বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জের রামপুর বাজারে দখলে নেয়া হয়নি সরকারি সম্পত্তিসহ বহুতল ভবনটি
স্টাফ রিপোর্টার ॥

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং দক্ষিণ গোবিন্দপুর ইউনিয়নের রামপুর বাজারে নিজ মালিকানা সম্পত্তি দাবি করে সরকারি সম্পত্তিতে নির্মিত বহুতল ভবনটি আদালতের নির্দেশের ২ মাস অতিবাহিত হলেও সরকারের দখলে না নেয়ায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

রামপুর বাজারে এক সময় বিশাল পান বাজার ছিলো। সংলগ্ন স্থানে ছিলো একটি খালি স্থান এবং পাশে ছিলো একটি ঘাটলা। যেখানে মানুষজন এসে বসতো এবং পানি ব্যবহার করতো। নদীর পাড়ের এই ঘাটলাটি সকলের কাজে ব্যবহার হতো। হঠাৎ করেই স্থানীয় আব্বাস আলী নামক এক ব্যক্তি সরকারের কাছ থেকে লীজ এনেছেন এমন মিথ্যে দাবি করে উক্ত পান বাজারের খোলা স্থানসহ বাজারের ঘাটলা ও পাশের নদীর পাড়ের কিছু অংশ ভরাট করে বিশাল একটি বহতল ভবন নির্মাণ করা শুরু করেন। ভবনটি ২য় তলা পর্যন্ত নির্মাণ চলাকালে স্থানীয় জনমনে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা দেখা দেয়। এমনকি বাজারে থাকা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণের চলাচলে সমস্যা, বাজারের পানি নিষ্কাশনে সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে এলাকাবাসী এ ঘটনার প্রতিরোধে স্থানীয়ভাবে সরকারের সম্পত্তি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী এমরান হোসেনকে ঘটনাটি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্যে দায়িত্ব দেন। তিনি ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় নিজেই চলতি বছরের শুরুতে বাদী হয়ে সরকারি সম্পত্তি দখলকারী আব্বাস আলীকে বিবাদী করে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত বিবাদীকে বার বার সমন জারির পরও হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরে বিবাদী এসে আদালত থেকে জামিন নেন। পাশাপাশি আদালত তার দখলীয় সম্পত্তির কাগজপত্র তলব ও সম্পত্তিটি সরকারের তাই কাজ বন্ধ করার জন্যে নির্দেশ দেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আব্বাস আলী রামপুর বাজারের দীর্ঘদিনের বাজার ইজারাদার তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়াকে দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখেন।

এমতাবস্থায় পুনরায় বাদী ঘটনাটি আদালতকে অবহিত করলে আদালত গত ২ মাস পূর্বে অর্থাৎ গত মে মাসে এই সম্পত্তি ও অবকাঠামোসহ সরকারের দখলে নেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ সম্পত্তি সরকারের দখলে নেয়ার বিষয় সম্পর্কে জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ ফরিদগঞ্জ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ, অ্যাসি-ল্যান্ড ফরিদগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিতপত্র দেন।

এই আদেশের ২ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর না করায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে উক্ত সরকারি সম্পত্তি দখলকারী আব্বাস আলী উক্ত ইউনিয়নের ১৭৩নং পশ্চিম লাড়ুয়া মৌজার ১৭৮৭ দাগে কিছু সম্পত্তি খারিজ করে একটি ভুয়া দলিল সৃজন করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ উক্ত ১৭৮৭ দাগটিও সরকারি সম্পত্তি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে সরকারি সম্পত্তিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি দাবি করে একটি দলিল করে ঢাকাস্থ উত্তরা ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকার লোন উত্তোলন করেন। তিনি সরকারের সম্পত্তি নিজ নামে দলিল করে ব্যাংকে মর্টগেজ রেখে কীভাবে কোটি কোটি টাকা লোন নিলেন, সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাজারের স্থানীয় কয়েক বছরের ইজারাদার তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়াকে দিয়ে সরকারি সম্পত্তিতে নির্মিত বহুতল ভবনের নানা কাজ রাতের আঁধারে করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তোফায়েল ভূঁইয়া প্রভাবশালী হওয়ায় এ ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি তাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সরকারি সম্পত্তি বেদখলের বিষয়ে আদালতে সরকারের পক্ষে মামলাকারী এমরান হোসেন ও স্থানীয় এলাকাবাসী এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় হতাশায় ভুগছেন। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড আজিজুর নাহারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা জায়গাটির কাগজপত্র পেয়েছি। অবৈধভাবে সরকারের সম্পত্তি দখলকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। কিন্তু সরকারের কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি উদ্ধার করার বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনার জানা রয়েছে। আর সরকারি সম্পত্তি সরকারের দখলে থাকবে এর বিকল্প কিছু নাই।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিম্ন আদালতের আদেশের পর উচ্চ আদালতে সম্পত্তিটি নিয়ে একটি মামলা চলমান। তাই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সরকারি সম্পত্তি কিভাবে খারিজ হলো বিষয়টি আমার জানা নেই। কারণ আমি সে সময় এ স্থানে ছিলাম না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা ভুয়া দলিল সৃজনকারী আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছি। এর বাইরে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এই বিষয়ে মুঠোফোনে আব্বাস আলীর সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়