প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
হঠাৎ করেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে চাঁদপুর জেলায়। সদর উপজেলার পাশাপাশি মতলব, ফরিদগঞ্জসহ অন্য উপজেলায়ও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ৮ দিনের লকডাউন শিথিলতায় ঢাকা, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, রায়পুর ও চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে আসা মানুষদের ভিড়ে এ সংক্রমণ আরো বাড়বে বলে অনেকটাই নিশ্চিত বিশেষজ্ঞগণ। তাই ঈদ পরবর্তী চাঁদপুরের করোনা সংক্রমণের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে নয়া কৌশল গ্রহণ করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।
নয়া কৌশল সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য :
বৃহস্পতিবার ১৫ জুলাই জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ কৌশল গ্রহণ করা হয়। নতুন কৌশলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, চাঁদপুরে প্রত্যাশার বাইরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারির এ প্রভাব শুধুমাত্র জেলা বা উপজেলার এক দু'টি কমিটির মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এজন্যে চাই প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে জেলা সদর পর্যন্ত সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জেলার প্রতিটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করোনা প্রতিরোধক কমিটি গঠন করবো।
কমিটিতে সদস্য থাকবেন যারা :
করোনা প্রতিরোধক কমিটির আহ্বায়ক থাকবেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব থাকবেন কমিটির সদস্য সচিব। ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য থাকবেন। ইউনিয়ন সদরের স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ব্লক সুপারভাইজার, হেল্থ প্রোভাইডার ও বিট পুলিশের প্রতিনিধি প্রত্যেকে এ কমিটির সদস্য থাকবেন। স্থানীয় দু'জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকেও এ কমিটির সদস্য করা যাবে।
কমিটি সমন্বয় করবেন যিনি :
ইউনিয়ন কমিটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি-না তা তদারকি করার জন্যে জেলা পর্যায় থেকে প্রতি ইউনিয়নের জন্যে একজন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করা হবে, যিনি এ কমিটির সভাপতির সাথে সমন্বয় করে পুরো কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন। এভাবে আমরা পুরো জেলাকেই একটি মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। যাতে করোনা প্রতিরোধে আমরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি।
করোনা প্রতিরোধক কমিটির কাজ :
নবগঠিত করোনা প্রতিরোধক কমিটি নিজ নিজ ইউনিয়নের করোনা জিরো টলারেন্সে আনার লক্ষ্যে কাজ করবে। যারা করোনা আক্রান্ত তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করবে। প্রতিদিন সিভিল সার্জন জেলায় যে ইউনিয়নের যে ব্যক্তির করোনা পজিটিভ আসবে তার নাম ঠিকানা ইউপি চেয়াম্যানের ই-মেইলে পাঠিয়ে দিবেন। ইউপি চেয়ারম্যান সে তালিকা অনুযায়ী করোনা পজিটিভ ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করবেন। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি চিহ্নিত করে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করবেন, একই সাথে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যেন সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন না হয়, সে বিষয়টিও লক্ষ্য রাখবেন। করোনা সংক্রমিত পরিবারের কোনো ঔষধপত্র, খাবার বা বাজার প্রয়োজন হলে উক্ত কমিটি তা পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে। পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হলে ৩৩৩ নম্বরের সহায়তা নিবে বা জেলা প্রশাসনকে জানাবে। জনগণকে ঘরমুখী করা ও বিশেষ কাজে বহিরাগতদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যে প্রচার-প্রচারণা চালাবে। টিকাদানে জনগণকে উৎসাহিতকরণ, টিকা রেজিস্ট্রেশনে সহায়তাকরণ ও টিকা দিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে যেন নির্বিঘেœ যেতে পারে কমিটি তাতে সহায়তা করবে।
জেলার বর্তমান করোনা পরিস্থিতি :
বর্তমানে চাঁদপুরে করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় (১৪ জুলাই) চাঁদপুর জেলায় ১৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪৬.৪৮ শতাংশ। এই ১৩৯ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৯ জন। এদিকে নতুন এই ১৩৯ জনসহ এ পর্যন্ত জেলায় মোট আক্রান্ত হলো ৬৬৯৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫২৭১ জন, মারা গেছেন ১৩৮ জন। আর বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৮৫ জন।
নতুন শনাক্ত হওয়া ১৩৯ জনের উপজেলা ভিত্তিক সংখ্যা হচ্ছে : চাঁদপুর সদরে ৫৯, হাজীগঞ্জে ২১, মতলব দক্ষিণে ২১, শাহরাস্তিতে ২০, কচুয়ায় ৬, ফরিদগঞ্জে ৫, হাইমচরে ৫ ও মতলব উত্তরে ২ জন।