প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা-৭
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নাতি-নাতনিসহ তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে
---------------------------শেখ মহিউদ্দিন রাসেল
চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর গুনরাজদী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক মরহুম শেখ মুজাফফর আলীর কনিষ্ঠ সন্তান শেখ মহিউদ্দিন রাসেল চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ এবং সংগঠিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় তার বাবার বন্ধু ছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুবেদার আঃ রব, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ মমিন খান মাখন, হানিফ পাটওয়ারী, জহিরুল ইসলামসহ অনেকে।
মহান বিজয়ের মাসে চাঁদপুরের শীর্ষ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে শেখ মহিউদ্দিন রাসেল বলেছেন নিজের কথা, তার বাবার কথা এবং জাতির প্রতি আমাদের কর্তব্য কী হওয়া উচিত সেটি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবা (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)-এর নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় কী? তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : শেখ মুজাফফর আলী চাঁদপুর সদরের গুণরাজদী গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পিতা আব্বাছ আলী শেখ, মা মরিয়ম বেগম। আমার বাবা ছিলেন একাধারে ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত আমার বাবার মনে প্রবল আলোড়ন তৈরি করতো। তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদণ্ডহিন্দ ফৌজে যোগ দেন। ভাষা আন্দোলনের সময় চাঁদপুরে সক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া ভাষা আন্দোলনের মিছিলে তিনি রাজপথে ছিলেন।
বাবা রাজনীতি করতেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগের জেলা, উপজেলা, মহকুমাসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ও সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে তিনি সেনাবাহিনীতে ও পরে কাস্টমস্-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি বহু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এই কর্মবীর ২০১১ সালের ১৬ জুন বিকেল ৩টায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তিনি ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজার, টুবগি, বাখরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থাৎ শেখ মুজাফফর আলীর সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কারণেই আজকের বাংলাদেশ। আজকের স্বাধীনতা। আমি আজকে স্মরণ করতে চাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আমার পিতা সহ জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দেশকে মুক্ত করেছিলেন। আমরা পেয়েছি এক স্বাধীন বাংলাদেশ। সেসব মুক্তিযোদ্ধা ও সকল শহীদের আমি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তারা মরেননি। তারা আজ বাংলার বুকে চির অমর হয়ে আছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আপনার করণীয় কী কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল : মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলেন ছিল একটি স্বাধীন, সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে। তাদের সেই স্বপ্ন আমাদের দ্বারাই পূরণ হবে। আগামী প্রজন্ম তা বাস্তবায়ন করবে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। এখন আমরা তাদের বাকি কাজটুকু করে বাংলাদেশকে অন্যায় ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের দেয়া লাল সবুজের পতাকার মান সমুন্নত রাখতে হবে। বর্তমান সরকার স্বাধীনতার সপক্ষের সরকার। এ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বিশ হাজার টাকা করেছে। ঈদ বোনাস, ঘর নির্মাণ, লোন প্রদান, চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সহ সকল ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের প্রাধান্য দিয়েছে। এক কথায় বুঝিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ আর মুক্তিযোদ্ধা মানেই সম্মান ও শ্রদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধার একজন সন্তান হিসেবে আমি বলবো, বীর মুক্তিযোদ্ধারা পূর্বে অবহেলিত ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা যথেষ্ট সম্মান পাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে আমরা সন্তানরা বদ্ধপরিকর। মুক্তিযোদ্ধারা একে একে চলে যাচ্ছেন। চিরকাল বেঁচে থাকবেন না। এক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নাতি-নাতনিসহ তাদের প্রজন্মকেও সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে।
শেখ মহিউদ্দিন রাসেল একজন লেখক, সংগঠক ও সাহিত্যিক। তিনি নিয়মিত কলাম, ফিচার লিখেন। তিনি চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নিরাপদ সড়ক চাই চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, এপেক্স ক্লাব অব চাঁদপুরের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন।