প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
‘বাংলাদেশ আমার অহঙ্কার’-এই স্লোগান নিয়ে র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র, মাদক উদ্ধার, চাঞ্চল্যকর হত্যা এবং বিভিন্ন আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেফতারের মাধ্যমে র্যাব ইতোমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামী শাকিল আজাদ ওরফে কাতারী জামাই (২৯) বিদেশে পাঠানোর নাম করে শ^শুরবাড়ি এলাকা থেকে অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। বিয়েকে সে প্রতারণার প্রধান অস্ত্র হিসেবে বেছে নেয়। প্রথমে স্বল্প পরিচিত কারো এলাকায় ঘুরতে যাওয়ার বাহানায় দরিদ্র কিংবা অসচ্ছল পরিবারের মেয়েকে প্রবাসী পরিচয়ে বিয়ে করতো। এরপর এলাকায় কাতার প্রবাসী জামাই হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করতেন। নানাভাবে ছোটখাটো দান, ছদকা করে এলাকার মানুষের বিশ^াস অর্জন করতো। এরপর নানান কৌশলে শ^শুরবাড়ির এলাকার বেকার যুবকদের প্রবাসে চাকরি দেবার টোপ দিতেন। তার ফাঁদে পা দিয়ে যেসব বিদেশ গমনেচ্ছুকরা তার নিকটে আসতো। প্রথমেই সবার কাছ থেকে ভিসা, পাসপোর্ট বানানোর কথা বলে নিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা। এ সময় বিশ^াস অর্জনের জন্য ভুক্তভোগীদের ব্লাঙ্ক চেকও দিতো এই প্রতারক। কিন্তু ব্লাঙ্ক চেকের ব্যাংক একাউন্টটি থাকতো ফাঁকা! এমনকি টাকা নেয়ার সময় অনেক ভুক্তভোগীর সাথে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না তিনি। এরপর ভিসা ও পাসপোর্টের বিভিন্ন জটিলতার কথা বলে কিংবা সাময়িক হজ্বের ভিসা দেবার কথা বলে আরো নানানভাবে কয়েক ধাপে টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। আর কোনো এলাকা থেকে এসব কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতানো হয়ে গেলে বউ এবং শ^শুরবাড়ি ফেলে রেখে ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম বন্ধ করে ফেলে দিয়ে নিখোঁজ হয়ে যেতেন আজাদ শাকিল। এক্ষেত্রে বিয়ে করার সময়ই আজাদ সেসব পরিবারের মেয়েদেরকেই টার্গেট করতো, যাদের তার বিরুদ্ধে মামলা করার সামর্থ্য নেই। ওদিকে কথিত কাতারী জামাই বিদেশ নেবার কথা বলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হবার পর ভুক্তভোগীরা এসে চাপ প্রয়োগ করতো তার শ^শুর-শ^াশুড়ির ওপর। একদিকে মেয়েকে ফেলে প্রতারক জামাইয়ের ফেরারী হওয়া আরেকদিকে এলাকার প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের চাপে ভয়াবহ দুর্বিষহ অবস্থায় পড়তো আজাদের দরিদ্র শ^শুর বাড়ির লোকজন। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক প্রতারক আজাদ শাকিল জানান, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, নীলফামারী ও ফরিদপুরে অনেকটা একই রকমভাবে বিয়ে করে কাতারী জামাই সেজে প্রতারণা করে পালিয়েছেন তিনি।
প্রতারক আজাদ শাকিল ৪র্থ প্রতারণামূলক বিয়েটি করেন খুলনায়। সেখানকার নানান মানুষকে বিদেশে নেবার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। এ সময় এলাকাবাসীর রোষানলে পড়ে প্রতারক আজাদের ৪র্থ স্ত্রী ও শ^শুরবাড়ির লোকজন। অনেকটা বাধ্য হয়েই নারী নির্যাতন দমন আইনে আজাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন তারা অতঃপর ভোক্তভোগীরা তার শ^শুর ও শাশুড়ির নামে মামলা করলে তার শ^শুর ও শাশুড়ি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। আজাদ শাকিলের আসল বাড়ি কুমিল্লার বরুড়ায় জানতে পেরে গত ১৫ দিন আগে কুমিল্লায় আসেন আজাদের ৪র্থ স্ত্রী এবং র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পে এ বিষয়ে সবিস্তারে লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে এই কুখ্যাত প্রতারককে আটকে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে র্যাব। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও মাঠ পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে অবশেষে ২৫ জানুয়ারি রাতে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানাধীন পদুয়ার বাজার বিশ^রোড এলাকা থেকে কুখ্যাত প্রতারক আজাদ শাকিল ওরফে কাতারী জামাইকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা-এর একটি আভিযানিক দল।
তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও এতোদিন নানান কৌশলে গাঁ ঢাকা দিয়ে অধরাই ছিলেন তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা গেছে প্রতারণার টাকায় চট্টগ্রামে নিজের একটি বেকারীর দোকানও খুলেছিলেন তিনি। মাঝে একবার কাতারেও পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আজাদ। কিন্তু বিদেশে লোক নেবার কথা বলে অসংখ্য মানুষের সাথে প্রতারণা করায় ভুক্তভোগীদের অনবরত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার পাসপোর্টটি বাতিল করে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে বিদেশে পালাতে না পেরে বেকারী ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে চট্টগ্রামেই থাকা শুরু করেন তিনি। গোপনে নিজ গ্রামের বাড়ি আসতে গিয়ে র্যাবের জালে ধরা পড়ে এই প্রতারক। আটক প্রতারক আজাদ শাকিল (২৯) কুমিল্লার বরুড়া থানার অশ^দিয়া এলাকার আবু হানিফের ছেলে।
এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত প্রতারকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। প্রতারক গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।