প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
দুর্গোৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের প্রস্তুতি সভা
শারদীয় উৎসবের নিরাপত্তায় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে : জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে প্রস্তুতি সভা করেছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
|আরো খবর
গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। এখানে আমরা সকলেই সকলের উৎসবের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করি, একে অপরের উৎসবে সামিল হই। আমাদের মাঝে ধর্মীয় ভিন্নতা থাকলেও উৎসবের আনন্দ নিয়ে কোনো ভিন্নতা নেই। তাই শারদীয় উৎসব উদ্যাপনে নিরাপত্তার লক্ষ্যে যা যা করণীয় তার সকল ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। দুষ্কৃতকারীরা চাইবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশ করতে। কিন্তু আমরা তাদেরকে সেই সুযোগ দেবো না। তিনি শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপনকারীদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোনোপ্রকার গুজবে কান দিবেন না। গুজবে অনেক সময় বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। উৎসব চলাকালীন বা তার আগে পরে যে কোনো প্রয়োজনে আপনারা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করবেন, আমরা আপনাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চেষ্টা করবো। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যে আমরা নিরাপত্তামূলক সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব মাঠে থাকবে। চাঁদপুর শান্তির শহর, এই শান্তি রক্ষায় আপনারা সকলে সহযোগিতা করবেন। তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, নিজেরা সজাগ থাকবেন, আমরা এখনো করোনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারিনি। তাই পূজামণ্ডপে করোনা প্রতিরোধমূলক সকল ব্যবস্থা রাখবেন। তিনি উৎসবের সকল প্রকার নিরাপত্তা বিধানে স্ব স্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। সভার শুরুতে গত বছরের কার্যবিবরণী পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ মাহমুদ।
সভায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে দুর্গোৎসব উদ্যাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল ও চাঁদপুর জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী। দুর্গাপূজার প্রস্তুতি বিষয়ে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন চাঁদপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ।
চাঁদপুর সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, কচুয়া উপজেলা সভাপতি ডাঃ ফনী ভূষণ তাফু, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হিতেষ শর্মা ও মতলব উত্তর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। সভায় বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পূজা পরিষদ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এ বছর ৯টি পূজা মণ্ডপ বৃদ্ধি পেয়ে জেলায় সর্বমোট ২১১টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ২টি পূজামণ্ডপ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৩৪টি পূজামণ্ডপ, কচুয়া উপজেলায় ২টি বেড়ে মোট ৪১টি, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ৩টি বেড়ে মোট ৩৫টি, মতলব উত্তর উপজেলায় ১টি বেড়ে ৩০টি, হাজীগঞ্জে ১টি বেড়ে মোট ২৮টি, হাইমচর উপজেলায় ৬টি, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২০টি এবং শাহরাস্তি উপজেলায় ১৭টি পূজামণ্ডপে দেবী বরণের জন্যে পূজারীগণ প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। জেলা প্রশাসক পূজারীদের সহযোগিতায় প্রতি পূজামণ্ডপে জিআর চাল প্রদান করা হবে বলে জানান।
সভায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আজান ও নামাজের সময় মাইক, বাদ্য-বাজনা বন্ধ রাখা, স্ব স্ব পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রাখা, সার্বক্ষণিক আলোর নিশ্চয়তায় পূজামণ্ডপে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা, পূজামণ্ডপের দৃশ্যমান স্থানে পুলিশ প্রশাসন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় মোবাইল নাম্বার সমূহ টানিয়ে রাখা, পূজার শালীনতা ভঙ্গ হয় এমন ধরনের নৃত্য-গান পরিহার করা, পূজামণ্ডপে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা যাতায়তের পথ রাখা, বিজয়ার সমাবেশ বা শোভাযাত্রা বের না করা প্রমুখ।