বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

দুই বরাদ্দেও কাজ হয়নি ৫শ’ ফুট সড়কের

ভোগান্তিতে হাসপাতাল, ভূমি অফিসের সেবাগ্রহীতা সহ স্কুল শিক্ষার্থীরা

কামরুজ্জামান টুটুল ॥
দুই বরাদ্দেও কাজ হয়নি ৫শ’ ফুট সড়কের

পর পর দুটি বরাদ্দ আসার পরেও সড়ক পাকাকরণ বা ইট বিছানোর কাজ আর হয়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাতায়াতকারী সকল রোগী ও ভূমি অফিসে আগত সেবাগ্রহীতারা। এছাড়া স্থানীয়দের ভোগান্তির শেষ নেই বললেই চলে। এতো সব ভোগান্তির মূল কারণ কাঁচা মাটির রাস্তাসহ রাস্তার মুখের একটি স’মিলকে দায়ী করছেন সড়কে চলাচলকারী সর্বস্তরের লোকজন। সড়কটি হাজীগঞ্জের কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর পূর্ব বাজারে হাসপাতাল সড়ক হিসেবে পরিচিত।

সরজমিনে দেখা যায়, রামপুর বাজারের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও আল-বান্না মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থান। সরকারি দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিয়নের একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। আর এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা হলো হাসপাতাল সড়কটি। সড়কের মুখে থাকা স’মিলের গাছের গুঁড়ি জমিয়ে রাখার কারণে সড়কের মাঝখানে কাদা পানি জমে থাকে। এই কাদা পানি ডিঙ্গিয়ে আল বান্না মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সাড়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা গর্ভবতী মা, বয়স্ক নারী ও শিশুসহ প্রতিদিন ৬০-৭০ জন রোগী, তাদের স্বজন এবং চিকিৎসক ও কর্মচারী, ভূমি অফিসে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা ১৫-২০ জন সেবাগ্রহীতা ও দর্শনার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মৈশাইদ গ্রামের একাংশসহ প্রতিদিন হাজরেরও বেশি মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলাচল করে থাকেন। এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয়রা দেখছেন সড়কের মুখের বিসমিল্লাহ স’মিল এন্ড ফার্নিচার হাউজকে।

সরজমিনে গেলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, স’মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছ এনে রাস্তার দু পাশে ফেলে স্তূপ করে রাখে। ফলে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া ট্রাক, ট্রলি ও ভ্যান স’মিলের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থামিয়ে গাছ ওঠানামা করায় চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এতে স্কুলের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালে আসা রোগীসহ সাধারণ পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। বছরজুড়ে সড়কের দুপাশে গাছের স্তূপ থাকা এবং গাড়ি থেকে গাছ লোড ও আনলোড করার কারণে কাঁচা সড়কটির সম্মুখে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আর ওই খানাখন্দে পানি জমে গর্তের সৃষ্টি ও মাটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে আল-বান্না মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিতু আক্তার, তাসনিম সুলতানা, সামিয়া সুলতানা ও মুনতাহাসহ অন্যরা জানান, বিদ্যালয়ে আসার পথে স’মিলের সামনে সবসময় তাদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়াও সড়কটি কাঁচা হওয়ায় বর্ষাকালে পা পিছলে পড়ে প্রায় কোনো না কোনো শিক্ষার্থী আহত হন এবং তাদের পরনের পোশাকসহ বই, খাতা ও ব্যাগ নোংরা হয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহাজাহান বলেন, সড়কটি দ্রুত পাকা করা দরকার। দুইবার বরাদ্দ এসেছে, কিন্তু কাজ এক বরাদ্দেও হয়নি।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অফিস সহকারী ফরিদা আক্তার জানান, এখানে প্রতিদিন ৬০/৭০জন রোগী সেবা নিতে আসেন। এর মধ্যে নিয়মিত চেকআপের জন্যে ৪/৫ জন এবং ডেলিভারির জন্যে ২/১ জন গর্ভবর্তী মা আসা-যাওয়া করেন। এতে গর্ভবর্তী মায়েদের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় দেখা গেছে, গর্ভবতী মা, শিশুসহ বয়স্ক রোগীদের কোলে তুলে হাসপাতালে আনা-নেয়া করতে হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, একই স্থানে দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ও একটি বিদ্যালয় রয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটি পাকা হওয়া জরুরি।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সবার যেমন, আমাদেরও তেমন। বিশেষ করে বর্ষাকালে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তাটি পাকা হলে সবার জন্য উপকার হবে।

এ বিষয়ে বিসমিল্লাহ স’মিল এন্ড ফার্নিচার হাউজের মালিক মোঃ আমির হোসেন বলেন, স’মিলের সামনে পানি জমে থাকলে সবসময় আমি ড্রেন করে পানি অপসারণ করে দেই। এছাড়াও ২/৩ বছর আগে আমি চার ট্রাক ইট-বালি ফেলে রাস্তাটি চলাচলের উপযুক্ত করে দেই। যদিও এই দুই বছর রাস্তায় ইট-বালি ফেলা হয়নি। রাস্তা তো শুধু আমার কারণে ক্ষতি হয়নি। এই সড়ক ব্যবহার করে যারা বিল্ডিং (ভবন) করার জন্যে ইট, বালু, রড, সিমেন্ট নিয়েছেন, তাদের কারণেও রাস্তার ক্ষতি হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, রাস্তাটি পাকাকরণের জন্যে উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। পরে এলজিইডি থেকে সম্পূর্ণ রাস্তাটি পিচ ঢালাইয়ের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে উন্নয়ন তহবিলের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কাজটি আর হয়নি।

অপর এক প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, স’মিলের কারণেও মানুষের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাস্তা পাকাকরণের বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থাপন করবো।

উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার পর আমি স’মিলের মালিকের সাথে কথা বলেছি। তিনি রাস্তা খানাখন্দের কথা স্বীকারও করেছেন। আমি তাকে নির্দেশনা দিয়েছি, স’মিলের কারণে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে সংস্কার করে দিতে হবে। আর তিনি যদি রাস্তাটি সংস্কার না করে দেন, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক তাপস শীল বলেন, রাস্তাটি জনগুরুত্বপূর্ণ। যদি স’মিলের কারণে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত এবং শিক্ষার্থী, সেবাগ্রহীতা ও জনসাধারণের চলাচলের বিঘ্ন ঘটে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়