শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

ঈদ সালামী
অনলাইন ডেস্ক

ঈদে সালামী বা সেলামী বহুল প্রচলিত একটি বিষয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহা। ঈদ উৎসবে ছোটরা বড়দেরকে সালাম বা কদমবুচি করে বকশিস বা উপহারস্বরূপ যা পেয়ে থাকে তাই ঈদ সালামী। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসব, বৌদ্ধ পূর্ণিমা ও বড়দিনে সালামী পেয়ে থাকে।

শৈশব ও কৈশোরে আমরা পবিত্র ঈদের দিনে মা-বাবা, বড় ভাইবোন, মাতৃকুল ও পিতৃকূলের বয়োজ্যেষ্ঠ নিকটাত্মীয়দের সালাম বা কদমবুচি করে ঈদ সালামী বাবদ যা পেতাম তা আজকের দিনে খুবই সামান্য মনে হলেও তখনকার সময়ে ওটাই ছিল অনেক বড়। তার রেশ দীর্ঘদিন আমাদেরকে অনেক আনন্দ দিত। উদাহরণ স্বরূপ ষাটের দশকে আমরা চারআনা আটআনা কিংবা একটাকা দু’টাকা ঈদের সেলামী পেয়ে আনন্দে আটখানা হতাম। কখনো কখনো আমরা ঈদের সালামী বাবদ জামা, পায়জামা, প্যান্ট কিংবা জুতো পেতাম। ঈদের সালামী নিয়ে আমাদের আপন ভাইবোন কিংবা চাচাতো, মামাতো, খালাতো ভাই-বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো। আমরা কে কত বেশি ঈদ সালামী পেলাম। ঈদ সালামীর পয়সা জমিয়ে শৈশবে আমরা প্রয়োজনীয় সখের জিনিস যেমন ঘুড়ি-নাটাই, খেলনা, পুতুল, খাতা-কলম, রাবার, পেন্সিল, কালির দোয়াত ইত্যাদি কিনতাম।

আরও একটু বড় হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়নকালে আমরা ঈদের সালামী বাবদ বিশ-পঞ্চাশ একশ’ টাকা পেতাম। ঐ টাকায় আমরা প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় প্যান্ট-শার্ট জুতা-মোজা ইত্যাদি অনায়াসে কিনে নিতে পারতাম। অনেক সময় ঈদের সালামী বাবদ বড়দের কাছ থেকে পাঞ্জাবী-পাজামা পেতাম। ঈদ-সালামীর টাকায় বন্ধুদের নিয়ে হৈ-হুল্লোড় ও জম্পেশ আড্ডা দেয়ার পাশাপাশি দল বেঁধে সিনেমা দেখতাম। কে কত বেশি ঈদ সালামী পেল তার ফিরিস্তি দেয়া হতো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়ন করলে ঈদে সালামীর টাকা জমিয়ে একটি সাইকেল কিনেছিলাম। সাইকেলের মালিক হবার কারণে বন্ধুমহলে আমি রাতারাতি তারকা বনে গেলাম। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কলেজ বন্ধুরা আমার কাছ থেকে সাইকেলটি কিছু সময়ের জন্য ধার নিয়ে নিকট আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যেতো এবং ফিরে এসে মামাতো, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনদের মনকাড়া বর্ণনা শোনাতো। আজকের দিনে মোটরবাইক ধার বা ভাড়া পাওয়া যায়।

অবশেষে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর যেন সময় উল্টে গেল। এখন আর কেউ ঈদ সালামী দেয় না বরং আমাকেই স্বল্প আয়-রোজগারের টাকা থেকে ছোট ভাই-বোন ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে ঈদ সালামী দিতে হতো। কালক্রমে বিয়ে করে সংসারী হবার পর ঈদ সালামী দেয়ার পাশাপাশি ঈদ সালামী পেতে শুরু করি। শ^শুর পক্ষের নিকটাত্মীয়গণের কাছ থেকে নগদ ও দ্রব্য আকারে সালামী পেতে শুরু করি। শার্ট, প্যান্ট, কাশ্মিরী শাল, সাফারী স্যুটের কাপড়, টাই ইত্যাদি পেতাম ফি বছর। সময়ের ব্যবধানে সে সব আজ অতীত।

অবসরপ্রাপ্ত আমার মতো মানুষ এখন আর কারো কাছ থেকে ঈদ সালামী পায় না। সন্তানদের কাছ থেকে তসবিহ, আতর, টুপি ঈদ উপহার হিসেবে পেয়ে থাকি।

যৌবনকালে দেখা একটি ঢাকাইয়া সিনেমার গানের কথা মনে পড়লো। ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় নায়ক আজিম একটি ছায়াছবির মাস্তান চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নামটি আজ স্মরণ করতে পাচ্ছি না। তবে গানের কলি যতটুকু মনে পড়ে তা অনেকটা এ রকম।

“আমি এক মাস্তানা, আমার নাই ঠিকানা।

মুল্লুক জুড়ে তাল্লুক আমার যখন যেথায় যাই,

সালাম ছাড়া সেলামীও সঙ্গে কিছু পাই।”

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়