প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা আইল্লার বিল এলাকায় ॥ জনদুর্ভোগ চরমে
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় আইল্লার বিল এলাকার বেশ ক’টি বাড়ি-ঘরে। ফলে বসবাসরত মানুষের মাঝে দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ। গতকাল ১৯ সেপ্টেম্বর টানা বৃষ্টির ফলে শহর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চলের অনেক বাড়ি-ঘরেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। প্রবল বর্ষণের কারণে বাড়ি-ঘরের উঠোনসহ পুকুর, নালা, ডোবা, খাল-বিল অনেকটাই পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অনেক পুকুরের মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় অনেকেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। তবে এ সকল এলাকার পানির জলাবদ্ধতা তেমন স্থায়ী হতে দেখা যায় না, বৃষ্টি কমলেই তা ধীরে ধীরে নদীতে নেমে যায়। কিন্তু পুরাণবাজার এলাকার আইল্লার বিলের চিত্র একটু ব্যতিক্রম হয়েই দেখা দেয়।
|আরো খবর
গতকাল আইল্লার বিল এলাকার কয়েকটি বাড়ি-ঘরে গিয়ে দেখা গেল বসবাসরত মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ। তাদের বাড়িঘর বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ। জলমগ্ন বাড়ির আঙ্গিনায় বসে জমে যাওয়া বৃষ্টির পানিতেই ধোয়া-মোছার কাজ করছেন নারীরা। রান্না-খাওয়ার কাজ করছেন খাটের উপর। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অনেকটাই পানিতে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে এদিক-সেদিক। তবে তাদের এমন পরিস্থিতি এখন অনেকটাই অন্ধের ঢেঁকি গিলার মত অবস্থা। বহুবার সমস্যা নিরসনের জন্যে এলাকার কাউন্সিলরের কাছে গিয়েও সমস্যার সমাধান পায়নি। বার বারই আশ্বাসের বাণী শুনে ফিরে এসেছেন বাড়ি-ঘরে। আর বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে নীরবে নিভৃতে তা মেনে নিয়েছেন বিধাতাকে দোষারোপ করে।
চাঁদপুর কণ্ঠকে জলাবদ্ধতার কথা জানাতে গিয়ে অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ষাটোর্র্ধ্ব বৃদ্ধ রাজ্জাক ছৈয়াল। তিনি বলেন, আজ অনেক বছর ধরে এখানে বাস করছি। ছেলে-মেয়ে এস্থানেই বড় হয়েছে। তখন এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিতো না, বাড়ি-ঘরে জমা হতো না বৃষ্টির পানি, বর্ষার সময়ও ঘর-দরজা থাকতো পানির হাত থেকে অনেকটা নিরাপদ। বৃষ্টি বা জোয়ারের পানি অনায়াসে নেমে যেত পুকুর বা ডোবায়। কিন্তু বর্তমান সময় এসব পানি আর নামতে না পারায় আমাদেরকে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হয়। সামান্য বৃষ্টি আসলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ভাত-তরকারিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে রাখতে হয় খাটের উপর।
একই কথা বললেন এলাকার বাসিন্দা দরবেশ। তিনি জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই অত্র এলাকার অনেক ঘরের বাসিন্দারা বৃষ্টির পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। তাদের বাড়ি-ঘর হয়ে পড়ে পানিবন্দি। জোয়ারের পানি ভাটার টানে নেমে গেলেও আমাদের বাড়ি-ঘরের পানি নামার মত তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে জমে থাকা পানিই আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা অনেকবার পৌর কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছি, কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা বলেছিলাম কয়েকটি পাইপের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু তা নিরসনে কেউ এগিয়ে আসেনি।
একই অবস্থা মহেন্দ্র সাহার বাড়িসহ আরো কয়েকটি বাড়ি-ঘরের। এ সকল বাড়ি-ঘরের মানুষকে বৃষ্টি হলেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জুতা-মোজা হাতে নিয়ে খালি পায়ে বৃষ্টির পানির মধ্যে দিয়েই চলাচল করতে হয়। আগে এ সকল বাড়ি-ঘরের পানি পার্শ্ববর্তী পুকুরে নেমে গেলেও বর্তমান সময়ে সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র ছিদ্দিকুর ররহমান ঢালীর বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে থাকা পুকুর, মহেন্দ্র সাহার বাড়ির পুকুর, আইল্লার বিলসহ খালের দক্ষিণ পাড়ের অনেক পুকুর, ডোবা, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাড়ি-ঘরের পানি এখন আর তেমনভাবে নামতে পারছে না। ফলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। বেড়ে যায় মানুষের চরম দুর্ভোগ। পৌর মেয়রসহ এলাকার কাউন্সিলর বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক সমস্যার সমাধান করবেন-এমনটাই দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।