প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২১, ০০:০০
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে অনলাইন জুয়া যুবক ও তরুণদের মাঝে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জুয়ার পরিমাণ লীগ পর্যায়ে খেলাগুলোতে কম হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরকে সামনে রেখে তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। র্যাবের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী কোপা আমেরিকা ও ইউরো কাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশে এই অনলাইন জুয়ার পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। তাই র্যাব কর্তৃক এই অনলাইন জুয়া চক্র সমূহকে গ্রেফতার করার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়। এরই সূত্র ধরে র্যাব-১১-এর সিপিসি-২-এর একটি আভিযানিক দল ১১ জুলাই রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার বাবুটিপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে এই চক্রের অন্যতম সদস্য বাবুটিপাড়া গ্রামের আশকর সর্দারের ছেলে শরীফ শাহজালাল মিরাজ (২৫)-এর বাড়িতে তল্লাশি করে অনলাইন জুয়া পরিচালনায় ব্যবহৃত ২টি মোবাইল, নগদ তেতাল্লিশ হাজার আটশ’ টাকা ও ৩টি চেকবই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। শরীফ শাহজালাল মিরাজ (২৫)-কে বাসায় না পেলেও তার স্ত্রীর দেয়া তথ্য মতে এই অনলাইন জুয়া চক্রের অন্যতম সদস্য একই গ্রামের মোঃ শহিদুল্লাহর ছেলে মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮)-এর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। উক্ত অভিযানে র্যাব-১১-এর সিপিসি-২-এর আভিযানিক দল মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮)কে আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। যার মাধ্যমে সে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছিলো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮)-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী এই চক্রের অপর একজন সদস্য একই গ্রামের কামাল হোসেন যে বর্তমানে র্যাব-৪ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে তার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে অনলাইন জুয়া পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত আরো ৩টি মোবাইল ফোন, নগদ পঁচানব্বই হাজার টাকা ও ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। উক্ত অভিযানে অনলাইনে জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত সর্বমোট এক লাখ আটত্রিশ হাজার আটশ’ টাকা, ১১টি মোবাইল ফোন, ১৪টি সীমকার্ড, ১টি ল্যাপটপ ও ৩টি চেকবই উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ১১টি মোবাইলের মধ্যে ৮টি মোবাইল অন করা সম্ভব হয়েছে। উক্ত মোবাইল সমূহের বিকাশ, নগদ, ডাচ বাংলা ও ইসলামী ব্যাংক একাউন্টে ১১ জুলাই পর্যন্ত সর্বমোট ৫৬,৩৭,৯১৮/- (ছাপ্পান্ন লক্ষ সাতত্রিশ হাজার নয়শত আঠারো) টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়।
এই চক্রটি মূলত ‘বাজি লাইভ’ নামে মালয়েশিয়ান ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে। এই ওয়েবসাইটটি মূলত মালয়েশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এর একজন করে এজেন্ট নিয়োগ করা আছে। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮)-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার মূল এজেন্ট মুরাদনগর থানার বাবুটিপাড়া গ্রামের সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫)। সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) মূলত শরীফ শাহজালাল মিরাজ (২৫), মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) ও কামাল হোসেনের মাধ্যমে ১৯টি গ্রুপ তৈরি করে এই অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী বিকাশ, রকেট, নগদ, ইউক্যাশ এ ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং-এর ডিলাররা প্রতিটি গ্রুপের এজেন্ট হতে পারে।
এই জুয়া পরিচালনার মাধ্যমে অর্জিত অর্থসমূহ সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত বৈধ পন্থা অনুসরণ না করে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়াতে পাচার করে। যার ফলস্বরূপ দেশের বাইরে বাংলাদেশের টাকা প্রচুর পরিমাণে পাচার হচ্ছে। পাচারকৃত টাকার পরিমাণের উপর এই চক্রের মূল হোতা সারোয়ার আহমেদ জুয়েল (৩৫) নির্ধারিত হারে কমিশন পায় এবং শরীফ শাহজালাল মিরাজ (২৫), মোঃ মিল্লাত হোসেন (২৮) ও কামাল হোসেনকেও কমিশন দেয়। এই চক্রটি দরিদ্র তরুণ-যুবকদেরকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক লাভের লোভ দেখিয়ে অনলাইন জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত করছে। এতে করে তারা সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। ক্যাসিনো ও জুয়ার মতো সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শর্ত সাপেক্ষে ঈদগাহে নামাজ পড়া যাবে করোনা পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরে খোলা মাঠ বা ঈদগাহে জামাত আদায় করার অনুমতি দেয়নি সরকার। তবে এবার শর্ত সাপেক্ষে ঈদুল আজহার নামাজ ঈদগাহে আদায় করার অনুমতি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদগাহে বা খোলা মাঠে ঈদের জামাত আদায়ের আগে মন্ত্রিপরিষদ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। এলাকার সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করে ঈদগাহে জামাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ঈদের জামাত আদায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১২ নির্দেশনা :
১) করোনা সংক্রমণের স্থানীয় পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করে ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ নাকি ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঈদের নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
২) মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
৩) প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪) করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
৫) মসজিদ/ঈদগাহ মাঠের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/ হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।
৬) ঈদের নামাজের জামায়াতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৭) ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে ।
৮) শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৯) সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
১০) ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।
১১) করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
১২) খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখিত নির্দেশনা না মানলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট।