প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম লিপন ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কাজী মনির হোসেন। ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার টোরাগড় গ্রামে পৌর ৭ ও ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার গত ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পৌরসভার মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্ট ও লাইভ এসে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য তুলে ধরে বিভিন্ন অভিযোগ করেন।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের বক্তব্য ও অভিযোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ হাবিবুর রহমানের সভাপ্রধানে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় কাজী মনির হোসেন বলেন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক আইডিতে পৌর মেয়র ও আমার নামে মানহানিকর, কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। যার কোনো সত্যতা নেই এবং এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
তার দাবি, প্রকৃতপক্ষে একটি সালিসি বৈঠকের প্রতিবেদন মিনু আক্তারের পরিবারের পক্ষে না দেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পৌর মেয়র ও আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছেন। সম্পত্তিগত বিরোধের জেরে জনৈক মহরম আলীসহ চারজন ব্যক্তি বাদী হয়ে পৌর মেয়রের নিকট লিখিত অভিযোগ (নং-১৯৫/২০২২) দায়ের করেন। যে অভিযোগটি ছিলো মিনু আক্তারের বাবা আনোয়ার হোসেন ছিডার বিরুদ্ধে।
কাজী মনির বলেন, অভিযোগের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আমাকে (৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর) দায়িত্ব দেন পৌর মেয়র। দায়িত্ব পেয়ে আমরা বাদী ও বিবাদী পক্ষকে পরপর তিনটি নোটিস প্রদান করি। প্রথম নোটিস পাওয়ার পর দুই পক্ষের সালিস ও দুই কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে প্রথম সালিসি বৈঠকে বিবাদী মিনু আক্তারের বাবা আনোয়ার হোসেন ছিডা ও তার ভাই তাদের সপক্ষের কোনো দলিল বা কাগজপত্র না এনে বাদী পক্ষের সাথে অশালীন আচরণ করেন। তাদের অসহযোগিতার কারণে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় নোটিসের পর দ্বিতীয় সালিসি বৈঠকেও আবারো নিজেদের সপক্ষে কোনো দলিল বা কাগজপত্র না এনে সালিসগণের উপস্থিতিতে বাদী পক্ষের সাথে আবারো অশালীন আচরণ করেন মিনু আক্তারের বাবা ও ভাই। তাদের এমন অসহযোগিতার কারণে দ্বিতীয় বৈঠকটিও সম্পন্ন হয়নি। এরপর তৃতীয় নোটিস করা হয়। তৃতীয় নোটিসের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বৈঠকে বাদী পক্ষ উপস্থিত হলেও মিনু আক্তারের বাবাসহ বিবাদী পক্ষের কেউই উপস্থিত হননি। এরপর আমরা বিধি অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করি। ওই প্রতিবেদনটি পৌরসভার উচ্চমান সহকারী মোঃ আব্দুল লতিফ কম্পিউটারে কম্পোজ করে প্রিন্ট করেন। এটি জানতে পেরে মিনু আক্তার উত্তেজিত হয়ে আব্দুল লতিফের হাত থেকে প্রিন্টকৃত প্রতিবেদনটি জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন এবং উচ্চস্বরে অশালীন ও অসলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। আব্দুল লতিফ বিষয়টি পৌর মেয়রকে অবহিত করেন। এরপর থেকেই মিনু আক্তার পৌর মেয়র ও আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
কাজী মনির আরো বলেন, মিনু আক্তার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সেবার নামে বা সেবার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নেন এবং পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে অশালীন আচরণ করেন। এসব বিষয় নিয়ে তাকে সতর্ক ও সচেতন করার জন্যে পৌর মেয়র মৌখিকভাবে আমাকে ও তার নির্বাচনী ওয়ার্ডের আরো দুজন কাউন্সিলরকে বেশ ক’বার দায়িত্ব দেন। আমরাও তাকে বেশ ক’বার সতর্ক করি। কিন্তু মিনু আক্তার সচেতন হননি। সবশেষ তিনি ওই সালিসি বৈঠকের প্রতিবেদনটি ছিঁড়ে ফেলায় এবং উচ্চমান সহকারীর সাথে অশালীন আচরণ করায় পৌর মেয়র তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন। তিনি নোটিস পেয়ে সন্তোষজনক জবাব না দিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রায় দুমাস পৌরসভা কার্যালয়ে আসেননি। সবশেষ গত ৩১ অক্টোবর পৌরসভার মাসিক সভায় উপস্থিত হয়ে মিনু আক্তার উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে হাজিরা শীটে স্বাক্ষর না করে উচ্চস্বরে অশালীন কথাবার্তা বলেন। পরে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিনু আক্তারসহ অপর তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে নিয়ে বসেন এবং তিনি তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি অনুতপ্ত হয়ে আর এমনটি হবে না বলে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি তার বাসায় চলে যান। কিন্তু ওইদিন বিকেলেই ৩১ অক্টোবর আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটে মিনু আক্তার তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে তার ও পৌর মেয়র এবং আমার ছবি দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর, কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করে একটি পোস্ট দেন। এর পরের দিন ১ নভেম্বর তিনি দুপুর সাড়ে ১২টায় ফেসবুক লাইভে এবং একইদিনে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে আরেকটি পোস্ট দিয়ে আবারো আমাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
এ সময় প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কাজী মনির আরো বলেন, আমি এর প্রতিকার চাই। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র-২ ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন মজুমদার, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মমতাজ বেগম মুক্তা ও ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী কবির হোসেন কাজী।
একই সময়ে সাবেক কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ খান ও এমরান হোসেন মুন্সী, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী মনির হোসেন মিঠু, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্যাহ মৃধা, শিক্ষক জহিরুল ইসলাম মজুমদার। তারা তাদের বক্তব্যে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারকে ভুলপথ থেকে ফিরে আসা এবং তাকে অনুতপ্ত হওয়ার আহ্বান জানান।