প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
ফুরিয়ে যাচ্ছে লকডাউনের সময়সীমা, কাল থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এতে কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। সে সকল শর্ত মেনে আগামীকাল ১১ আগস্ট বুধবার থেকে খোলা থাকবে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। চলবে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক খোলা থাকবে শপিংমল ও বাজার। চালু থাকবে সকল প্রকার শিল্প কলকারখানা, অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ। কঠোর লকডাউন শেষ হবার সময়সীমা যত ঘনিয়ে আসছে ততই নমনীয় হয়ে পড়ছে লকডাউন মানার প্রবণতা। এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে দেশের সর্বত্র। গতকাল চাঁদপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন চিত্র দেখা যায় শহরের। বিগত দিনে লকডাউন কার্যকরে যেভাবে প্রশাসনের নজরদারি ছিল, গতকাল তা সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। সবধরনের কঠোরতায় ছিল অনেকটা নমনীয় ভাব। গতকাল শহরের বড় বড় বিপণী বিতানগুলোসহ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে দেখা গেলেও ছোট ছোট অধিকাংশ দোকানপাট আড়ালে আবডালে খোলা রাখতে চেষ্টা করা হয়েছে। বড় ধরনের যানবাহন চলাচল না করলেও ছোট যানবাহন সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইক চলাচল করেছে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে।
লকডাউনের প্রথমদিকে প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগণ যেভাবে লকডাউনের বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কঠোরতা অবলম্বন করেছিলো, তেমন করে কঠোরতা আর চোখ পড়েনি আগস্টের ১ তারিখের পর থেকে। এমনটাই মনে করেছেন সচেতন মহল। চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নতুনবাজারে লকডাউনের কঠোরতা চোখে পড়লেও ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র পুরাণবাজারে তার ছিল উল্টো চিত্র। পুরাণবাজারে প্রথম দিকে লকডাউনের কঠোরতা বাস্তবায়য়িত হলেও ৩/৪ দিন পর তা ধীরে ধীরে পূর্বের অবস্থানে চলে আসে। এ স্থানে অটো, সিএনজি চলাচলে কঠোরতা থাকলেও সব ধরনের দোকানপাট ছিল খোলা। তবে লোহারপুল চত্বরে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও পুরাণবাজারের বাজার এলাকায় ছিল সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। ফলে নতুনবাজার ব্যবসায়ীরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তা তেমনভাবে প্রকাশ পায়নি।
আজ চলমান লকডাউনের ১৮তম দিন। এরপরই ফুরিয়ে যাবে দীর্ঘ সময়ের চলমান লকডাউনের সময়সীমা। প্রায় ১৭ মাস পূর্বে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তা থেকে নিস্তার পাওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে লকডাউন দেয়া হলেও এবারের লকডাউনের সময়সীমা ছিল সর্বাধিক। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে, বৈশ্বিক মহামারী করোনার ভয়াবহতা থেকে মানুষের স্বাভাবিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার ঈদুল আজহার এক দিন পর অর্থাৎ গত ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে এবং তা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ মাঠে নামেন এবং কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লকডাউন কার্যকরে মানুষকে জরিমানাও করা হয়। প্রথমদিকে দীর্ঘ ১৪ দিনব্যাপী কঠোর লকডাউন চলাকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতার কারণে মানুষের মাঝে লকডাউন মানার একটা প্রবণতাও দেখা দেয়। এ সময় অনেকেই মাস্ক পরায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু গত ১ আগস্ট সরকার কিছু শর্তসাপেক্ষে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীসহ কল-কারখানা খুলে দেয়ায় কঠোর লকডাউনে ধস নামে। মিল কারখানার দোয়াই দিয়ে এ সময় অনেকেই রাস্তায় নেমে পড়েন। দেখা দেয় কঠোর লকডাউনে অনেকটা স্থবিরতা। সুযোগমত চলতে থাকে সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইকসহ মোটরচালিত ছোট ছোট যানবাহন। অবাধে বেড়ে যায় মানুষের চলাচল। এ সময় দেখা যায়নি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। ভেঙ্গে পড়ে দীর্ঘসময়ের কঠোর লকডউনের কঠোরতা। প্রথম দিকে লকডাউনের মেয়াদ ১৪দিন থাকলেও পরবর্তী সময় তা আরো ৫দিন বেড়ে গিয়ে ১৯ দিনে পরিণত হয়। বলবৎ করা হয় ১০ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের সময়সীমা।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এবারই ছিল দীর্ঘদিনের কঠোর লকডাউন। আর এই কঠোর লকডাউনের সময়সীমা ফুরিয়ে যাবে আজ ১০ আগস্ট মঙ্গলবার। যদি নতুন করে কোনো ঘোষণা না আসে, তাহলে কাল ১১ আগস্ট মঙ্গলবার থেকেই রাস্তায় চলাচলে দেখা যাবে স্বাভাবিকতা। আটকে পড়া মানুষ ছুটবে তার নিজ গন্তব্যে। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ ছুটবে তার আপন গতিতে, স্বাভাবিক হবে জনজীবন।