বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

শোকে-সংগ্রামে বাঙলির আগস্ট

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

শোকে-সংগ্রামে বাঙলির আগস্ট
অনলাইন ডেস্ক

শোকের আগস্ট যেমন বেদনা-বিধুরতা নিয়ে আসে তেমনি আগস্ট আমাদের বিসর্জনের মন্ত্রে দীক্ষিত করে তোলে। রক্তক্ষরণের আগস্টে পুলিশ বাহিনীর যে বীর সদস্য জাতির পিতার জীবন রক্ষায় বিসর্জনের মন্ত্রে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি কুমিল্লার সিংহ-সন্তান পুলিশের তৎকালীন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই সিদ্দিকুর রহমান। পুলিশের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক অম্লমধুর। রাজপথে আন্দোলনকালে পুলিশের তাড়া খেয়ে একবার তিনি নিজেকে আড়াল করতে গিয়ে তাঁর পায়ের গোড়ালিতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সেবার তাঁকে ভাইয়ের মতো জানতেন যিনি, সেই মহীয়সী নূরজাহানের সেবায় তিনি আরোগ্য হয়ে ওঠেন। বায়ান্ন সালে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে গোপালগঞ্জ জেলে নেওয়ার সময় রাতে তিনি লঞ্চের ডেকে বের হয়ে নদী ও চাঁদের সৌন্দর্য দেখছিলেন। তাঁকে পাহারা দিতে দুই পুলিশ সদস্য সেই রাতে লঞ্চের ডেকে অবস্থান করছিলেন। বঙ্গবন্ধু পুলিশকে অভয় দিয়ে বলেন, যান, আপনারা ঘুমোন। ভয় নেই আমি পালিয়ে যাবো না। পুলিশ সদস্যরা হেসে দিয়ে বললেন, জানি আপনি পালাবেন না।

পুলিশ সম্পর্কিত বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হয় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সার্জেন্ট মি. গজের সাথে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু যোগদানের আগে, কিন্তু মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই ঢাকার চকবাজার এলাকায় জেল সিপাহিদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জেল সিপাহিরা গুলি করে। এতে একজন মারা যায়, আহত হয় অনেকে। গোলাগুলির কথা শুনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বঙ্গবন্ধু ওই এলাকার বাসিন্দা জনাব আতাউর রহমান খানকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরবর্তীকালে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়াও ঘটনাস্থলে আসেন। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ ছিলো ঢাকা জেলের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সার্জেন্ট মি. গজ নিজেই গুলি চালিয়েছিলেন এবং তারা মি. গজের বিচার দাবি করেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা চকবাজার এলাকায় মি. গজের বাড়ি আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু উপস্থিত মন্ত্রী, অন্যান্য নেতা ও সরকারি কর্মচারীদের অনুরোধে মি. গজের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবাইকে শান্ত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর পুলিশের তৎকালীন আইজি দোহা কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ফেলে বলেন, ‘আপনি গ্রেপ্তার’। বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন, ‘খুব ভালো’। জনতার চিৎকারে ও প্রতিবাদে আইজিপি বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীকালে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে ওই ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন করা হয় যাতে মি. গজের মেয়ে বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক পুলিশ সদস্যের একটি ছবি রয়েছে, যা বহুল প্রচারিত। এতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ঘরোয়া পরিবেশে তাঁর বাসভবনে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আদর করে, আর যাকে টেনে নিচ্ছিলেন, সেই পুলিশ সদস্য হাসি ও আড়ষ্টতায় সমীহ ভাব নিয়ে চলছিলেন তাঁর পিছু পিছু। ছবিটির যে ঘটনা, তা ছিলো এমন, সেদিন সকালে বঙ্গবন্ধু ওই পুলিশ সদস্যকে তাঁর সাথে নাশতা খেতে ডাকছিলেন কারণ তাঁর ভাষ্যে আমরা জানতে পারি, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীকে বলেছেন, ‘কামালের মা আজ মুরগির মাংস রান্না করেছে, আয় একসাথে খাবো।’ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের সাথে বঙ্গবন্ধুর এ রকম ছবি আমাদের উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করে বার বার। মানুষকে ভালোবাসার অপার শক্তি ছিলো বঙ্গবন্ধুর। এই ভালোবাসাই তাঁকে পরিণত করেছে যাদুকরী নেতৃত্বের মন ভরানো ব্যক্তিত্বে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়