প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
অব্যাহত প্রবল বর্ষণে মতলবের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। খালগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হওয়ায় এবং পাড় দখল হয়ে প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। যার কারণে এ মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, বাড়ি, রাস্তা ও মৎস্য খামার।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর থেকে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ বিষয় নিয়ে প্রতি বছর ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলগুলোতে নিউজ প্রকাশিত হলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রতি বছর সেচ প্রকল্পের ভেতর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে তাদের দাবি।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে উপজেলার হানির পাড়, কলাকান্দা, মিলারচর, দশানী, জোড়খালী, বালুর চর, মাথাভাঙ্গা, পাঁচআনী, নাউরী, হলদিয়া, লুধুয়া, শিকিরচর, ছেংগারচর, কেশাইরকান্দি, জীবগাঁও, পাঠান বাজার, ঝিনাইয়া, মরাদন, অলিপুর, নয়াকান্দি, সুজাতপুর, ঠাকুরচর, রুহিতার পাড়, বদরপুর, বাগানবাড়ি, হলুদিয়া, নিশ্চিন্তপুর, দুর্গাপুর, লবাইরকান্দি, ইসলামাবাদ, ফতেপুর, গজরা, এখলাশপুরসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকার উঁচু ও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
দেখা যায়, জলাবদ্ধতায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, বাড়ি, রাস্তা ও মৎস্য খামার। রোপা আমন ধান, বীজতলা, আখ, সবজি, ফল ও কাঠ গাছের বাগান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য খামার তলিয়ে মাছ ছড়িয়ে পড়েছে আশে পাশে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছেংগারচর বাজার এলাকায় পাউবোর খালটি একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এবার জলাবদ্ধতার কারণে আমরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে অনাবাদী থাকে কয়েক হাজার একর জমি। এভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এ সেচ প্রকল্পটি আমাদের জন্যে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, খালগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ও খালের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় পানি চলাচল করতে পারছে না। বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ফসলের জমির ক্ষতি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা না নিলে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী শরিফুল হাসান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত পাউবো কর্তৃপক্ষ সমস্যাগুলোর সমাধান করেনি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার করার জন্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে পানি নিষ্কাশন করা হবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি বলে দাবি কৃষি পরিবারগুলোর। তা না হলে মূলধন হারিয়ে কৃষকরা পথে বসবে। প্রকল্প কর্তৃৃপক্ষের পরিকল্পনায় ত্রুটি, খালগুলো দখল, আবর্জনা ও কচুরিপানা দিয়ে আবদ্ধ থাকা ও পাম্প দ্বারা দ্রুত গতিতে বৃষ্টির পানি প্রকল্পের বাইরে না সরানোর ফলে এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কারণ বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।