বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ধুলাবালিতে চরম দুর্ভোগে নাকাল পথচারীসহ সাধারণ মানুষ
মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি ॥

হাইমচরে পুরাতন ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মেঘনার পাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ইট, পাথর, বালুর ছোট-বড় ব্যবসা। এখানে প্রতিনিয়ত বালু, পাথর ও ইট বহনকারী পাওয়ার ট্রলি ও পিকআপগুলো দ্রুত গতিতে চলাচলের ফলে ধুলাবালিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার পথচারীসহ সাধারণ মানুষদের। দ্রুতগতির গাড়ির দূষিত ধোঁয়ায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি এবং বাতাসে উড়ছে ধুলাবালি। পথচারীসহ স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি পথ চলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের। যার ফলে সড়কগুলোতে ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাস্তার পার্শ্ববর্তী বসত ঘরগুলোতে বালুর আস্তর পড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে স্থানীয় লোকজন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আলগী দূর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের নদীরপাড় সংলগ্ন ডিগ্রি কলেজ থেকে কালা চকিদার মোড় পর্যন্ত এ সড়কটির আশেপাশে ও মেঘনা নদীরপাড়ে অসংখ্য বালু, ইট, পাথরের মহল তৈরি হয়েছে। এ ইট, পাথর ও বালু বহনকারী ট্রাক, পিকআপগুলো চলাচলের একমাত্র সড়ক তেলিরমোড় থেকে ডিগ্রি কলেজ সড়কটি। এ সড়কটিতে একের পর এক ইট, বালুভর্তি ট্রাক ও পিকআপ যাতায়াত করতে দেখা যায়। গাড়িগুলো যাওয়ার পর রাস্তায় ধুলাবালিতে ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উড়ন্ত বালু স্থির না হতেই আরেকটি গাড়ি এসে আবারো ধুলাবালি উড়িয়ে দেয়। এ পথে যাওয়া-আসা লোকজন পরনের কাপড় দিয়ে চোখ মুখ ঢেকেও রক্ষা পায় না ধুলাবালি থেকে। নদীরপাড় থেকে একজন পথচারী কালা চকিদার মোড় আসার পর ঐ ব্যক্তি নিজেকেও নিজেকে চিনতে পারে না। তার মাথার চুলগুলোসহ পুরো শরীর বালিতে ঢেকে গিয়ে সাদা হয়ে যায়। পথচারীদের অবস্থা এমন হলেও রাস্তার পাশে থাকা ঘর-বাড়িগুলোর অবস্থা আরও ভয়ানক। এ এলাকার মানুষগুলো যেন ধুলাবালির সাথে যুদ্ধ করে কাটাচ্ছে তাদের জীবন। কার কাছে কোন্ দপ্তরে অভিযোগ দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে তাও জানা নেই তাদের। তবে দিনের বেলা এ গাড়িগুলো বন্ধ রেখে রাতে যাতায়াত করলে লোকজনের সুবিধা হতো বলে তারা জানান।

স্থানীয় পথচারী নাছির উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা তাদের সুবিধার্থে নদীর পাড়ে এর ব্যবসা করে আসছে। মানুষজন নিজেদের প্রয়োজনেই ইট, বালু, পাথর ক্রয় করছে। কিন্তু তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করলেইতো হবে না। ব্যবসায়ীর সুবিধার জন্য অন্য লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা সেটাও দেখা দরকার। ব্যবসায়ীরা সেটা দেখছে না। তারা মালামাল বিক্রি করছে, ক্রেতা ক্রয় করছে, ট্রাকের কর্মীরা ট্রাকে করে মাল নিয়ে দিয়ে আসছে। এখানেই তো শেষ নয়, এই যে মালামালগুলো নেয়া আসার মাঝে পথচারী ও ঘর-বাড়ির লোকজন ধুলাবালিতে কষ্ট পাচ্ছে, এ ধুলাবালি থেকে পথচারী ও এলাকাবাসীকে ব্যবসায়ীরা এবং ট্রাকের ড্রাইভার রক্ষা করতে পারে। ব্যবসায়ীরা সকলে মিলে যদি একজন লোক রেখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি দিয়ে রাস্তাটি ভিজিয়ে রাখে তাহলে ধুলাবালিতে লোকজনের কোনো সমস্যা হতো না। এছাড়া যে ট্রাকে করে বালু নেয়া হয় সেই ট্রাকে বালুর উপরে কাপড় দিয়ে ঢেকে নিলে বালুগুলো উড়তো না। ধুলাবালি থাকতো না। তবে আমি মনে করি, প্রতিটি ব্যবসায়ী মিলে যদি চেষ্টা করে তাহলে রাস্তায় পানি দিয়ে রাখলে এলাকাবাসী ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

স্থানীয় মুদি দোকানদার মোস্তফা গাজী বলেন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এ রাস্তায় চলাচল করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তায় হাঁটাচলা করেন সাধারণ মানুষও। এ রাস্তার ব্যবসায়ীরাও নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ধুলাবালির কারণে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

নীল কমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকম-লী জানান, বিকল্প রাস্তা না থাকায় ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া-আসার এ রাস্তাটিকেই ব্যবহার করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সাধারণ মানুষ এ রাস্তায় চলাচল করে। গাড়ি চালকরাও মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে আতঙ্কে থাকে শিক্ষার্থীরা। তাই এসব শিক্ষার্থীর স্বার্থে জনবহুল এ রাস্তায় গাড়ি চলাচলের নীতিমালা বেঁধে দেয়া এখন সময়ের দাবি।

হাইমচর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অভিভাবক মাহমুদুল হাসান জানান, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াতে অনীহা প্রকাশ করছে। তাই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করছি।

৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, হাইমচর ডিগ্রি কলেজ, একটি দাখিল মাদ্রাসা, একটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ রাস্তাটি ব্যবহার করে। ইতোমধ্যে মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। অনেকেরই হাতপা ভেঙেছে। তাই উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ ইট-বালির গাড়িগুলো রাতে চলাচলের ব্যবস্থা করার নিয়ম প্রণয়ন করলে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়