প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২১, ০০:০০
কোরবানি একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিময় আমল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন আর নহর (কোরবানি) করুন’। (সূরা আল কাউসার, আয়াত-২)।
কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ মালি ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা স্বত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না, তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেন, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য আছে কিন্তু কোরবানি করে না, সে যেনো আমাদের ঈদগাহে না আসে’। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ৩৫১৯; আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ২/১৫৫)।
ইমাম আজম আবু হানিফা (রহঃ) ও ইমাম আওযায়ীসহ জমহুরদের মতে, কোরবানি প্রাপ্তবয়স্ক আকলসম্পন্ন সামর্থ্যবান স্বাধীন মুসলিম নর-নারীর উপর ওয়াজিব।
ইবাদতের মূলকথা হলো আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য এবং তাঁর রেজামন্দি লাভ করা। তাই যে কোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্যে দুটি বিষয় জরুরি। এক. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং দুই. শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কোরবানির কিছু জরুরি মাসায়েল প্রশ্নোত্তর আকারে উল্লেখ করলাম।
প্রশ্ন : কার উপর কোরবানি ওয়াজিব?
সমাধান : সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ ফজর থেকে ১২ যিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপার অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাব করতে হবে।
আর নিসাব হলো স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আল-মুহিতুল বুরহানি, ৮/৪৫৫; তাতারখানীয়াহ, ১৭/৪০৫)
প্রশ্ন : নেসাবের মেয়াদ কতদিন থাকতে হবে?
সমাধান : কোরবানির নেসাব পূর্ণ বছর থাকা জরুরি নয় বরং কোরবানির তিনদিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে। (বাদায়ে সানায়ে-৪/১৯৬; রদ্দুল মুহতার-৬/৩১২)।
প্রশ্ন : কতদিন কোরবানি করা যায়?
সমাধান : মোট তিনদিন কোরবানি করা যায়। যিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজের ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম। (আল-মুয়াত্তা : ১৮৮)।
প্রশ্ন : মুসাফিরের কোরবানির হুকুম কী?
সমাধান : যে ব্যক্তি কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। (কাযিখান ৩/৩৪৪, আদ-দুররুল মুখতার, ৬/৩১৫)।
প্রশ্ন : নাবালেগের কোরবানির হুকুম কি?
সমাধান : নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রুপ যার আকল ঠিক নেই, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কোরবানি করলে তা মুস্তাহাব হিসেবে সহীহ হবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬)
প্রশ্ন : গরিব-মিসকিনের কোরবানির হুকুম কী?
সমাধান : গরিব-মিসকিন ব্যক্তির উপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কোরবানির নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (বাদায়ে সানায়ে ৪/১৯২)
প্রশ্ন : কোরবানি করতে না পারার হুকুম কী?
সমাধান : কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিলো, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেয়া না হয় তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দিবে। (কাযিখান-৩/৩৪৫)।
প্রশ্ন : প্রথম দিন কোন্ সময় থেকে কোরবানি করতে হবে?
সমাধান : যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব তাদের জন্যে ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অবশ্য বৃষ্টি-বাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয় তাহলে ঈদের নামাজের সময় চলে যাবার পর প্রথমদিনেও কোরবানি করা যায়। (সহীহ বুখারী-২/৮৩২, কাযিখান-৩/৩৪৪, আদ্ দুররুল মুহতার-৬/৩১৮)।
প্রশ্ন : রাতে কোরবানি করা জায়েজ আছে কি না?
সমাধান : ১০, ১১ও ১২ তারিখ দিবাগত রাতেও কোরবানি করা জায়েজ। তবে দিনে কোরবানি করাই ভালো। কেননা রাতে কোরবানি করলে আলোস্বল্পতায় জবেহ ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং : ১৪৯২৭; মজমুয়া আজ্জাওয়ায়েদ-৪/২২, কাযিখান-৩/৩৪৫)
প্রশ্ন : কোরবানির জন্যে কেনা পশু সময়ের পর জবেহ করলে কি করতে হবে?
সমাধান : কোরবানির দিনগুলোতে যদি জবেহ করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবেহ করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে কোরবানি দাতা খেতে পারবে না। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য কমলো তা-ও সদকা করতে হবে। (আদ দুরুল মুহতার-৬/৩২০-৩২১)।
প্রশ্ন : কোন্ কোন্ পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে?
সমাধান : উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা তথা মেষ-জাতীয় চতুস্পদ হালাল গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বনগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (কাযিখান-৩/৩৪৮, বাদায়ে-৪/২০৫)।
প্রশ্ন : নর ও মাদী পশুর কোরবানির হুকুম কি?
সমাধান : যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ সেগুলোর নর-মাদী দুটোই কোরবানি করা যায়। (কাযিখান-৩/৩৪৮, বাদায়ে-৪/২০৫)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশুর বয়সসীমা কত হতে হবে?
