! আমার বাসার ঠিকানা জানলে কীভাবে? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। ভেতরে এসো।’
আনিস ভ্যাবাচ্যাকাময় অবস্থায় পড়ে গেল। কী বলবে, কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। তাই চুপচাপ ঘরের ভেতর ঢুকে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল।
‘বললে না তো, ঠিকানা কোথায় পেয়েছ?’
‘সে একজনের কাছ থেকে ম্যানেজ করেছি। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করল, তাই চলে এলাম। তা তুমি কেমন আছ?’
‘বেশি ভালো না। সাতদিন আগে আমার বাচ্চাটার জন্য একজন টিউটর চেয়ে বিজ্ঞাপন দিলাম, এখনও কেউ যোগাযোগ করল না। কী যে করি! আচ্ছা, তুমি কী করছ?’
‘ইয়ে মানে... চাকরি খুঁজছি। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ভালো একটা চাকরি পেয়ে যাব।’
‘তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়েই গেল। যতদিন চাকরি না পাচ্ছ আমার বাচ্চাটাকে তুমিই পড়াবে।’
‘আসলে আমি তেমন টিউশনি করাইনি। তবু তুমি যখন বলছ, চেষ্টা করে দেখতে পারি।’
‘চেষ্টা আবার কী, তুমি পড়াবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাকরি খুঁজবে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুনমকে পড়াবে। দুপুরে আমার এখানেই খাবে। আগামীকাল থেকেই তাহলে পড়ানো শুরু করে দাও।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’
আনিস আনন্দে গদগদ হয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পড়ল। টিউশনিটা তার কাছে এক ঢিলে তিন পাখি মারার মতো। পুরনো প্রেমিকাকে প্রতিদিন দেখার সুযোগ, প্রতি দুপুরে তার হাতের রান্না আর মাস গেলে টাকা তো থাকছেই। তাই সে পুনমকে খুব যত্নসহকারে পড়াতে শুরু করল। সবই ঠিকঠাক চলছিল। বিপত্তি ঘটল এক মাস পরে। বেতনের টাকা ভেবে আনিস যে খামটি প্রাক্তন প্রেমিকার হাত থেকে খুশি মনে নিয়ে আসে, তাতে সুন্দর করে লেখাথ
‘আমি জানি, তুমি আজও আমাকে অনেক ভালোবাস। আমার পুনমকে নিজের ছেলের মতোই ভাবো। তাই টিউশনির টাকা দিয়ে তোমাকে, তোমার ভালোবাসাকে আমি ছোট করতে পারলাম না। তবে দুঃখের বিষয় হলো, তোমাকে আর কষ্ট করে পুনমকে পড়াতে হবে না। পুনমের বাবা আমাদের পুরনো সম্পর্কের কথা কোনো একভাবে জেনে গেছে। সে পুনমের জন্য নতুন একজন টিউটর ঠিক করেছে। তোমাকে আর দেখতে পাব না বলে খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কী করার বলো! নিয়তিকে মেনে নিতেই হবে। যেখানেই থাকো, ভালো থেকো।’
চিঠিটা পড়ে আনিসের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। প্রাক্তন প্রেমিকা, প্রেমিকার ছোট্ট বাচ্চা, দুপুরের খাবার সব হাতছাড়া হয়ে গেল! বিশেষ করে খাবারের ব্যবস্থাটা ভালোই ছিল।