চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৫ মে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল বিগত সভার কার্যবিবরণী পর্যালোচনা ও অনুমোদন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন, নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা পর্যালোচনা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জাটকা অভিযান প্রসঙ্গ, মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধ, বাজার মনিটরিং, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং, গ্রাম আদালত কার্যক্রম, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ও গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিবিধ।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। তবে আরো ভালো করতে হবে এবং এই ভালো ধরে রাখতে হবে। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সভার শুরুতে বিগত মাসের সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা।

বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, এনএসআই’র উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম মাহবুব উল আলম লিপন, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএইচ কবির আহমেদ, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হাসান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এমদাদুল ইসলাম মিঠুন প্রমুখ।

সভায় জানানো হয়, চাঁদপুর জেলা অধিক ক্ষেত্রে বিগত মাসের চেয়ে এ মাসে অপরাধ ও মামলা কম হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবার জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি গেলো বছরের চেয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারাই নদীতে গেছে তাদের ১০৩৫ জনকে আটক হয়ে জেলে যেতে হয়েছে এবং ১৫৯টি মামলা হয়েছে। ২০০টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়। এছাড়া বিপুল পরিমাণ জাল, জাটকার চালান ধরা পড়ে। যা বিগত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। জাটকা রক্ষায় সরকার দেশের নদ-নদীতে পাঁচটি অঞ্চলে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলায় তিনটি। এখানে অন্য জেলার জেলেরাও মাছ ধরতে আসে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবার জাটকা অভিযান সফল হয়েছে।

অন্যান্য অপরাধের মধ্যে অনেক অপরাধই কম ছিলো। গেলো মাসে তিনটি খুনের ঘটনা রয়েছে। এসব নিয়ে পুলিশ কাজ করছে এবং এর সাথে জড়িত অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। প্রতিনিয়ত মাদক উদ্ধার অভিযান চলছে। বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ এবং এর সাথে জড়িতরা ধরা পড়ছে। প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সাধারণ রোগীরা যাতে প্রতারিত বা অপচিকিৎসার শিকার না হন এবং অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা না ঘটে সেই লক্ষ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ মনিটরিং জোরদার করবে এবং যেসব হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডিউটি ডাক্তার, প্রশিক্ষিত নার্স ও টেকনিশিয়ান থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের বিধি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সভায় আরো জানানো হয়, জেলা পুলিশ মাদক, কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাসসহ যেকোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রবণতা রোধে বাজার মনিটরিং জোরদার ও নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

এছাড়া প্রতারক চক্র থেকে সাধারণ মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। সরকারি অফিস বা অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যাতে জনসাধারণকে প্রতারিত এবং টাকাণ্ডপয়সা হাতিয়ে নিতে না পারে এ ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য সভা থেকে বলা হয়েছে। বিশেষ করে কারো কথায় প্রলুব্ধ হয়ে বা লোভে পড়ে প্রতারিত না হতে মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।

সভায় কমিটির সদস্য, ৮টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, জেল সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভাশেষে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক উপস্থিত সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানান এবং আইনশৃঙ্খলা আরো ভালো রাখার ব্যাপারে তাগিদ দেন।