প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
নুরুন্নবী নোমান। ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দুই বারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া একবার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়কালে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের উন্নয়ন-যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের শেষের দিকে সাংবাদিক গুরু মরহুম ইকরাম চৌধুরীর হাত ধরে সাপ্তাহিক রূপসী চাঁদপুর পত্রিকায় কাজ শুরু করেন তিনি। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৯ বছর যাবৎ এই পেশার সাথে জড়িত। এছাড়া তিনি জাতীয় দৈনিক রূপালী, আল মুজাদ্দেদ, দেশজনতা, দিনকাল, আমার দেশ ও সর্বশেষ বর্তমানে যায়যায়দিনে উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও গত ২০১০ সাল থেকে সাপ্তাহিক আলোকিত ফরিদগঞ্জ নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। নুরুন্নবী নোমান একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। ফরিদগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ভাবনা শীর্ষক ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে আজ নুরুন্নবী নোমান তার অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার উপজেলায় সাংবাদিকতা অতীতের সকল সময়ের চেয়ে কি গতিশীলতা পেয়েছে? গতিশীলতা পেলেও কি মান রক্ষা হচ্ছে?
নুরুন্নবী নোমান : অবশ্যই গতিশীলতা অনেক গুণে বেড়েছে। তবে মান, যোগ্যতা, দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা এই গুণবাচক দিকগুলো অতীতের চেয়ে অনেক কমেছে। অতীতের সাংবাদিকদের মান মর্যাদা আর এখনকার কথিত গতিশীল সাংবাদিকদের কোয়ালিটির অনেক পার্থক্য। জেলা, উপজেলায় সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়লেও দুর্ভাগ্যের বিষয় মানসম্মত সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী হাতেগোণা কয়েকজন পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথিত ও সাউন্ড সাংবাদিকদের ভিড়ে জাত সাংবাদিকরা পরাস্ত। তাদের নানা কৌশল ও ধান্ধাবাজির কারণে প্রকৃত সাংবাদিকরা ইজ্জত হারানোর ভয়ে ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যাচ্ছে।
সবমিলে এই পেশার গতিশীলতা ও পরিধি বাড়লেও মানের দিক দিয়ে অনেকে পিছিয়ে আছে। সেখান থেকে উত্তরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : পত্রিকাগুলোর প্রিন্টিং সংস্করণের পাঠক এবং টিভি সংবাদের শ্রোতাণ্ডদর্শক দিন দিন কমছে। কারণ কী? এমনটি রোধের উপায় কী?
নুরুন্নবী নোমান : প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে দর্শক এবং পাঠকরা খুব সহজে তার চাহিদা মতো খবরাখবর ও নানা বিষয় ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দারুণভাবে প্রভাব পড়েছে সংবাদপত্র ও টিভি চ্যালেনগুলোতে। তাছাড়া মানসম্মত বা পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী সংবাদ না থাকায় ধীরে ধীরে পাঠকরা বিকল্প চিন্তা করছে। দলকানা ও ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে থেকে সাংবাদিকরা জনস্বার্থে সংবাদ প্রকাশ করলে অবশ্যই সেই পত্রিকা বা মিডিয়া হাউজ জনপ্রিয়তা পাবে। আমি মনে করি, অন্ততপক্ষে প্রতিটি পত্রিকায় সারাদেশের সংবাদের পাশাপাশি এক্সক্লুসিভ কিছু আইটেম থাকলে অবশ্যই পাঠকরা সেই পত্রিকা সংগ্রহ করবেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আজকাল গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ব্যবহৃতও হচ্ছে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য/বিভাজন থেকে এমনটি হচ্ছে। আপনার অভিমত কী?
নুরুন্নবী নোমান : অযোগ্য ও অল্প শিক্ষিত ব্যক্তির বা রাজনৈতিক প্রভাবপুষ্ট মিডিয়া হাউজগুলোতে পড়ার কারণে প্রায় বেশির ভাগ সংবাদকর্মী রাজনৈতিক বা ব্যক্তি বিশেষের কাছে জিম্মি। এদের মধ্যে অনেকে টিকে থাকার জন্যে বিভিন্ন মহলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। এতে করে ওই সংবাদিকদের দ্বারা জনকল্যাণকর কিছু চিন্তা করা দুরূহ ব্যাপার।
এছাড়া কিছু আসাধু রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী এমনকি আমলা তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অসাধু সাংবাদিক সৃষ্টি ও পরে তাদের ব্যবহার করে থাকে। একটা সময় তাদের দিয়ে বিভাজনের সৃষ্টি করে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সংবাদ পরিবেশনে তাৎক্ষণিকতাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনলাইন সাংবাদিকতার জোয়ার। এতে কেউ কেউ অপসাংবাদিকতার সুযোগ বা আশ্রয় নিচ্ছে। সকল সংবাদের ক্ষেত্রে কি তাৎক্ষণিকতা জরুরি? আপনার মতামত জানতে চাই।
নুরুন্নবী নোমান : আধুনিক বা প্রযুক্তির যুগে তাৎক্ষণিক সংবাদ প্রকাশ বা অনলাইনে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিপদ হচ্ছে ভুঁইফোঁড় অনলাইনের দৌড়ঝাঁপ সীমাহীন হওয়ায় সমাজ বা রাষ্ট্রে সাংবাদিকতার পেশায় এক কঠিন সময় চলছে। আর এই সুযোগে অযোগ্য ও অসাধুরা এসব মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে সংবাদপত্র ও এই মহান পেশাকে কলুষিত করে তুলছে। যার ফলে যেখানে সেখানে এখন তথাকথিত অনলাইন সাংবাদিকদের আধিপত্য বেড়ে যাচ্ছে। আর এদেরকে সমাজের এক ধরনের লোকজন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।
আমি মনে করি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে এমন কিছু সংবাদ আছে, যা তাৎক্ষণিক অনলাইনে প্রকাশ করা উচিত নয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের বাইরেও আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে প্রদান করতে পারেন।
নুরুন্নবী নোমান : কিছু অসাধু ও বিপথগামী সম্পাদকের কারণে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার লাফালাফিতে সুযোগ বুঝে, সমাজের নষ্ট প্রকৃতি ও অশিক্ষিত যুবকরা সাংবাদিকতার মতো মহৎ পেশাকে তাদের অপকর্ম আড়াল করার জন্যে ব্যবহার করছে। ফলে জাত ও প্রকৃত সাংবাদিকরা আজ চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন।
হলুদ সাংবাদিকদের ভিড়ে আসল ও প্রকৃত সাংবাদিকরা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সাংবাদিকতার নামে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া বা মানুষকে নানা কৌশলে ঠেক দিয়ে কিছু আদায় করা হচ্ছে হলুদ সাংবাদিকদের রুটিনওয়ার্ক। সময় থাকতে তাদের গতি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমি মনে করি, মফস্বলে এই পেশাকে একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নেয়া উচিত না। পাশাপাশি অন্য পেশা বা আয়ের উৎস থাকলে সাংবাদিকরা পথভ্রষ্ট হওয়ার আর সুযোগ থাকবে না।
চাঁদপুর কণ্ঠের এই আয়োজন সাংবাদিকদের সঠিক পথ দেখাবে। ধন্যবাদ।