রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে মিরপুর চরের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে
এমকে মানিক পাঠান ॥

ফরিদগঞ্জ পৌরসভাধীন ১শ’ ১০ একর জমি নিয়ে গঠিত মিরপুর চর ইজারা সঠিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন না হওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বহিরাগতদের সহযোগিতায় একটি পক্ষ চরের নিয়ন্ত্রণ রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে। এতে করে চরের প্রকৃত জমির মালিক ও কৃষক মিলিয়ে প্রায় ৫শ’ জনতা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিকে পৌর মেয়কে অবমাননা করা হয়েছে উল্লেখ করে জাকির হোসেন বেপারী নামে জনৈক ব্যক্তি থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে বিষয়টি আরো ঘোলাটে করেছেন বলে ক্ষুব্ধ কৃষকরা জানিয়েছেন।

মিরপুর চর নিয়ে কৃষকরা বলছেন, চরে যাদের এক ইঞ্চি জায়গা নেই, অথচ সেই চরে জায়গা না থাকা একটি অসাধু চক্র চরটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে এখন হা করে বসে আছে। এ নিয়ে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে চরের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুই পক্ষের সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার কথা বলে পৌর মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী এক বছরের মেয়াদ দেখিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করেন। অপরদিকে এই কমিটি স্বঘোষিত কমিটি আখ্যা দিয়ে চরের কৃষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গত ক’দিনে ওই চরের ইজাদারের বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন জাকির হোসেন বেপারী। অভিযুক্তরা হলেন উক্ত চর কমিটির সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন রুনু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল মিঝি, আব্বাস উদ্দীন ও নান্নু আটিয়া ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের মিরপুর গ্রামে প্রায় ১শ’ ১০ একর জমি নিয়ে মিরপুর চরটি গঠিত। এই চরের জমির মালিক হিসেবে রয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক। চরটি নিচু জমি ও এক ফসলি হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত চরের মালিকরা মৎস্য চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে আসছে। তবে ইজারাদারদের অবশ্যই চরের জমির মালিকানা থাকতে হয়। আবার ইজারাদারদের চর পরিচালনার জন্য একটি কার্যকরী কমিটি থাকতে হয়। ওই কমিটি মৌসুমে একসনা বা এক বছরের জন্যে মৎস্য চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে থাকে। মেয়াদকাল শেষ হলে পুনরায় চরের জমির মালিকদের নিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয় চর ইজারা পরিচালনার জন্য।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ইজারার মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পূর্বে পরিচালনা কমিটি করতে উপজেলার মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি সভা ডেকে বিগত দিনের হিসাব-নিকাশ উপস্থাপন করা হয়। জমির মালিকদের উপস্থিতিতে তাদের প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে চর ইজারা ও পরিচালনার জন্য একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করতে গেলে জাকির হোসেন বেপারী নামে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা বাধার সম্মুখীন হন। এক পর্যায়ে জাকির হোসেন বেপারী পৌর মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তার কাছে একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে চরের জমির মালিকদের পৌরসভায় ডেকে আনেন পৌর মেয়র এবং সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় মিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে জমির মালিকদেরকে নিয়ে একটি সভার আয়োজন করেন। সে সভায় পূর্বের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে চরের জমির প্রকৃত মালিকদের তালিকা করে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তালিকা জমা দেয়ার পর পুনরায় সরেজমিনে গিয়ে কমিটি গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা না করে পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী নিজেকে কমিটির সভাপতি ও ইব্রাহিম খলিলকে সম্পাদক করে এক বছরের মেয়াদ উল্লেখ করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি চর পরিচালনা কমিটি করে তা ঘোষণা করেন।

মেয়রকে সভাপতি করে দেয়া কমিটি সর্বসম্মতিতে করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও কামাল মিজি উক্ত কমিটিকে ভুয়া কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ৫শ' কৃষকের মধ্যে কোন্ কৃষক মেয়রের কমিটির পক্ষে স্বাক্ষর দিয়েছে তা দেখাতে বলুন। মেয়রের দেয়া কমিটিকে স্বঘোষিত ও ভুয়া কমিটি আখ্যায়িত করে ওই চরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, চরের জমির মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো কমিটি না হলে কেউই স্বঘোষিত কমিটি মেনে নিবে না। স্বঘোষিত কমিটিতে বেশির ভাগ সদস্যের জমির মালিকানা না থাকায় প্রকৃত মালিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়রের দেয়া কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু চরের প্রকৃত মালিকদের কথা আমলে না নিয়ে মেয়র গত ৫ মার্চ রোববার মাইকিং করে পরদিন সোমবার উক্ত চর ইজারা দেয়ার ঘোষণা করেন। ঘোষণা অনুযায়ী মেয়র চর এলাকায় ইজারা দেয়ার জন্য গেলে সেখানে প্রকৃত চর মালিকদের সাড়া না পেয়ে মেয়র ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করে চলে আসেন।

চরের জমির মালিক ও পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন রুনু বলেন, চরের প্রকৃত জমির মালিকরা যাতে চর ইজারা দিয়ে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পায়--এটিই আমাদের দাবি। পাশাপাশি জমির মালিক ছাড়া অন্য কেউ চর পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না।

থানায় অভিযোগকারী জাকির হোসেন বেপারী তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে, বিবাদী ৫ জন তাদের মনমর্জিমতে দিন ধার্য করে ইজারা ডাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যাতে মেয়র মহোদয়কে অবমাননা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মেয়র সাংবাদিকদের জানান, চর ইজারা ও কমিটি নিয়ে গ্রুপিং এবং নানা জটিলতার কারণে একটি পক্ষ আমাকে সভাপতি করে চর পরিচালনা কমিটি করে। আমি চর ইজারা প্রক্রিয়া শেষ করে এই দায়িত্ব প্রকৃত মালিকদের কাছে ছেড়ে দিবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়