প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৪
রামপুরের হুজুরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অধ্যক্ষ আবু জাফর
অসংখ্য সুন্নী জনতা শোকে মুহ্যমান
চাঁদপুরের আপামর সুন্নী জনতার কাছে অধ্যক্ষ আবু জাফর মোঃ মাঈনুদ্দিন নামটি বেশ সমাদৃত। দীর্ঘ ৪০ বছরের সাংগঠনিক জীবনে অসংখ্য নেতা-কর্মী গড়েছেন বহুমুখী গুণের অধিকারী এই নেতা। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চাঁদপুর জেলায় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি চাঁদপুর সুন্নীয়তের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়া তরিকার দেশখ্যাত সংগঠন গাউছিয়া কমিটিরও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু হয় নিজ বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নস্থ রামপুর পীর বাড়ির প্রতিষ্ঠিত রামপুর আদর্শ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে। ১৯৯২ সালে এই মাদ্রাসাটি দাখিল মাদ্রাসা থাকাকালীন তিনি এখানে সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে যোগদান করেন। এরপর এটি আলিম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে থেকে দ্বীনি শিক্ষায় খেদমত দিয়ে যান।
|আরো খবর
সুন্নীয়তের এই বীর সিপাহসালার ২০ জানুয়ারি সোমবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মাওলায়ে হাকিকির দীদারে চলে যান। ২১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে সমাহিত করা হয় তাঁর দাদা রামপুরের হুজুর খ্যাত, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা ওয়াজউদ্দিন (রঃ)-এঁর পাশে। এর আগে তাঁর দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর শহরের বাহের খলিশাডুলী কাদেরিয়া চিশতিয়া তাহেরিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসা মাঠে। এখানে জানাজার ইমামতি করেন চান্দ্রা ছামাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা আনম মুহিবুল্লাহ। পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় মরহুমের নিজ কর্মস্থল রামপুর মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাজায় ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীরে কামেল হজরতুল আল্লামা আবু ইয়াহইয়া মোহাম্মদ জাকারিয়া আল-মাদানী (মাঃজিঃআঃ)। উভয় জানাজায় অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী ছাত্রসেনা, ইসলামী যুবসেনা ও গাউছিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, মুফতি মুফাসসির অংশ নেন। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও অঞ্চল ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে অনেক নেতৃবৃন্দ এসে জানাজায় অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে মরহুমের উপর স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান জননেতা মাওলানা এমএ মতিন, মহাসচিব সউম আবদুস সামাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডঃ আবু নাছের তালুকদার, সোলায়মান ফরিদ, চাঁদপুর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সভাপতি অধ্যক্ষ আল্লামা ড. একেএম মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আবু সুফিয়ান খান আবেদী আল-কাদেরী, ঘনিয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব মাওলানা হাফেজ জুনায়েদুল হক নকশবন্দী মোজাদ্দেদী, চাঁদপুর গাছতলা দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন আল্লামা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী নকশবন্দী মোজাদ্দেদী, হাশিমপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা শায়খ আশফাক আহমাদ উয়েসী রেফায়ী (মাঃজিঃআঃ), চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাওলানা এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ। উভয় জানাজার আগে এবং পরে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় মিলাদ-কিয়াম, দোয়া মুনাজাত, খতমে গাউছিয়া, কোরআন খতম করা হয়।
মরহুমের উপর স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা এবং তাঁর দাফনের সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সংগঠনের অনেক নেতা এবং তাঁর হাতেগড়া অনেক কর্মী তাঁর শেষ বিদায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কেহ কেহ বিলাপ করে কাঁদেন। অসংখ্য আলেম-ওলামা মরহুম আবু জাফর মোঃ মাঈনুদ্দিনের জন্য দোয়া করতে গিয়ে শুধু কাঁদতে থাকেন। এভাবেই এক শোকাবহ বেদনাদায়ক পরিবেশের মধ্য দিয়ে সকলের প্রিয়জন নিরহঙ্কারী জননেতা অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মোঃ মাঈনুদ্দিনকে চিরবিদায় জানান অসংখ্য সুন্নী জনতা।