প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
সরজমিনে করোনা ওয়ার্ড : পরিস্থিতি বেসামাল
কোভিড ওয়ার্ডে সিট খালি নেই। তাই এখন নন-কোভিড ওয়ার্ডের একটি অংশে কোভিড রোগী জায়গা দেয়া হচ্ছে। আর নন-কোভিড ওয়ার্ডে সিট ফিলাপ হওয়ায় ফ্লোরে সিট ফেলে সেখানে রোগী রাখা হচ্ছে। ১০ মিনিটের মধ্যে একে একে নতুন রোগী আসলো তিনজন। নার্সরা একজনের পর একজনকে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিচ্ছেন। কিছু সিটের সাথে হাই ফ্লো অক্সিজেন ফিক্সড থাকার পরও ভ্রাম্যমাণভাবে মেশিন দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে একজনের পর একজনকে। এই মেশিনের বিষয়ে আরএমও ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, এটি হচ্ছে অক্সিজেন কনসেনটেটর। এই মেশিনে বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি হয়। এটি থেকে ঘুরে ঘুরে রোগিদের অক্সিজেন দেয়া হয়। এটির কারণে আমরা এখনো অক্সিজেন সংকটে পড়ি নাই। সদর হাসপাতালে এমন মেশিন আছে ২৮টি। এদিকে পুরো আইসোলেশন ইউনিটের অবস্থা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় কেউ মারা গেলে পুরো ইউনিটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু একই রোগে আক্রান্ত সবাই। কখন আবার কে কার স্বজনকে হারান এ চিন্তায় আতঙ্কগ্রস্ত থাকেন সবাই।
|আরো খবর
এই বিবরণ চাঁদপুর জেলার করোনা চিকিৎসার একমাত্র হাসপাতাল আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের। গতকাল সোমবার সরজমিনে আইসোলেশন ইউনিটে গিয়ে কোভিড ও নন-কোভিড ওয়ার্ড ঘুরে এই চিত্র দেখা গেলো। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আইসোলেশন ইউনিটে গিয়ে দেখা গেলো বেসামাল অবস্থার এই চিত্র। মূল ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় ডিউটি ডাক্তার বসে নতুন রোগী ভর্তি এবং পুরানো রোগী ছাড়পত্র দেয়া ও চিকিৎসার অন্যান্য কাজ করছেন। এই ইউনিটে ঢুকতেই প্রথমে নন-কোভিড ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে সিটের বাইরে ফ্লোরে অতিরিক্ত সিট ফেলে সেখানে রোগীকে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সিট ফিলাপ হয়ে যাওয়ায় ফ্লোরে ঠাঁই দিতে হয়েছে। এমন রোগী দেখা গেছে তিনজন। নন-কোভিড ওয়ার্ডের পরেই কোভিড ওয়ার্ড। সেখানেই দেখা গেলো সব সিটে রোগী। খারাপ অবস্থায় দেখা গেলো কয়েকজনকে। এই ওয়ার্ডে ভর্তি প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামাপদ ঘোষ ভুলু। তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, চারদিন হলো তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রথমদিকে অবস্থা খারাপ ছিল। আজকে (গতকাল) থেকে অনেকটা ভালো। তিনি জানান, তাঁর পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত। তিনি ছাড়া অন্য তিনজন বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আইসোলেশন ইউনিটে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স দিলরুবা জানান, কোভিড ওয়ার্ডে রোগী জায়গা দিতে না পেরে নন-কোভিড ওয়ার্ডের এক অংশে এখন কোভিড রোগী রাখা হচ্ছে। তিনি জানালেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।
কথা হয় হাসপাতালের আরএমও ও করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে। তিনিও জানালেন একই কথা-পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সামাল দিতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা আর পারছেন না। প্রতিদিন প্রায় দুই শ'র মতো স্যাম্পল দেয়ার ব্যবস্থাপনা করা, করোনা ওয়ার্ডের সব কিছু ব্যবস্থা করা। সব কিছু মিলে হাঁপিয়ে উঠছেন। তাঁর কাছ থেকে জানা গেলো এখন গড়ে আইসোলেশন ইউনিটে রোগী থাকে ৭০’র উপরে। সিট আছে ৬০টি। তিনি জানান, মূল ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় কয়েকটি সিট বসানোর চিন্তা করছেন তাঁরা।
চাঁদপুরের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারপরও মানুষ কেনো যে সচেতন হচ্ছে না এ নিয়ে চিকিৎসকগণ আক্ষেপ প্রকাশ করেন।