প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:১৬
চাঁদপুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব
চাঁদপুরেও বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাম্বলীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। রোববার সকালে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে। পরে বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে গত ৯ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। পরবর্তী ৫দিন চাঁদপুরসহ দেশব্যাপী পূজা মণ্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শেষ হয়। এ বছর দেবী দুর্গার আগমন হয় দোলায় বা পালকিতে চড়ে। দেবীর এই আগমনের ফলাফল হবে মড়ক, যা শুভ ইঙ্গিত নয়। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্র মতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল ছত্রভঙ্গ হয়। শাস্ত্রমতে এই ঘোটকে গমন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খল অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। এটি যুদ্ধ বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি আসবেন এই ধরণীতে, যা তার বাবার গৃহ। প্রতিমা বিসর্জনের জন্যে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিদায়ের করুণ ছোঁয়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীতে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা । প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে শহরের নতুনবাজার ও পুরাণবাজারের বিভিন্ন রাস্তায় এবং বিসর্জন স্থানে পুলিশের টহল ও নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে। এদিকে বিকেলে চাঁদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদ এবং শহর ও গ্রামের সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়াতেই ভক্তরা বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন নদীর পাড়ে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানে শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। প্রতিমা বিসর্জন পর্ব চাঁদপুর পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে রোববার (১৩ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৪-এর প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম। এ সময় চাঁদপুর সেনা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চাঁদপুর সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চাঁদপুর জেলার সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার জয়সহ অন্য নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।