সমাধান : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছর হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা (মেষ) কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে এক বছরের মতো মনে হয়, তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। (কাযিখান-৩/৩৪৮, বাদায়ে-৪/২০৫-২০৬)।
প্রশ্ন : এক প্রাণিতে কতজন শরিক হতে পারে?
সমাধান : একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কোরবানি দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কোরবানি করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারো কোরবানি সহীহ হবে না। (সহীহ মুসলিম-১৩১৮, মুয়াত্তা-১/৩১৯, কাযিখান-৩/৩৪৯)।
প্রশ্ন : সাত শরিকের কোরবানির মাসআলা কি?
সমাধান : সাতজনে মিলে কোরবানি করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানিই সহীহ হবে না। (বাদায়ে-৪/২০৭)। উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (সহীহ মুসলিম-১৩১৮, বাদায়ে-৪/২০৭)।
প্রশ্ন : কোনো শরিকের বদ নিয়ত থাকলে কী হবে?
সমাধান : যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরিক নির্বাচন করতে হবে। (কাযিখান-৩/৩৪৯)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ রাখা যাবে কি না?
সমাধান : কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই সহীহ হবে। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩৬২)।
* শরিকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কোরবানি সহীহ হবে না।
* যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট এককভাবে কোরবানি দেয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরিব হয়, যার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরিক করতে পারবে না। এমন গরিব ব্যক্তি যদি কাউকে শরিক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে। (কাযিখান-৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়ে-৪/২১০)।
প্রশ্ন : কোরবানির উত্তম পশু কী রূপ হতে হবে?
সমাধান : কোরবানির পশু মোটা-তাজা হওয়া উত্তম। (মুসনাদ আহমদ-৬/১৩৬, আলমগিরি ৫/৩০০, বাদায়ে-৪/২২৩)।
প্রশ্ন : হাঁটতে পারে না এমন পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ কি না?
সমাধান : যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। (তিরমিযী-১/২৭৫, আবু দাউদ-৩৮৭, আলমগিরি-৫/২৯৭)।
প্রশ্ন : রোগা ও দুর্বল পশু কোরবানি করা যাবে কি না?
সমাধান : এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (তিরমিজি-১/২৭৫, আলমগিরি-৫/২৯৭)।
প্রশ্ন : দাঁতবিহীন পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ কি না?
সমাধান : যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এতো বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ নয়। (আলমগিরি-৫/২৯৮)।
প্রশ্ন : শিংবিহীন পশু দ্বারা কোরবানির হুকুম কী?
সমাধান : যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কোরবানি করা জায়েজ। (তিরমিজি-১/২৭৬, আবু দাউদ-৩৮৮)।
প্রশ্ন : অন্ধ পশু দ্বারা কোরবানির হুকুম কী?
সমাধান : যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। (জামে তিরমিজি-১/২৭৫, কাযিখান-৩/৩৫২)।
প্রশ্ন : কান বা লেজ কাটা পশু দ্বারা কোরবানির হুকুম কি?
সমাধান : যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে, তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (তিরমিজি, ১/২৭৫, মুসনাদ আহমদ-১/৬১০, কাযিখান-৩/৩৫২, আলমগিরি-৫/২৯৭-২৯৮)।
প্রশ্ন : নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে কী করবে?
সমাধান : কোরবানির পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কোরবানিদাতা গরিব হলে (যার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কোরবানি করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কোরবানি করলেই হবে। তবে দুটি কোরবানি করাই উত্তম। (বায়হাকি-৫/২৪৪, বাদায়ে, ৪/১৯৯, কাযিখান-৩/৩৪৭)।
প্রশ্ন : গর্ভবতী (গাভিন)পশু দ্বারা কোরবানির হুকুম
সমাধান : গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ। জবেহের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবেহ করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরূহ। (কাযিখান-৩/৩৫০)।
প্রশ্ন : পশু কেনার পর ত্রুটি দেখা দিলে কী করবে?
সমাধান : কোরবানির নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কোরবানি জায়েজ হয় না তাহলে ওই পশুর কোরবানি সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কোরবানি করতে পারবে। (বাদায়ে-৪/২১৬ রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৫।
প্রশ্ন : পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা মানা যাবে কি না?
সমাধান : যদি পশু বিক্রেতা কোরবানির পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কোরবানি করা যাবে।
প্রশ্ন : বন্ধ্যা পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে?
সমাধান : বন্ধ্যা পশুর কোরবানি জায়েজ। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৫)।
প্রশ্ন : নিজের কোরবানির পশু নিজে জবেহ করা কী?
সমাধান :. কোরবানির পশু নিজে জবেহ করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবেহ করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কোরবানিদাতা পুরুষ হলে জবেহের স্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। (মুসনাদ আহমদ-২২৬৫৭, বাদায়ে-৪/২২২-২২৩, আলমগিরি-৫/৩০০)।
প্রশ্ন : জবেহের কাজে একাধিক ব্যক্তি শরিক হলে কী করবে?
