প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর শহরে অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপক সংঘর্ষ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ
সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মানিকের বাসা, সড়ক ভবন, ভূমি অফিস, বিদ্যুৎ অফিস, পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অফিস, বিভিন্নজনের বাসা ও অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত ॥ পুলিশ ও সাংবাদিকসহ আহত একশ’
চাঁদপুর শহর এলাকায় অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে গতকাল রোববার ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। আর সাংবাদিক, পুলিশ সহ একশ’ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ২৪জন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় রয়েছেন। এদের মধ্যে ২ জনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। এ সংবাদ লিখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৯টা) প্রায় ৭৫ জন আহত ব্যক্তি এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন : চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শেখ মুহসীন আলম, পুলিশের এসআই সেলিম, ডিবির ফরহাদ, দীপ্ত টিভির সাংবাদিক ইব্রাহিম রনি, নারী শিক্ষার্থী সুমাইয়া (১৭), শিশির (২২), মোতাহের (৫০), সুমন (৪২), শামীম (২৬), তানভীর (১৮), মাহমুদুল হাসান (২০), জাহিদ (১৯), রাসেল (৪৭), শামীম (২২), পৌর ছাত্রলীগের নেতা আশেকে রাসুল যাওয়াদ ও আরাফাত সানি, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আল হেলাল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম, আসমা, নাহিদ, দুলাল, ইসরাত, মীম, শাহনারা, সাহীন, মাহিন, হাসান, আমান, দীন ইসলাম, নাজমুল, সুমন, সুমাইয়া আক্তার, আনিকা, জেলিন, মোতাহের, আবুল হোসেন, রাবেয়া, জাওয়াত, শিশির, মাহমুদুল হাসান, সিহাবুল হাসান করিম, জিসান, কুলসুমা, আরাফাত, হারুন, আলাউদ্দিন, রুমি বেগম, মালেক, সবুজ, ওচমান গণি, ফাইজা, অনিক, তানভির, নিলয়, তানভির, শামীম, মিরাজ, শামীম, জাহিদ, মোঃ রাসেল, মোঃ রমজান, ইউসুফ, ইয়ামিন, মোঃ ইউছুফ, আলী আকবর, মিহরাজ, সিয়াম, রমজানি বেগম, রাসেল, হাবিব, অমিত, নোলক, নাছির, তানহা, ফাতেমা, নাজমা, ওসামা, আমেনা, তসাফিয়া, সাদিক, ফয়সাল, মহসিন, টিপু, ইব্রাহিম রনি, রুবেল, স্বপন, বাবু, রাজন মজুমদার, সুমন, জুম্মান, রাসেল, প্রিতম, আরফান, ফয়েজ উল্লাহ বেপারী, ফারুক, আনাছ, পারভেজ, আরাফাত, সোহেল, সেলিম, জোবায়ের, হৃদয়, রাজু, মোরশেদ, আদনান, সিয়াম, তারিফ, শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্বপন প্রমুখ। পুলিশের ৪ নারী সদস্যসহ ৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন : এসআই সেলিম, কনস্টেবল ওবায়েদ উল্লাহ (২৫), লাভলী (২৮), আমেনা (২২), রুপা (২২) ও লাভনী বড়ুয়া (২৬)। হাসপাতালের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তাদের। অন্য আহতরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। চাঁদপুরে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রোববার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডের ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্স এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ইলিশ চত্বর, স্টেডিয়াম রোড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড এলাকা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনটার পর পাল্টা আক্রমণ ও ধাওয়া করে ওই এলাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়ক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় সরকার বিরোধী আন্দোলনকারীরা। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদপুর সড়ক ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও ভূমি অফিসে হামলা-ভাংচুর ও আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনস্থ পুলিশ বক্সে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মার্কেটে থাকা একাত্তর টিভি কার্যালয়, ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কার্যালয়, চাঁদপুর স্টেডিয়ামে নতুন প্যাভিলিয়নে হামলা ও ভাংচুর চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে চাঁদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডস্থ কদমতলার বাড়িতে। এ বাড়ির নিচতলায় কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, নিচতলায় অবস্থিত ডাঃ দীপু মনির বড় ভাই ডাঃ জে.আর. ওয়াদুদ টিপুর মালিকানাধীন জিম সেন্টারসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানে, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, নূতনবাজারস্থ বিদ্যুৎ অফিস ও যুবলীগ নেতা আবু পাটওয়ারীর কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহির পাটওয়ারীর বাসা এবং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জহির উদ্দিন মিয়াজীর অফিস ভাংচুরের অভিযোগ রয়েছে। তারা মিশন রোড এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এমন সহিংসতার বিপরীতে পাল্টা হামলায় জেলা বিএনপি কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সংবাদ লিখা পর্যন্ত শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিভানোর কাজ করছিলো বলে জানা যায়।
পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে একাত্তর টিভির কার্যালয় ভাংচুরের সময় সেখানে অবস্থানরত এনটিভির জেলা প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম, একাত্তর টিভির জেলা প্রতিনিধি আল-আমিন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান বাবলু, দীপ্ত টিভির জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম রনি, ঢাকা টাইমসের জেলা প্রতিনিধি মাজহারুল ইসলাম অনিক, দৈনিক ইল্শেপাড় পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এসএম সোহেল, সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন নিরবও কম-বেশি হামলার শিকার হন। তবে এদের মধ্যে ইব্রাহীম রনি গুরুতর আহত হন। আর আওয়ামী লীগের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষের সময় বেশকিছু নারী শিক্ষার্থী ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সে আটকা পড়ে ও অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলো।
সারাদিন সংঘর্ষ ও ভাংচুর চলাকালে টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। কোথাও কোথাও আবার পুলিশের অনুপস্থিতিও দেখা গেছে।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে জেলা থানা ও ডিবির বিপুল সংখ্যক পুলিশ সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য রাজপথে সক্রিয় ছিলেন।
পুরো শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সকালের পর থেকে যানবাহন চলাচল কমে আসে। দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। ট্রেন চালাচলও বন্ধ ছিল। লঞ্চ চলাচল করলেও যাত্রী ছিল না। শহরের দোকান অধিকাংশ দোকানপাট মার্কেট ছিল বন্ধ। সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে।