রবিবার, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:১৪

ঘন কুয়াশায় চাঁদপুরে সূর্যের দেখা নেই, শীতে কাবু জনজীবন

মোঃ মিজানুর রহমান, সোহাঈদ খান জিয়া
ঘন কুয়াশায় চাঁদপুরে সূর্যের দেখা নেই, শীতে কাবু জনজীবন

নদীবেষ্টিত উপকূলীয় জেলা চাঁদপুরে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে জেঁকে বসেছে শীত। গত দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর ভিড়। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে আছে মেঘনা, ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদীপাড়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল এবং স্বল্প আয়ের মৎস্য কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষ। শীতের দাপটের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাইরে বের হচ্ছে না। শীতের দাপটে শহরের অলিগলি পাড়া মহল্লা এবং গ্রামাঞ্চলের অনেককেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

দিনে-রাতে ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে বোরো বীজতলা ও আলুর আবাদ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে কনকনে ঠাণ্ডার কারণে দরিদ্র শীতার্ত মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে ।

চাঁদপুর আবাহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে চাঁদপুরে শীতের দাপট খুব একটা দেখা না গেলেও গত তিনদিনে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। তাপমাত্রা এখন ১৫ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। গত দুদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কোথাও দেখা গেলে তাও ছিলো খুব অল্প সময়ের জন্যে। 

বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি চলে আসায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ায় ফসলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শাহমাহমুদপুর আলুমুড়া গ্রামের কৃষক শরিফ হোসেন জানান, কুয়াশায় আলুর কিছুটা উপকার হলেও পশ্চিমা বাতাসে আলুর ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চললে আলু লেট ব্লাইটসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া শীত ও কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

জানা গেছে, চাঁদপুরে দুই থেকে আড়াই লাখ হতদরিদ্র মানুষ রয়েছে। এসব মানুষ প্রতিবছর শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে থাকেন। আরো জানা গেছে, সরকারি বরাদ্দ এসেছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। এসব শীতার্ত মানুষের পাশে এখন পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে এগিয়ে আসেনি। সচেতন মহলের দাবি, শীতার্ত মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এখনই এগিয়ে না এলে চরম দুর্ভোগে পড়বে শীতার্ত মানুষগুলো।  

এদিকে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, শীতজনিত কারণে আগের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু ও বৃদ্ধ। বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে এবং শিশুরা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।  

চাঁদপুর আড়াই শ' শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসিবুল ইসলাম আসিব জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে। বয়স্ক এবং শিশু রোগী বেশি আসছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। 

শীতের কারণে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাজের অভাব দেখা দিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা ঠিকমত নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে না পেরে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন। ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম কমে গেছে। তবে  বৃহস্পতিবার চাঁদপুর জেলা শহরের পুরাণবাজারের  পাইকারি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার এলাকা বেশ সরগরম দেখা গেছে।  রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল করছে নিয়ন্ত্রিত গতিতে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো দিনের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে দুর্ঘটনার আশংকা নিয়ে। 

বিআইডব্লিউটিসি চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক ফয়সাল চৌধুরী জানান, মেঘনা নদীতে  ঘন কুয়াশার আবরণ থাকায় ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রাতের বেলায় এমনকি দিনের সকালে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। 

চাঁদপুর লঞ্চঘাট সূত্রে জানা যায়, নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে রাতের এবং সকালের লঞ্চগুলো চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সাবধানতার সাথে নির্ধারিত লঞ্চগুলো ছেড়ে গেলেও গন্তব্যে বিলম্বে পৌঁছাতে হচ্ছে। 

এদিকে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। আগামী কয়েকদিন কুয়াশার বিস্তার এবং হিমেল হাওয়ার প্রভাব আরও বাড়বে। পুরো জানুয়ারি জুড়েই শীতের অনুভূতি বেশি থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান, নদী পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে। তবে পরবর্তী পাঁচদিনে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়