প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্দেশ্যে টিআইবি
‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কারের কৌশলগত পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করুন
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের ধারাবাহিকতায় আপামর জনগণের গগনচুম্বী প্রত্যাশা পূরণের গুরুদায়িত্ব নিয়ে ‘নবীন-প্রবীণে'র সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের নিশ্চিয়তাসহ একটি সুশাসিত ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্রকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে সুনির্দিষ্ট কৌশলনির্ভর পথরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্যে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে এক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে সংস্থাটি। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও নিদর্শন রক্ষায় অতন্দ্র-প্রহরীর ভূমিকা পালনের জন্যে সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ‘বৈষম্যমুক্ত ও মানবাধিকার-ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎকারী, জবাবদিহিহীন ও ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ অপশক্তিকে অকুতোভয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে পরাভূত করেছে। ছাত্র-জনতার অজেয় শক্তির অভূতপূর্ব এই অর্জনে সকলকে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সকৃতজ্ঞ অভিনন্দন জানায় টিআইবি। এর মাধ্যমে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর নতুন করে স্বাধীনতার চেতনার বাংলাদেশকে পুসর্গঠনের যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে নতুন সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে--এমনটাই প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে 'নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে রাষ্ট্রকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাবার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কৌশলনির্ভর পথরেখা ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নের জন্যে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাই।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলন, ‘জরুরি বিবেচনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি একটি জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী তৈরিতে এর ব্যবস্থাপনা ও কর্মকাঠামো পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে। পুলিশের মতো একটি রাষ্ট্রীয়বাহিনী কীভাবে এমন জনরোষের শিকার হলো এর অন্তর্নিহিত কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি বাহিনীটির কাঙ্ক্ষিত পেশাগত উৎকর্ষ এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি-কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। পরাজিত সরকার ক্ষমতার স্বার্থে পুলিশবাহিনীসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধারাবাহিকভাবে অপব্যবহার করেছে। তাই বলে নির্বিচারে পুলিশ তথা কোনো সরকারি কর্মচারীকে হত্যা বা তাদের প্রতি কোনো ধরনের সহিংস আচরণ করা গর্হিত অপরাধ।অবিলম্বে এসব বন্ধ করতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে এদেশের আপামর জনগণ ‘ছাত্র-জনতার’ এই অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছে। সকলেই এর অংশীদার উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলন, ‘অনেক জায়গায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ রাত জেগে পাহারা দেওয়া সত্ত্বেও সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, উপসনালয় ও মন্দিরে এখনও হামলার ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক নিদর্শন ও স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ‘মুক্তিযুদ্ধের সরকার’ নামধারী স্বৈরতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা করেছে, তার বিচার হতে হবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায়। ‘মব-জাস্টিস’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ও প্রত্যাশার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। স্বৈরাচারের অপশাসনের কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য। এ জাতীয় আত্মপরিচয় ধ্বংস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে আমাদের, বিশেষ করে সরকারের। পাশাপাশি আক্রোশ ও শত্রুতার বশবর্তী হয়ে যে কোনো ধরনের প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সত্যিকারের অপরাধী যাতে আইনানুগ পদ্ধতিতে শাস্তি পায়, সে ব্যাপারে আমাদের সকলকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানাই।’
টিআইবি বলছে, চরম সঙ্কট ও অভূতপূর্ব সম্ভাবনাময় মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। তাঁদের ওপর এদেশের আপামর জনগণের সীমাহীন প্রত্যাশা। ছাত্র-জনতার অজেয় শক্তির হাতে পরাজিত দীর্ঘকাল লালিত দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পরিণতি থেকে সঠিক শিক্ষা নিয়ে বৈষম্যমুক্ত, সুশাসিত, দুর্নীতিমুক্ত, বাক্ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারভিত্তিক, জনকল্যাণমূলক, অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে টিআইবি তার সক্ষমতা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করছে।