প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
১৩ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ
হাজার হাজার শিক্ষার্থী, দুই সহস্রাধিক মানুষ ও শত শত যানবাহন চলাচলের একমাত্র রাস্তা সংস্কারের অভাবে পড়ে আছে নিদারুণ অবহেলায়। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষসহ হাজারো শিক্ষার্থী। ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা। পিছলে পড়ে জামা-কাপড় খোয়াচ্ছে স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই। ফলে ঐদিন আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হচ্ছে না।
হাইমচর উপজেলার কালা চৌকিদার মোড় থেকে জনতাবাজার পর্যন্ত এ রাস্তাটি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। কিন্তু বর্তমানে অটোবাইক, সিএনজি, রিকশা, সাইকেলসহ সবধরনের যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে।
নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, চরভাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসা, ৩০নং গাজীপুর মনিপুর ও ২৮নং চরশোলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪ কিন্ডারগার্টেন, ৫টি মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুরা এ রাস্তায় চলাচল করে। কখনও স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়, কখনো বা পড়ে গিয়ে বই-খাতা ভিজে যায় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। রাস্তায় বড় বড় গর্ত থাকায় সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
রাস্তার কার্পেটিং, খোয়া, বালি আলাদা হয়ে গেছে। ১০০ ফুটের মধ্যে বিটুমিনের অস্তিত্ব নেই। পুরো রাস্তা খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব খানাখন্দে পানি জমে ডোবার রূপ ধারণ করে।
অথচ ৪-৫টি গ্রামের মানুষের হাটে-বাজারে যাওয়া বা উপজেলা সদরে যাওয়া আসা এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পরিবহণসহ শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, নির্মাণের পর গত ১৫ বছরে সংশ্লিষ্টদের কেউই এই সড়কের দিকে নজর দেননি। আর এই নজর না দেয়ার কারণে ৪-৫টি গ্রামের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে রাস্তাটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ওই সড়কটির সব স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাকা রাস্তার ইট বালি আলাদা হয়ে আগের কাঁচা রাস্তার মাটিও বের হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের কার্পেটিং উঠে ইটের খোয়া বের হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ডোবার মতো রূপ নিয়েছে। সড়কে একটি গাড়ি আরেকটিকে অতিক্রম করতে পারছে না। হেলে দুলে চলে ভ্যান ও অটোবাইকগুলো।
এতে ছোটখাটো যানবাহনসহ উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড, ৯নং ওয়ার্ড ও ৩নং ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাসহ ভ্যান ও অটোবাইক চালকেরাও।
এলাকার বাসিন্দা ও গন্ডামারা এবিএস ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মুসলিম গাজী বলেন, সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি আমরা। আলগী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে যেমন সমস্যা হচ্ছে, মসজিদে যেতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কৃষকের কৃষি পণ্য বাড়িতে আনা নেওয়াসহ হাটে বাজারেও নেওয়া কষ্ট হচ্ছে।
স্কুল শিক্ষক ফারুকুল ইসলাম মাস্টার বলেন, এ রাস্তায় ভ্যান-অটোবাইক উল্টে যায়। রাস্তায় জমা পানির মধ্যে প্রায় সময় পড়ে গিয়ে জামা কাপড় নষ্ট হয়।
ভ্যানচালক আব্দুল কাদির বলেন, তারা ঠিকমতো মালামাল পরিবহণ করতে পারেন না। এতে তাদের কষ্ট, গৃহস্থদেরও কষ্ট। ভ্যান টেনে নিতেই কষ্ট হয়, তার মধ্যে গর্তে আটকে গেলে চাকা সামনে বা পিছনে যেতে চায় না।
তিনি জানান, ভ্যান না চালালে পেটে ভাত জোটে না। কিন্তু যে কয় টাকা কামাই করি তার অর্ধেক চলে যায় গাড়ি সারাতে।
৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল মাস্টার জানান, আমি নিজ উদ্যোগে কয়েকবার রাবিশ ও বালি দিয়ে সংস্কার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ট্রাক, পিকাপসহ মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে এগুলো টেকসই হয় না। আমার মেম্বারদের নিয়ে পুনরায় সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
তিনি বলেন, এটা এলজিইডি কর্তৃপক্ষের রাস্তা। তাদেরকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও রাস্তাটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ তারা নিচ্ছেন না। তাই এ রাস্তাটি সরকারিভাবে দ্রুত সংস্কার করার জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির হাইমচর উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থার কথা আমি জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছি। এ রাস্তায় দীর্ঘদিন কোনো প্রজেক্ট অনুমোদন না হওয়ায় রাস্তাটি সংস্কার করা হয়নি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটি প্রজেক্ট অনুমোদন হওয়ার কথা। সেটা অনুমোদন হওয়ার সাথে সাথেই এ সড়কটির মেরামত কাজ শুরু হবে।