বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০

পুরাণবাজারে সোনালী ব্যাংকের পরিত্যক্ত ভবন ধসে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা!
মিজানুর রহমান ॥

এক সময় চাঁদপুরের পাট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পুরাণবাজারে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পরবর্তীতে সোনালী ব্যাংকের মালিকানায় থাকা পরিত্যক্ত দোতলা একটি ভবন ধসে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ভবনটি ঘিরে ডাকাতিয়া নদীর সুড়ঙ্গপথ, দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল আর বটগাছসহ নানা জাতের গাছগাছালি জন্মে ভবনের চারপাশ জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ধ্বংসাবশেষের আঙ্গিক ধারণ করেছে। প্রায় ২০ বছর আগে প্রবেশাধিকার নিষেধের সাইনবোর্ড ঝুলানো পরিত্যক্ত ভবনটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাই দ্রুত এটি ভেঙ্গে ফেলা বা সংরক্ষণের পদক্ষেপ না নিলে যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে বলে মন্তব্য তাদের।

সরজমিনে পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের সামনে খেয়াঘাটের পাশে ওই ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা বিশিষ্ট ভবনটি কালের সাক্ষী হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। দেয়াল বাদে কিছুই নেই। দরজা, জানালা, সাটার, শিক, এঙ্গেলসহ ভবনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহু আগেই লুটপাট হয়েছে। সিঁড়ি ও ছাদের চারদিক দিয়ে খসে পড়ছে পলেস্তরা ও দেয়ালে ধরেছে ফাটল। নানা স্থানের জংধরা রডগুলোও দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে পাশের ডাকাতিয়া নদীর স্রোতময় ঢেউও যেন ভবনটিকে গ্রাস করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এমন দুরবস্থাময় ভূতুড়ে ভবনটি এখন দুর্ঘটনার আশনি সংকেত দিয়ে চলছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে এটি ইমপেরিয়াল ব্যাংক ছিলো। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্বাধীনতার পর এটি সোনালী ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ব্যাংকের ৪২.৫০ শতাংশের নিজস্ব মালিকানার এই জমিটিতে নির্মিত এই দোতলা ভবনটিতে আনুমানিক ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। যেখানে সর্বশেষ সোনালী ব্যাংক চাঁদপুরের নিয়ন্ত্রণকারী কার্যালয় এবং জেলার প্রধান শাখা ব্যবস্থাপকের বাসভবন ছিলো। পরবর্তীতে কার্যক্রম পরিচালনা ও বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে এটিকে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

ভবনটি প্রায় বিশ বছর যাবৎ দেখাশোনা করে আসছে স্থানীয় ইট-বালু ব্যবসায়ী মোঃ শাহাদাৎ ছৈয়াল। তিনি বলেন, পুরো জায়গাটির ৩দিক দিয়ে দেয়াল দেয়া ও গেট বন্ধ থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী ও স্থানীয় যুবকরা ছবি তোলার বাহানাসহ নানা অজুহাতে কৌশলে এখানে প্রায়ই ঢুকে যাচ্ছে। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে? আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আবদুর রহিম, আবদুল হান্নানসহ একাধিক লোক বলেন, নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ভবনটি দুরবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া মাদকসেবী এবং অপকর্মকারীরা এখানে দিনে-রাতে ঢুকে সময় কাটায়। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় সবরকমের বাজে কাজই এখানে সংঘটিত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এটি ধসে পড়ার সময় যদি কেউ ভিতরে থাকে সেক্ষেত্রে কোনো প্রাণহানি ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? তাই আমরা চাই এটি দ্রুত ভেঙ্গে ফেলে সোনালি ব্যাংক অন্য কোনো পরিকল্পনা এখানে নিবে। এতে করে অপরাধরোধ এবং সরকারের উন্নয়ন দুটোই সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক চাঁদপুর শাখার শাখা প্রধান এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মোঃ আসলাম হোসেন জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ধসে পড়ার আশঙ্কার খবর আমাদের কাছেও রয়েছে। ভবনে ঢুকে তরুণ-তরুণী ও মাদকসেবীদের অপকর্মরোধে নজরদারি রাখতে পুলিশকেও অবহিত করা হয়েছে। তবে আমরা ভবনটি দ্রুত ভেঙ্গে সেখানে নতুন করে সোনালি ব্যাংক চাঁদপুরের প্রিন্সিপাল অফিস, ব্যাংকের নিজস্ব ভবন, ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট বা পুরাণবাজার শাখা স্থাপন করার প্রস্তাবনা চেয়ে ঊর্ধ্বতনের নিকট চিঠি পাঠিয়েছি।

এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক চাঁদপুরের ডিজিএম মোঃ খায়রুল আনাম ভূঞা জানান, আমরাও চাই ব্যাংকের নিজস্ব ভবন হোক। তাহলে তো বর্তমান কার্যালয় ব্যবহারে সরকারকেও এতগুলো টাকা ভাড়া দেয়া লাগে না। কিন্তু নানা জটিলতায় ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ বিলম্বিত হচ্ছে। তাছাড়া উপর মহলের এ ব্যপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই কোনোরূপ নির্দেশনা ছাড়া এই ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়