প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
অবশেষে ঘোষিত হলো পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল। পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের তালিকায় চাঁদপুরের অন্য দু’টি উপজেলার সাথে রয়েছে কচুয়া উপজেলার নাম। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে বলে খুশি হয়েছেন প্রার্থী, ভোটার ও ইউনিয়নবাসী। তবে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটারদের কাছে না গিয়ে ছুটছেন ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে। দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। যারা এখনো যাননি তারাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা এবং মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে জোর তদবীর চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। অবশ্য এ বছর মনোনয়ন-বঞ্চিত অনেকেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে ব্যতিক্রম বিএনপির ক্ষেত্রে। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করায় দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে না দলটি। তারপরও কচুয়ার কিছু ইউনিয়নে বিএনপির একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বহুমুখী কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হতে চাইছেন তারা। তবে কোন্দল আছে বিএনপিতেও। কচুয়ায় বিএনপির দু’টি গ্রুপ রয়েছে। মিলন গ্রুপ ও মোশারফ গ্রুপ। তাদের মধ্যে মোশারফ হোসেন বিদেশে থেকে রাজনীতি করায় মিলন গ্রুপ বেশ সক্রিয় ভূমিকায় মাঠে রয়েছে।
আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয় ২৭ নভেম্বর শনিবার। ওইদিন চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন কচুয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৫ জন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করেন।
৩নং বিতারা, ৯নং কড়ইয়া ও ১২নং আশ্রাফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হলেন কচুয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার কাজী আবু বকর সিদ্দিক। ১০নং গোহট উত্তর, ১১নং গোহট দক্ষিণ ও ৬নং কচুয়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার কচুয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুল হাসান। ১নং সাচার ও ২নং পাথৈর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কচুয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ দেলোয়ার হোসেন। ৮নং কাদলা ও ৫নং সহদেবপুর (পশ্চিম) ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কচুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার এএইচএম শাহরিয়ার রসূল এবং ৭নং কচুয়া (দক্ষিণ) ও ৪নং পালাখাল মডেল ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং অফিসার হলেন কচুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আলী আশ্রাফ খান।
কচুয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত আসনের সদস্য এবং সাধারণ আসনের সদস্য পদে আগ্রহী প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে নিয়োগকৃত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করতে পারবেন। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৭ ডিসেম্বরে। এর মধ্যে ১০-১১ ডিসেম্বরে আপিল দায়ের ও ১৩-১৪ ডিসেম্বরে আপিল নিষ্পত্তির পালা শেষ হবে সুযোগ রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী মাঠের চেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের বাসা অনেক বেশি সরগরম। প্রার্থীদের মধ্যে বেশ তোড়জোড় লক্ষ করা গেছে গত দুদিন ধরে। জানা গেছে, অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী এখন ঢাকায় নিজ নিজ আবহে চেষ্টা-তদবির করছেন। মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ কেউ।
এদিকে বিএনপি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিলেও অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ক’জন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরও পোস্টার নজরে পড়েছে।
কচুয়া উপজেলায় নভেম্বর মাসে সম্পন্ন হয়েছিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূল বর্ধিত সভার সকল কার্যক্রম। ১২টি ইউনিয়নে ১২ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে এই বর্ধিত সভা সম্পন্ন হয়। সেই তালিকায় পরে বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়েছেন আরও ৩ জন। সব মিলিয়ে ১১৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী নৌকা প্রতীক পেতে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবেন।
কচুয়ায় স্থানীয় সাংসদ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম হোসেনের অনুসারী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় এবার বিগত যে কোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এ পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের জন্যে ১১৪ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে ১২টি ইউনিয়নে।
এতে ১২টি ইউনিয়নে ১১৪ জন প্রার্থী আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা মনোনয়ন প্রত্যাশা করে নাম প্রস্তাব করেন। তাদের মধ্যে সাচার ইউনিয়নে ৮ জন, পাথৈর ইউনিয়নে ৯ জন, বিতারা ইউনিয়নে ১১ জন, পালাখাল মডেল ইউনিয়নে ৫ জন, পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নে ৯ জন, উত্তর কচুয়া ইউনিয়নে ১৩ জন, সদর দক্ষিণ ইউনিয়নে ৮ জন, কাদলা ইউনিয়নে ১১৩ জন, কড়ইয়া ইউনিয়নে ১৪ জন, গোহট উত্তর ইউনিয়নে ৮ জন, গোহট দক্ষিণ ইউনিয়নে ১১ জন ও আশ্রাফপুর ইউনিয়নে ৫ জন।
অপরদিকে বিএনপির সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন : ১২নং ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুদ এলাহী সুভাষ, ১১নং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ফারুকী, ৯নং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মালেক, ৭নং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান পাঠান এবং ৪নং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন স্বপন।