শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২২, ০০:০০

শখের সাইকেল
অনলাইন ডেস্ক

পুকুরের পাড়ে কঞ্চির বেড়ার ঘরটা অনেকটাই নুয়ে পড়েছে। চারপাশে জঙ্গল। ছোটো উঠোনে প্রায়ই সাপ-পোকা-মাকড় দেখা যায়। ঘর থেকে কেউ বের হলেই সড়সড় করে কখনো ঝোপঝাড়ে কখনো পুকুরে চলে যায়। বর্ষার দিনে ভোগান্তির শেষ থাকে না। পুকুর পূর্ণ হলেই এক প্রকার বন্যা হয়ে যায় যেনো। আবার ছাউনির ছিদ্র বেয়ে বেয়েও বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায় সবকিছু।

এই ছোটো ঘরটায় চার চারটে মানুষ বাস করে। আলিফ, আলিফের মা-বাবা ও তার ছোটো বোন। বোনটার বয়স ৫-৬ মাস হবে। আলিফ ক্লাস ফোরে পড়ে। খুব হাসিখুশি থাকে ছেলেটা। বাইরে থেকে টেরই পাওয়া যায় না তার ভেতরের কষ্ট। কখনো খায় আবার কখনো না খেয়েই স্কুলে চলে যায়। বৃষ্টিতে যেদিন কাপড়-চোপড়, বই-খাতা ভিজে যায় সেদিন আর স্কুলে যাওয়া হয় না আলিফের। রোদ উঠলে বসে বসে সেসব শুকাতে হয়। লকডাউনে স্কুল বন্ধ হবার পর থেকে বাবাকে সাহায্য করে সে। তার বাবা মোড়ে একটা ছোট ছাউনি পেতে চা বিক্রি করে। কোনো দিন বেচাকেনা হয়, কোনো দিন হয় না।

তাতে কোনো দুঃখ নেই আলিফের। দুঃখটা তার একটা সাইকেল নেই বলে! নয়ন যখন সাঁ সাঁ করে সাইকেল চালিয়ে চলে যায় তখন তারও খুব ইচ্ছে হয় সেভাবে সাইকেল চালানোর। নয়নের চেয়েও জোরে চলবে তার সাইকেল! বাতাসে উড়বে চুল! কখনো চলে যাবে বিল্লী বাজার, কখনোওবা হাটবাকইল বা আরো দূরে! স্কুল খুব কাছে হলেও দূরের রাস্তা ঘুরে ঘুরে স্কুলে যাবে প্রতিদিন! বাড়ির সামনে এসে টুং টুং করে বেল বাজাবে। বেলের শব্দ শুনে বোনকে কোলে করে বেরিয়ে আসবে মা! সারাদিন মোড় আর বাড়ি, বাড়ি আর মোড় করে ও সামান্য ক্লান্ত হবে না!

বাবার কাছে বায়না ধরেছে, সাইকেলটা কিনে দিতেই হবে এবার। না হলে আর কোনো কাজ করবে না সে।

অনেক দিন থেকে তার বাবা দেবো দেবো করে দিচ্ছেই না। অভিমানে এজন্যে আলিফ মাঝে মাঝেই বাবাকে বলে,

-আব্বা, তুমি এতো কৃপণ কেনো?

ছেলের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসে বাবা।

যদিও তার বাবাকে এখন তেমন হাসতে দেখা যায় না আর! কেমন চুপচাপ থাকে সবসময়! আগে দোকানটা দু বেলা চলতো এখন একবেলা চলে। হঠাৎ হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণা আসছে বলে লোকজনও আর তেমন বসে না মোড়ে। কিন্তু বাবার ব্যবসার অবস্থা যাই হোক না কেনো, আলিফের সাইকেলটা লাগবেই লাগবে!

সেজন্যে সারাদিন না খেয়ে আছে ছেলেটা। মা কত ডাকলো, বাবা কত বুঝালো কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। সাইকেল পেলে সে ভাত পানি ছোঁবে নয়তো এভাবেই না খেয়ে মরবে।

কোনো কূলকিনারা খুঁজে না পেয়ে রাতে হাসানদের বাড়ি গেলো আলিফের বাবা। সব খুলে বললো হাসানের বাবা-মাকে। অনেক অনুনয় বিনয় করে ধার চাইলো হাসানের সাইকেলটা। তাতে রাজিও হলো তারা। হাসানও খুব ভালো ছেলে। দুই একদিনের ব্যাপারে তারও কোনো আপত্তি নেই।

রাতে সাইকেলটা যখন তার বাবা বাড়িতে নিয়ে এলো তখন খুব খুশি হলো আলিফ। কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করলো না আর। বারবার নেড়ে-চেড়ে দেখলো। রাতে একটু চালিয়ে দেখতে পারলে ভালো হতো কিন্তু সে সুযোগতো পাওয়া যাবে না এখন।

উত্তেজনায় সারা রাত ঘুমাতে পারলো না আলিফ। বারবার উঠে উঠে দেখতে লাগলো সাইকেলটা। কখনোও একটু চেইনটা ঘুরালো, কখনোও বা টুং করে বেলটা বাজালো।

ফজরের নামাজ হওয়ার সাথে সাথেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে। সারাদিন দাপিয়ে বেড়ালো পুরো এলাকা। সন্ধ্যায় আর গত দিনের উচ্ছ্বাস থাকলো না। উঠোনে সাইকেল রেখে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো ঘরে।

সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে সাইকেলটা দেখা গেল না আর! কী হলো সাইকেলটা! চুরি হয়ে গেল নাকি! কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না ভয়ে। একা একা এদিক-সেদিক অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেলো না কোথাও। বিষণœ মনে মায়ের আশপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। মা তার ঘুরাঘুরি দেখে জিজ্ঞেস করলো,

-কি রে আলিফ কী হয়েছে?

এবার আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলো না সে।

হাউ মাউ করে কেঁদে বললো, মা আমার সাইকেল চুরি হয়ে গেছে!

মা এবার বুঝিয়ে বললো ব্যাপারটা। সাইকেলটা আসলে চুরি হয়নি। যার সাইকেল সে নিয়ে গেছে। তাতে আবার বেঁকে বসলো আলিফ। তার সাথে এতো বড়ো প্রতারণা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এবারের অনশনটা আরও কঠিন হলো। একদিন, দুদিন, তিনদিন গেলো তবু কিছু খেলো না। নামাজে গিয়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে বললো, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের গরিব বানালে কেনো!’ ছেলের অবস্থা বেগতিক দেখে বাবা ধারকর্য করে একটা সাইকেল কিনেই দিলো অবশেষে। এবার তাকে আর কে পায়! সারাদিন সাইকেলেই থাকে এখন। সাইকেল ছাড়া এক পা চলে না। নয়নের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে কোনো দিন জিতে আবার কোনো দিন হেরে যায়। কয়েক বার আছাড় খেয়ে হলেও হ্যান্ডেল ছেড়ে সাইকেল চালানোর রীতিটা রপ্ত করেছে।

বেশ ভালোই কাটছিলো দিনগুলো। হঠাৎ একদিন মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বেশ আহত হলো আলিফ। দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা হলো তাকে। মাসখানেক পরে যখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরল তখন আলিফের সাইকেলটা ঠিকই আছে কিন্তু ডান পাটা আর নেই। এখন আর গরিব বলে মন খারাপ করে না আলিফ। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন এটাই তো হাজারো শোকরিয়া।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়