প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ০০:০০
জনপ্রিয় ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া গত ১জুলাই ২০২১ থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনে সাম্প্রতিক বিষয়ে স্বরচিত ছড়া স্বকণ্ঠে পাঠ করছেন। গতকাল পর্যন্ত তাঁর পঠিত ছড়াগুলো নিম্নে পত্রস্থ করা হলো। আগ্রহীরা চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইনে প্রতিদিনই অব্যাহতভাবে শুনতে পারবেন তাঁর ছড়া। সেজন্যে ভিজিট করুন chandpur- kantho.com.
লকডাউন
(প্রথম দিনের ছড়া কলাম)
করোনাতে দ্বিতীয় ঢেউ
আগের চাইতে ভয়ঙ্কর
এই জীবাণু তাড়াতে তাই
থাকুন সবাই স্বয়ং ঘর।
লকডাউনও মানতে হবে
মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
ভিড়াভিড়ি বলছি এড়ান
রাস্তাঘাটে আপা-দিদি।
বাইরে থেকে ঢুকলে ঘরে
সাবান দিয়ে হাত ধোবেন
না ধুয়ে হাত মুখ-চোখ ও নাক
কেউ কখনো না ছোঁবেন।
খুব জরুরি বের হলে কেউ
মাস্কে মুখ ও নাক ঢাকেন
আইন মেনে সব চলুন পথে
নিজকে নিজে সেফ রাখেন।
দেশকে ভালো রাখতে হলে
আইনকে সবার মানতে হয়
তা না হলে করোনাতে
প্রাণ হারিয়ে কাঁদতে হয়।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জন্মদিন
(দ্বিতীয় দিনের ছড়া কলাম)
ঢাকার বুকে রমনাজুড়ে একশ বছর আগে
জন্মেছিল ভার্সিটি এক আজকের শাহবাগে
পয়লা জুলাই ভার্সিটিতে বিদ্যা দানের শুরু
প্রথম দিকে হাতে গোণা ছিলেন ছাত্র-গুরু।
এই ঢাবি'তে শিক্ষা দিতেন শাস্ত্রী হরপ্রসাদ
শিক্ষাগুরু আঁধার চিরে আনতো জ্ঞানের প্রভাত
রবীন্দ্রনাথ নিজে এসে ‘সভ্যতার সংকট’-এ
ভাষণ রেখে গলায় মালা পরেছিলেন বটে।
শুয়ে আছেন দুখু মিয়া ভার্সিটি প্রাঙ্গণে
বঙ্গবন্ধু ছাত্র ছিলেন দেশপ্রেমি প্রাণমনে
এ ভার্সিটি বিখ্যাত আজ ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’
সুনাম লিখে শেষ হবে না ভরলে হাজার বোর্ড।
বাংলা ভাষার আন্দোলনে এর তুলনা নাই
স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে অগ্রভাগে পাই
ডাকসু যে তার কিংবদন্তী টিএসসি তার প্রাণ
'অপরাজেয় বাংলা' রবে কীর্তিতে অম্লান।
লক ডাউনের কঠোর সময় ঢাবির জন্মদিনে
উৎসবহীন কাটলো বেলা করোনার অধীনে
ছাত্রবিহীন ছাত্রীবিহীন 'ঢাবি দিবস'কালে
শুভেচ্ছা দিই দূর হতে আজ মাস্কেরই আড়ালে।
ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট
(তৃতীয় দিনের ছড়া কলাম)
চলাচলে বিধিনিষেধ
রাস্তা-ঘাটও ফাঁকা
এক নিমেষে বুঝবে না কেউ
মফস্বল কি ঢাকা।
মার্কেট ও মল বন্ধ সবই
বন্ধ গাড়ির চাকা
কিছু লোকের স্বভাব তবু
যায় না ঘরে থাকা।
তাই খেয়েছে জরিমানা
তাই পেয়েছে শাস্তি
চলবে না আর ভিড়-তামাশা
রাস্তায় মউজ মাস্তি।
করোনাকে রুখতে হলে
থাকতে হবে ঘরে
ডেল্টা নামের করোনা কীট
তবেই যাবে মরে।
অ্যাম্বুলেন্সে বর-কনে
(চতুর্থ দিনের ছড়া কলাম)
কেউ নিজেদের চালাক ভাবে
বুদ্ধি দাঁতের ফাঁকে
লক ডাউনে বানায় বোকা
এমনও লোক থাকে!
রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে
পুলিশ দিলো হানা
রোগীর বদলে কে ছিলো তা
সবার হলো জানা।
অ্যাম্বুলেন্সে বর-কনে আর
যাত্রী ছিলো সাথে
পুলিশ দেখে সন্দেহ হয়
ধরলো হাতেনাতে।
বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল
প্রাচীন প্রবাদ বলে
পড়বে ধরা অতি চালাক
পুলিশ চেতন হলে।
বিদায় ফজল এ খোদা
(পঞ্চম দিনের ছড়া কলাম)
কালজয়ী সেই গানের কবি
পাবনাতে যাঁর বাড়ি
আজ সকালে কোভিড তাঁকে
আকাশ দেওয়ায় পাড়ি।
সালাম সালাম হাজার সালাম
অমর গানের কবি
ফজল ভাই আজ চিরজীবী
তারা কিংবা রবি।
বিবিসিতে গান জরিপে
সেরা গানের ভিড়ে
তাঁর লেখা গান বারোতম
সবার ঠোঁটে ফিরে।
ঊনিশশ’ একচল্লিশ সালে
মার্চে নয় তারিখে
ফজল ভাইয়ের জীবন দীপের
উঠল জ্বলে শিখে।
জুলাই চারের ভোরের রবি
জানায় নিজে জ্বলে
কবি ফজল এ খোদা ভাই
গেছেন অস্তাচলে।
সালাম সালাম হাজার সালাম
ফজল ভাইয়ের গানে
ভবিষ্যতের মানুষ তোমায়
শুনবে কানে কানে।
হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট
(ষষ্ঠ দিনের ছড়া কলাম)
হাসপাতালে বাড়ছে রোগি
করোনাতে হাহাকার
গ্রাম-শহরের সমানুপাত
মরছে স্বজন আহা কার!
অক্সিজেনের সংকটে আজ
ভুগছে রোগী জনগণ
করোনাকে রুখতে হলে
হতেই হবে সচেতন।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর
পঞ্চাশ ভাগ গ্রামের লোক
এই বিপদে আমজনতার
খুলতে হবে মনের চোখ।
জেগে ঘুমায় যে বা যারা
তাদের জাগায় কে আছে?
সংক্রমণের হার কমালে
তবেই দেশের লোক বাঁচে।
স্বাস্থ্যখাতে ভূতের আছর
(অষ্টম দিনের ছড়া কলাম)
স্বাস্থ্যখাতে ভূতের আছর
ছাড়ছে না তো মোটে
মাঝে মাঝেই ভূতগুলো তাই
খবর হয়ে ফোটে।
গণবদলির এক আদেশে
বদলি হলো যারা
মরণ বরণ করে দেহ
ছাড়লো আগে তারা।
অবসরে গেছে যে জন
বদলি হলো সে-ও
কোন্ বা ভূতের এমন আছর
জানলো না তো কে-ও।
ভূত তাড়ানোর সর্ষে জুড়ে
মায়াজাদুর খেলা
জানি না তো কী কারণে
স্বাস্থ্যে অবহেলা।
তাসের ঘর
(নবম দিনের ছড়া কলাম)
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন মহৎ
ঘরহীনে দেয় ঘর
তাঁর স্বপ্নে মারলো কুঠার
শিক্ষিত বর্বর।
ঠিকাদার আর আমলা মিলে
অর্থ নিলো গিলে
তাদের দলে প্রকৌশলী
সই করেছে বিলে।
দুর্নীতি আজ কুমির হয়ে
স্বপ্ন করে গ্রাস
যায় না তো আর সহ্য করা
শিক্ষিত সন্ত্রাস।
ঘর ভাঙেনি দুর্নীতিবাজ
ভাঙলো আপার আশা
দুর্নীতি আর হরিলুটের
দেশ হলো বাতাসা।
স্বাস্থ্যসেবার ঘুণ
(দশম দিনের ছড়া কলাম)
দিন যত যায় কোভিড বাড়ায়
মৃত্যুহারের বোঝা
কর্তা যারা বধির তারা
কানে তুলো গোঁজা।
বিপদ যখন হাল্কা ছিল
ঘাটতি ছিল কাজে
প্রস্তুতিহীন প্রশান্তিতে
আজ বারোটা বাজে।
দুইশো বারো প্রাণ ঝরেছে
ম্যানেজমেন্টে ফাঁকি
আমলাতন্ত্রে হম্বিতম্বি
শাক দিয়ে মাছ ঢাকি।
কর্তা হতে চালক-পিয়ন
এমন তাদের গুণ
করোনাতে আজকে তারাই
স্বাস্থ্যসেবার ঘুণ।