প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
নানা জটিলতায় এক বছর ধরে চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা করেও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যদিও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু এলসি সংক্রান্ত জটিলায় তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে এক বছর যাবত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে আছে। এ সব তথ্য জানালেন চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাঃ প্রকৌশলী) মোহাম্মদ নূরুল আবছার।
এদিকে এক বছর যাবত বন্ধ হয়ে থাকা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি-মেশিন বলতে গেলে নষ্ট হওয়ার পথে। আর এর জন্যে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলাকে দায়ী করলেন চাঁদপুরের সচেতন মহল।
২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করে চায়না চেংদা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর পর ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দিকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও গ্যাসনির্ভর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়মিতভাবে ১৬০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছিলো। কিন্তু দিন দিন গ্যাস সংকটসহ বড় বড় যন্ত্রপাতি ও মেশিন অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাঃ প্রকৌশলী) মোহাম্মদ নূরুল আবছার বলেন, মূলত ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর বন্ধ হয় এখানের দুটি ইউনিট। একটি ৫০, আরেকটি ১০০ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের পরে ৭ ফেব্রুয়ারি চালু করার জন্যে উদ্যোগ নিই। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে গ্যাস বুস্টারটি চালু না হওয়ায় আমরা আর চালু করতে পারিনি। সে গ্যাস বুস্টারটি আমরা দেশীয় লোকবল এবং দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করে চালু করার চেষ্টা করি। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় এটি ভেতরগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা সমস্যা সমাধান করার জন্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া গ্রহণ করে সম্পন্ন করি। প্ল্যান ছিলো গ্যাস বুস্টারটি সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করে নভেম্বরের ১৫ তারিখ চালু করবো। কিন্তু এলসি-সংক্রান্ত জটিলতায় আমরা পিছিয়ে পড়ি। ব্যাংকের আর্থিক যে কার্যক্রম সেগুলো একটু বেশি সময় লাগায় আমাদের প্ল্যানমত এগোতে পারিনি। তবে বর্তমানে এলসি-সংক্রান্ত কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। আমরা আশা করি ডিসেম্বর মাসের ২০-২১ তারিখ চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে মালামাল স্টোরে পৌঁছবে। এরপর ৩ সপ্তাহ অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে গ্যাস বুস্টারের কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করতে পারবো বলে আমরা আশা করি।
এদিকে দীর্ঘদিন এক বছর চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্যে নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা বলেন, সরকারের বিশাল অর্থের বিনিময়ে চাঁদপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এটি এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। আমি মনে করি, এটির জন্যে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের দায়িত্বে চরম অবহেলা রয়েছে। এভাবে অব্যবস্থাপনায় পড়ে রয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এক বছর ধরে বন্ধ থাকায় মেশিন ও যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। এর জন্যে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অচিরেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বাংলাদেশের তথ্যমতে, চাঁদপুর জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৮৫ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদানুযায়ী সরবরাহ হচ্ছে ১৪৫ মেগাওয়াট। মূলত চাঁদপুর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। আর গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২। এসবের মধ্যে চাঁদপুর গ্রিডে চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ৯০ মেগাওয়াট এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর ৫৪ মেগাওয়াট। তবে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সংকট থাকায় চাঁদপুরে চাহিদার তুলনায় মাত্র ৫০% বিদ্যুৎ পাচ্ছে গ্রাহকরা। যার কারণে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং হয়ে থাকে।