সমাধান : অনেক সময় জবেহকারীর জবেহ সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবেহ সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ জবেহের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কোরবানি সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। (রদ্দূল মুহতার-৬/৩৩৪)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশু থেকে জবেহের আগে উপকৃত হওয়া যাবে কি না?
সমাধান : কোরবানির পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েজ নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কোরবানির পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে। (মুসনাদ আহমদ-২/১৪৬, নাইলুল আওতার-৩/১৭২, কাযিখান-৩/৩৫৪)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশুর দুধ পান করা যাবে কি?
সমাধান : কোরবানির পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠা-া পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। (মুসনাদ আহমদ-২/১৪৬, রদ্দুল মুহতার-৬/৩২৯)।
প্রশ্ন : কোনো শরিক মারা গেলে কী করতে হবে?
সমাধান : কয়েকজন মিলে কোরবানি করার ক্ষেত্রে জবেহের আগে কোনো শরিকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েজ হবে। নতুবা ওই শরিকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরিক করা যাবে। (বাদায়ে-৪/২০৯, কাযিখান-৩/৩৫১)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশুর বাচ্চা হলে কী করবে?
সমাধান : কোরবানির পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবেহ না করে জীবিত সদকা করে দেয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কোরবানির পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবেহ করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। (আলমগির-৩/৩৪৯)।
প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করার হুকুম কী?
সমাধান : মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরিব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। (মুসনাদে আহমদ-১/১০৭, হাদীস নং ৮৪৭)।
প্রশ্ন : কোরবানির গোশত ফ্রিজিং করে রাখা যাবে কি না?
সমাধান : কোরবানির গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েজ। (বাদায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম-২/১৫৯, মুয়াত্তা-১/৩১৮)।
প্রশ্ন : কোরবানির গোশত বণ্টনের নিয়ম কী?
সমাধান : শরিকে কোরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নয়। (কাযিখান-৩/৩৫১)।
* কোরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। (আলমগিরি-৫/৩০০)।
প্রশ্ন : গোশত, চর্বি বিক্রি করা যাবে কি না?
সমাধান : বর্তমানে কিছু লোক এসব বিক্রি করে থাকে। কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। তবে কোনো গরিব লোক তা দান হিসেবে পাওয়ার পর তা বিক্রি করলে জায়েজ হবে। (আলমগিরি-৫/৩০১)।
প্রশ্ন : জবেহকারীকে চামড়া, গোশত দেয়া যাবে কি না?
সমাধান : জবেহকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েজ হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেয়ার পর পূর্ব চুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসেবে গোশত বা তরকারি দেয়া যাবে।
প্রশ্ন :জবেহের অস্ত্র কীরূপ হতে হবে?
সমাধান : ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম। ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা মাকরূহ। (বাদায়ে-৪/২২৩)।
প্রশ্ন : পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কি না?
সমাধান : জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। (বাদায়ে-৪/২২৩)।
প্রশ্ন : অন্য পশুর সামনে জবেহ করা ঠিক কি না?
সমাধান : এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবেহ করবে না। জবেহের সময় প্রাণিকে অধিক কষ্ট দেয়া ঠিক না।
প্রশ্ন : কোরবানির গোশত বিধর্মীকে দেয়া যাবে কি না?
সমাধান : কোরবানির গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেয়া জায়েজ। (হিন্দিয়া-৫/৩০০)।
প্রশ্ন : অন্য কারো ওয়াজিব কোরবানি আদায় করতে চাইলে কী করবে?
সমাধান : অন্যের ওয়াজিব কোরবানি দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কোরবানি করে তাহলে তাদের কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা উত্তম।
প্রশ্ন : কোরবানির পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে কী করতে হবে?
সমাধান : কোরবানির পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কোরবানিদাতার উপর পূর্ব থেকে কোরবানি ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কোরবানি করতে হবে। গরিব হলে (যার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়) তার জন্যে আরেকটি পশু কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। (বাদায়ে-৪/২১৬)।
প্রশ্ন : পাগল পশুর কোরবানির হুকুম কী?
সমাধান : পাগল পশু কোরবানি করা জায়েজ। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। (বাদায়ে-৪/২১৬)।
প্রশ্ন : নিজের কোরবানির গোশত খাওয়া যায় কি না?
সমাধান :. কোরবানি দাতার জন্যে নিজ কোরবানির গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। (সূরা হজ্জ : ২৮, বাদায়ে-৪/২২৪)।
প্রশ্ন : ঋণ করে কোরবানি করতে পারবে কি না?
সমাধান : কোরবানি ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কোরবানি করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কোরবানি করা যাবে না।
প্রশ্ন : হাজীদের জন্যে ঈদুল আজহার কোরবানির হুকুম কী?
সমাধান : যে সকল হাজী কোরবানির দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আজহার কোরবানি ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কোরবানির কোনো দিন মুকিম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আজহার কোরবানি করা জরুরি হবে। (হিন্দিয়া-৫/২৯৩, এমদাদুল ফাতাওয়া-২/১৬৬)।
প্রশ্ন : নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে কি না?
সমাধান : সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কোরবানি করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)কে তার পক্ষ থেকে কোরবানি করার ওসিয়ত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কোরবানি দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ-২/২৯, তিরমিজি-১/২৭৫, মেশকাত-৩০৯)।
প্রশ্ন : কোন্দিন কোরবানি করা উত্তম?
সমাধান : দিনের মধ্যে প্রথমদিন কোরবানি করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। (রদ্দুল মুহতার-৬/৩১৬)।
প্রশ্ন : খাসিকৃত ছাগল ও বলদ গরু দ্বারা কোরবানি করা যাবে কি না?
সমাধান : খাসিকৃত ছাগল ও বলদ দ্বারা কোরবানি করা উত্তম। (ফাতহুল কাদীর-৮/৪৯৮)।
প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা যাবে কি না?
সমাধান : যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈছালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা জায়েজ তদ্রুপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ঈছালে ছাওয়াবের জন্যে নফল কোরবানি করা জায়েজ। এ কোরবানির গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।
প্রশ্ন : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কোরবানি অন্যত্র করার বিধান কী?
সমাধান : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্যে নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কোরবানি করা জায়েজ।
প্রশ্ন : কোরবানিদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবেহ করবে?
সমাধান : কোরবানিদাতা এক স্থানে আর কোরবানির পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কোরবানিদাতার ঈদের নামাজ পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবেহ করা যাবে। (আদ্দুরুল মুখতার-৬/৩১৮)।
প্রশ্ন : কোরবানির চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা যাবে কি না?
সমাধান : কোরবানির চামড়া কোরবানিদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। (আদ্দুরুল মুখতার-৫/৩০১)।
প্রশ্ন : কোরবানির চামড়া বিক্রির নিয়ত করার কী হুকুম?
সমাধান : কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েজ ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেয়া জরুরি। (হিন্দিয়া-৫/৩০১, কাযিখান-৩/৩৫৪)।
প্রশ্ন : কোরবানির শেষ সময়ে মুকিম হলে কোরবানি করতে হবে কি না?
সমাধান : কোরবানির সময়ের প্রথমদিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কোরবানির সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকিম হয়ে গেলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথমদিনে মুকিম ছিলো অতঃপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কোরবানি ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কোরবানি না দিলে গুনাহগার হবে না। (বাদায়ে-৪/১৯৬, তারার খানিয়া-৩/৩৪৬)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরিক হওয়া।
সমাধান : এক কোরবানির পশুতে আকিকা, হজের কোরবানির নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। (বাদায়ে-৪/২০৬, আল মাবসুত-৪/১৪৪)।
প্রশ্ন : কোরবানির গোশত দিয়ে খানা শুরু করা কী?
সমাধান : ঈদুল আজহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কোরবানির গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজের জন্যে। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। (জামে তিরমিজি-১/১২০, আল বাহরুর রায়েক ২/১৬৩)।
প্রশ্ন : কোরবানির পশুর হাড় বিক্রি করা যাবে কি না?
সমাধান : কোরবানির মৌসুমে অনেক মহাজন কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্যে নিজ কোরবানির কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েজ হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে-শুনে মহাজনদের জন্যে এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। (বাদায়ে-৪/২২৫, কাযিখান-৩/৩৫৪)।
প্রশ্ন : কাজের লোককে কোরবানির গোশত খাওয়ানো যাবে?
সমাধান : কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েজ নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। (বাদায়ে-৪/২২৪, আল বাহরুর রায়েক-৮/৩২৬)। প্রশ্ন : জবেহকারীকে পারিশ্রমিক দেয়ার বিধান কী?
সমাধান : কোরবানি পশু জবেহ করে পারিশ্রমিক দেয়া-নেয়া জায়েজ। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া যাবে না। (কেফায়াতুল মুফতি-৮/২৬৫)।
প্রশ্ন : কোরবানির সময় মোরগ কোরবানি করার বিধান কী?
সমাধান :. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কোরবানি করার প্রচলন আছে। এটি না-জায়েজ। কোরবানির দিনে মোরগ জবেহ করা নিষেধ নয়, তবে কোরবানির নিয়তে করা যাবে না। (আল-বাজ্জাযিয়া-৬/২৯০, হিন্দিয়া-৫/২০০)।
লেখক : খতিব : আলীগঞ্জ হযরত মাদ্দাহ্ খাঁ (রহঃ) জামে মসজিদ হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।