প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৩৩
এটি বাজারের রাস্তা নয়, যেন এক খন্ড খাল!
সামান্য বৃষ্টিতেই জনচলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নারায়ণপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো। বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা চরমে পৌঁছে। চাষ করা জমির মতো বাজারের এ রাস্তার বেহাল দশা দেখার যেন কেউ নেই। যানবাহন পথচারী শিক্ষার্থী সকলেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন বৃষ্টির এ সময়টাতে। নারায়ণপুর বাজারের প্রতিটা সড়ক যেন মানুষের ক্ষতবিক্ষত শরীর। রাস্তাগুলোর পিচ নষ্ট হয়ে গেছে, ইট, পাথরের কণা উঠে গেছে। ছোট বড় গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানির সাথে কাদা মাটি মিশ্রিত হয়ে নষ্ট করে দেয় পথচারী ক্রেতা সাধারণের জামা-কাপড়। এতে এই বাজারের প্রতি দিন দিন মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে বলে বিক্রেতাদের অভিযোগ।
|আরো খবর
নারায়ণপুর বাজারের রাস্তার বেহাল দশার কারণে ক্রেতা-বিক্রেতার মতো স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরাও চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। কারণ নারায়ণপুর বাজারের উত্তর পাশে দু’টি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারের অভ্যন্তরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন, বাজারের দক্ষিণ পাশে নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজ এবং সামান্য দুরত্বে বাজারের দুই পাশে দু’টি ফাযিল মাদ্রাসাসহ একাধিক কওমী মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী অভিভাবক শিক্ষকদের নারায়ণপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো ব্যবহার করে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের পরনের কাপড় বাজারের রাস্তায় চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার চাকার পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য বাজার সংশ্লিষ্টদের নিকট শিক্ষার্থী ও ক্রেতা সাধারণের একান্ত দাবী, বাজারের রাস্তাগুলো যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়।
একই অভিযোগ বাজারের ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতিটি দোকানে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্য হলো বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ক্রেতা সাধারণ বাজারের একটি সুন্দর পরিবেশ প্রত্যাশা করে। যদি তারা তা না পায় তাহলে এই বাজারের প্রতি আগ্রহ হারাবে। বিশেষ করে বাজারের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মূল এবং শাখা রাস্তাগুলোর সংস্কার করা একান্ত প্রয়োজন।
অপরদিকে বাজারটির পানি নিষ্কাষনের জন্য বাজার সংলগ্ন বোয়ালজুড়ি খাল ও ছোট খাল থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে বাজারের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এর থেকে উত্তরণের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণের দাবী বাজারের ব্যবসায়ীদের।
নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. শরিফুল ইসলাম জানান, কলেজে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাজারের ভেতরের ভেঙে যাওয়া পথেই আমাদের কলেজে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে চলাচলে কষ্ট সবচে বেশি।
বাজারের ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম রাস্তার সমস্যা নিয়ে বলেন, বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিক হলে নারায়ণপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তার বেহাল দশা দূর করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে কথা হয় নারায়ণপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদারের সাথে। তিনি বলেন, বাজার উন্নয়নের জন্য আমার নিকট কোন ধরনের বরাদ্দ নেই। বাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাহারাদারের বেতন দিতেই আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তিনি আরও বলেন, নারায়ণপুর বাজারের যে অংশ যে ইউপি চেয়ারম্যানের আওতায় তিনি ঐ অংশের উন্নয়নের কাজ করবেন।
এ ব্যাপারে ৩ নং খাদেরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন হাওলাদার বলেন নারায়ণপুর বাজারের আমার ইউনিয়নের যে অংশটুকু আছে এটা নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবহিত করে জনদূর্ভোগ লাগবের চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে কথা হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের সাথে। তিনি বলেন নারায়ণপুর বাজার এ এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। এ বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমস্যাটি দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, বাজার কমিটি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।