প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
কাল ১১ আগস্ট বুধবার ১৪৪৩ হিজরি নববর্ষ। মহররম মাস তথা নতুন বছরের চাঁদ বুধবার থেকে গণনা শুরু। সে সুবাদে ২০ আগস্ট শুক্রবার পবিত্র আশুরা দিবস বাংলাদেশে পালিত হবে।
৮ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে হিজরী নতুন বছরের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আজ মঙ্গলবার বিদায় নিবে ১৪৪২। কাল বুধবার শুরু হবে ১৪৪৩ হিজরী। হিজরী সনের প্রথম মাস হচ্ছে মহররম মাস।
চাঁদ না দেখার খবর নিশ্চিত করেছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। রাজধানীর বায়তুল মোকাররমস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে আহূত সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
পহেলা মহররম উপলক্ষে স্কুল কলেজ এবং আশুরার দিন দেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকে। কারবালা প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসেন (রাঃ)-এর শাহাদাত এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনায় মূলত আশুরা দিবস পালিত হয়।
মহাকালের বিশাল সময়কে সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য এবং বিভিন্ন সময়ের সাথে সম্পর্কিত ইবাদতগুলো যেমন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতকে সঠিক সময়ে যথাযথভাবে পালন করার সুবিধার্থে অতীব দয়া করে আল্লাহ পাক বান্দাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন বারোটি চান্দ্র মাস। এগুলোই আরবি মাস। রোজে আযলের দিনে এ মাসগুলোরও নির্ধারণ করেছেন মহান আল্লাহপাক নিজেই। সূরা আত তাওবা’র ৩৬নং আয়াতে আল্লাহপাক এ সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট আল্লাহর বিধানে মাসসমূহের সংখ্যা বারোটি। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান’। এ বার মাসের প্রতিটিই আলাদা আলাদা মর্যাদায় পূর্ণ। এ মাস সমূহের প্রত্যেকটিরই রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, ফজিলত ও আমল।
মুহাররম মাস আরবি বছরের প্রথম মাস এবং নিষিদ্ধ চার মাসের অন্যতম। এ মাস ‘কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা’ হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর (রাঃ)-এর শাহাদাতের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। এছাড়া এ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির অসংখ্য কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ দিনে পৃথিবী এবং আসমান-জমিনের সৃষ্টি হয়। হযরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়। এ দিনই তাকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তার তওবা কবুল হয়। হজরত নূহ (আঃ)-এর সময় মহাপ্লাবনের পরে এ দিনেই জুদী পাহাড়ে তাঁর কিশতী অবস্থান করে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আগুনের কুণ্ডলী ফুল বাগানে পরিণত হয়। এদিনে হযরত মুসা (আঃ) স্বীয় কাওমসহ নীলনদ পার হন এবং সৈন্য সামন্তসহ ফেরাউনের সলিল সমাধি ঘটে। হযরত ইউনুস (আঃ)-এর তওবা কবুল হয় এবং এ তারিখেই হযরত ইব্রাহিম ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর জন্ম হয় ইত্যাদি। সবশেষে কোনো এক মহরম মাসের ১০ তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এ সকল কারণে মুহাররম মাসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বর্ণনাতীত। এ মাসে ইবাদত হিসেবে নফল রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
এই পৃথিবীতে হজরত আইয়ুব (আঃ)-এর কঠিন পীড়া থেকে মুক্তি, হজরত ঈসা (আঃ)-এর আসমানে জীবিত অবস্থায় উঠে যাওয়া এবং এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে অর্থাৎ কিয়ামত হবে মহররমের ১০ তারিখে। এমন অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে মহররমের ১০ তারিখ মহিমান্বিত ও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
উল্লেখ্য, মুহাররম মাসের আশুরাকে কেন্দ্র করে তাজিয়া মিছিল, মর্সিয়া, হাহুতাশ, আহাজারি প্রকাশ করা সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী কাজ। পক্ষান্তরে নফল নামাজ, রোজা, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দোয়া দরুদ, মিলাদ-কিয়াম, ওয়াজ নসিয়ত (জীবনী আলোচনা) করা আর্তমানবতার সেবায় গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করা শরীয়তের দৃষ্টিতে পুণ্যের কাজ। অতএব এদিনে বেদায়াতি কাজ পরিত্যাগ করতঃ নেক কাজ করে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।