প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের সামনে প্রতি শুক্রবার ভিক্ষা নিতে আসা প্রায় ৩শ’ ভিক্ষুককে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানো হয়। এই খাবারের অর্থ আসে হাজীগঞ্জের গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের মালিক ও কর্মচারীদের একদিনের বেতন থেকে। আবার অনেক দাতা গোপনে বা প্রকাশ্যে হোটেল কর্তৃপক্ষকে নগদ টাকা দিয়ে গেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায়িত্বে একই নিয়মে রান্না করে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। প্রথম দিকে মাসের প্রথম শুক্রবার প্রায় আড়াইশ’ ভিক্ষুককে খাওয়ানো হতো। পরে ব্যাপক সাড়া পেয়ে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুরের খাবারের আয়োজন চলে আসছে। এমন খাবারের আয়োজন চলছে গত ২৭ সপ্তাহ ধরে। ভবিষ্যতে এমন আয়োজন চলমান থাকবে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারের গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বেশ কিছুদিন আগে নিজেদের উদ্যোগে ও আয়োজনে ভিক্ষুকদেরকে খাওয়ানো শুরু করে। হোটেল মালিক আর কর্মচারীদের ১ দিনের বেতনের টাকায় মাসের প্রথম শুক্রবার হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের সামনে ভিক্ষা নিতে আসা ভিক্ষুকদের খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। বেশ কয়েক সপ্তাহ শেষে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও অনুদান পাওয়ায় প্রতি শুক্রবার খাওয়ানো শুরু করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এমন কি প্রথমদিকে শতাধিক ভিক্ষুকের সমাগম হলেও এখন প্রতি শুক্রবার কমপক্ষে ৩শ’ ভিক্ষুককে দুপুরে খাওয়ানো হয়। এভাবে গত ২৮ সপ্তাহ ধরে চলছে। খাবারের মেন্যু হচ্ছে মুরগি খিচুড়ি কিংবা গরুর খিচুড়ি।
আরো জানা যায়, মুরগি খিচুড়ি দিয়ে প্রায় ৩শ’ ভিক্ষুককে খাওয়াতে হলে ব্যয় হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা আর গরুর মাংসের খিচুড়ি খাওয়াতে হলে ব্যয় হয় প্রায় ৯ হাজার টাকা। এই টাকার যোগান প্রথম দিকে হোটেল কর্মচারীদের বেতনের টাকা থেকে দেয়া হতো। এতে পরে যোগ দেন হোটেল মালিক। ভিক্ষুককে খাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কিছু দাতার খোঁজ মিলে। যেদিন দাতা থেকে অর্থ আসে সেদিন দাতার টাকায় খাওয়ানো হয়। আর যেদিন দাতা থাকে না সেদিন নিজেদের অর্থে ভিক্ষুকদেরকে খাওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। তবে দাতার দেয়া অর্থ থেকে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো লাভ নেয় না। যেসব ব্যক্তি নিজেদের নাম গোপন রাখতে বলেন তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না।
উক্ত হোটেলের কর্মচারীদের নেতা ইব্রাহিম মিয়া জানান, আমরা প্রথম দিকে নিজেরা মাসে একবার গরিবদেরকে খাওয়ানোর উদ্যোগে নিয়েছিলাম। একটা সময় দেখলাম আমরা যে খাবারটুকু দিই, তারা খুব খুশি হয়। পরে আমরা মালিকসহ বসে প্রতি শুক্রবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি।
হোটেল ম্যানেজার (হিসাব রক্ষক) মোঃ আলী হোসেন মিয়া জানান, কর্মচারীদের একদিনের বেতন দিয়ে প্রথমদিকে শুরু হলেও এখন মালিকপক্ষসহ সবাই মিলে সপ্তাহে একদিন ভুনা খিচুড়ি খাইয়ে থাকি।
হোটেল মালিক মোঃ কাউসার হোসেন লিটন জানান, আয়োজনটি হোটেলের লোকেরা প্রথম দিকে শুরু করেছে। পরে আমি তাদের সাথে যোগ দিই। প্রতি শুক্রবার প্রায় ৩শ’ লোকের রান্নার গ্যাস, মসল্লা ইত্যাদিতে যা ব্যয় হয় তার পুরোটা আমার পক্ষ থেকে দেয়া হয়। এছাড়া উক্ত আয়োজন থেকে লাভ নেয়া হয় না। এমনকি কোনো দাতা টাকা দিলে আমরা পুরো আয়োজন করে দুঃস্থদের খাবারের ব্যবস্থা করি। দাতাদের দেয়া অর্থ থেকেও আমরা কোনো লাভ নেই না।