প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
ওসমানী সনদ, অস্ত্র জমাদানের রসিদ, মুক্তিবার্তাসহ অন্যান্য প্রমাণপত্র থাকার পরও গেজেটে নাম নেই মুক্তিযোদ্ধা হাসমত উল্যার। তাঁর মতো এমন অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অসচেতনায়। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেসব বীর এবং তাদের উত্তরসূরিরা। সবচেয়ে বড় কথা সম্মান আর স্বীকৃতি।
মোঃ হাসমত উল্যা সাউদ, পিতা মরহুম মৌলভী আব্দুল কাদের সাউদ মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন লড়াকু সৈনিক। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের কৃতী সন্তান তিনি। পাকিস্তান আমলে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকুরি করতেন। যুদ্ধ শেষে একই প্রতিষ্ঠানে পুনরায় যোগদান করেন। হাসমত উল্যাহ এফ. এফ. বাহিনীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ২৬ মার্চের পর থেকেই তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেন। ভারতের মেলাঘর থেকে এফএফ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করেন। তার সহযোদ্ধাদের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি এস.এল. আর, এম.এম.জি ও গ্রেনেডের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। তিনি ২নং সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন।
যুদ্ধ সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে হাসমত উল্যাহ সাউদের। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক আতাউল গণী ওসমানী এবং আঞ্চলিক অধিনায়ক (২ নম্বর সেক্টর) কর্নেল খালেদ মোশাররফের স্বাক্ষরযুক্ত দেশরক্ষা বিভাগ কর্তৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র রয়েছে। এফ জোন (নোয়াখালী) কমান্ডার সামছুল হক কর্তৃক প্রত্যয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডার কর্তৃক প্রত্যয়ন, ৮ আগস্ট ১৯৭৭ সালে ১নং সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়ন, ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ‘সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমান্ড’ কর্তৃক প্রত্যয়ন, ঢাকা সিটি কমান্ডার ‘গেরিলা বাহিনী’ কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র রয়েছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জাতীয় মহাসম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয় হাসমত উল্যাকে। তিনি যে অস্ত্র জমা দিয়েছেন তার গ্রহণ কপিও রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি একটি এস.এল.আর (বাট নং ১২৮৯) জমা দেন। অস্ত্র জমাদানের রসিদ নং ১২৮৯। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কার সাথে এবং কার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন, কোথায় ট্রেনিং নিয়েছেন তা সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিবাহিনী কমান্ডার কর্তৃক প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ রয়েছে। সাপ্তাহিক মুক্তিবার্তায়ও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে (নং ০২০৫০৫০৬১৮)।
এতো কিছু থাকার পরও কেন গেজেটে হাসমত উল্যার নাম নেই তা এক বিরাট প্রশ্ন, সেই সাথে রহস্যময়ও। এ বিষয়ে তার বড় ছেলে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, তরুণ সমাজ সেবক ও ফরিদগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান সাউদ এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘বুঝ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। আমার চিন্তা চেতনায় এবং ধারণে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর দর্শন, আদর্শে বিশ্বাসী বলে কোনো কিছুতে লোভ নেই। পাওয়ার জন্য নয় দেওয়ার জন্য রাজনীতি করি। মানুষ এবং সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। রাষ্ট্রীয় সুবিধা নয়, আমি আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই।’