প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
শাহরাস্তি উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক দর্জি গত নির্বাচনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, বার বার নির্বাচিত বৃহত্তর টামটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদারের বিপক্ষে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হয়ে সকলের নজরে আসেন। সে সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন ফারুক দর্জি। কনিষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন টামটা উত্তর ইউনিয়নের। এ বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত ২৩ নভেম্বর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। এতে দলীয় মনোনয়ন পান প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মজুমদারের ছেলে আলমগীর কবির পলাশ্ব। এ ইউনিয়ন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন চেয়ারম্যান ফারুক দর্জি। সর্বশেষ ফারুক দর্জি তার ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:-
প্রিয় টামটা উত্তর ইউনিয়নবাসী, আপনাদের সকলকে সালাম জানাচ্ছি।
আমি আপনাদের সেই ফারুক দর্জি, যে তার বাবার স্নেহে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠলেও আপনাদের ফারুক দর্জি হয়ে উঠেছিলো, আপনাদেরই পরম মমতায় আপনাদেরই কোনো এক সময়ের সাহসী ভূমিকায়। বাবা নামক মানুষটার অনেক অবদান প্রত্যেকের জীবনে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমার বাবা এখন মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে, কিন্তু এই বাবা শব্দটাকে কেন্দ্রীয় নামক দরবারে পৌঁছালে যে সেটা যোগ্যতায় পরিণত হতে পারে তা ভুলেও চিন্তা-ই করিনি। কারণ আমার বাবারও তো এই অঞ্চলের রাজনীতিতে সমৃদ্ধশালী একটা অতীত ছিল। যেই অতীতে বাবা তার সকল পরিশ্রম দিয়ে তার প্রাণের সংগঠনটি সমৃদ্ধ থাকুক চেয়েছিলো, পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নে গুটি কয়েকজন মিলে প্রিয় ছোট ভাইকে (হুমায়ুন কবির মজুমদারকে) চেয়ারম্যান বানিয়ে লম্বা একটা সময় ধরে সহচর হিসেবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। হ্যাঁ দিয়েছে কিন্তু চায়নি। ইউপি নির্বাচন করার মত সকল যোগ্যতা থাকার পরও প্রিয় ছোট ভাইকে আহত করে ২৯ বছরের কোনো টার্মেই ঘুণাক্ষরেও নিজে নির্বাচন করতে চায়নি এবং সেটা আমৃত্যু বজায় ছিলো (আশা করি অস্বীকার করবেন না মাঝি মহোদয়)।
বাবা শুনেছি তুমি প্রিয় ছোট ভাইয়ের মঞ্চ মজবুত রাখতে নিজ মাথায় করে বাজার থেকে চৌকি ময়দানে নিয়ে গিয়েছো, এতটুকু ইগো প্রবলেমে তুমি ভোগোনি। যাদের সাথে তুমি প্রাণ খুলে পথ চলেছ তাদের সাথে আবার কিসের ইগো। কিন্তু বাবা তুমি পরপার থেকে দেখ কিনা জানি না, তোমার সেই সহচরদের, স্নেহভাজনদের আমার প্রতি সে কী রাগ। আমি কেন ভুল (ওনাদের দৃষ্টিতে) করলাম, কেন সমাজ উন্নয়নে তোমাদের কাজটা আমারও কাজ ভাবলাম, মূলত কেনো মঞ্চে দাঁড়াতে গেলাম। আস্তে আস্তে বুঝলাম, এই মঞ্চটা তুমি চাইলেও পেতে না বাবা, দিত না তোমাকে। কিন্তু আমি তো তুমি নই বাবা। আমি তোমার আদরের ফারুক থেকে তোমার প্রিয় এই এলাকাবাসীর সাহসে সযত্নে গড়া ফারুক দর্জি। তোমার সহচর, স্নেহভাজনরা আমাকে এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকাতে ক্ষোভের অনলে যেভাবে পুড়িয়েছে, ওপারে থাকাতে তা তুমি প্রত্যক্ষ করনি বাবা। অবশ্য তুমি জীবিত থাকলে তোমার প্রিয় ছোট ভাইয়ের সাথে মঞ্চে দাঁড়ানোর স্পর্ধা দেখানোর অপরাধে মনে হয় তুমিও আমার উপর রেগে থাকতে। তবে বাবা, আমার সম্মানীয় সকল ক্ষুব্ধের ক্ষোভের অনল থেকে এখনও বেঁচে আছি, উপরে আল্লাহ আর এই জমিনে একজন কিংবদন্তী মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের ছায়ার শীতলতায়। এবার কী আছে এই ললাটে জানি না, কারণ মঞ্চে অবিচল থাকতে তোমার প্রিয় প্রতীক তোমাকে ব্যবহার না করাতে পাইনি মনে হয়। কেন আমি তোমাকে ব্যবহার করবো বাবা? তুমিই তো আমাকে নিজের যোগ্যতায় আত্মপরিচয় খুঁজতে শিখিয়েছ, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছ। তুমি কি করেছ সেটা তোমার প্রিয় সেই মানুষগুলো যেহেতু ভুলে গেছে, আমিও ভুলে গেছি বাবা। তারাতো দেয়-ই নি বরং এলাকাবাসীর দেয়া উপহার কেড়ে নিতে চায়। তারা কিছু না দিতে চাইলেও তোমার দোয়া তো আমার সাথে আছে বাবা, আছে এলাকাবাসীর দোয়া। বাবা এবার অন্তত রাগ করার সুযোগ নেই তোমার, কারণ ঐ একই পরিবার হলেও তোমার সেই প্রিয় ছোট ভাইয়ের সাথে স্পর্ধা দেখাচ্ছি না। তোমার প্রিয় ছোট ভাইও মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন। ওপারে মহান আল্লাহ তোমাদের দু’জনকে সর্বোচ্চ ভালো রাখুক।
বাবা যেহেতু তোমার প্রিয় প্রতীক আমার এবার অগ্রাধিকার থাকার পরও আমাকে দিবে না, সেহেতু এলাকাবাসীর মতামত এবং অনুমতিই আমার শেষ আশ্রয়স্থল।
হে প্রিয় এলাকাবাসী, হে প্রিয় টামটা উত্তর ইউনিয়নবাসী! গত নির্বাচনে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আপনারা সর্বোচ্চ সমর্থন দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করেছি আপনাদের সামনে, যদি প্রয়োজনীয় সাব্যস্ত হয়ে থাকি, তাহলে আপনাদের মনোনীত প্রতীকে নির্বাচনে থাকবো কিনা সিদ্ধান্ত এবার আপনাদের। আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চাইলে মঞ্চে অবিচল থাকার লড়াই চালিয়ে যাবো, আর না চাইলে মঞ্চ ছেড়ে দিবো। শেষ পর্যন্ত জনগণের ফারুক দর্জি জনগণের দরজায় জনমতের জন্য দাঁড়িয়ে। প্রিয় টামটা উঃ ইউনিয়নবাসী! সিদ্ধান্ত/মতামত দিবেন.....প্লিজ...