প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। এবারের মহান বিজয় দিবস বাঙালির বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি তথা বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। আজকের দিনটি বাঙালির জন্যে মাহেন্দ্রক্ষণ। তাই এবারের বিজয় দিবস বাঙালি ভিন্ন আমেজে উদ্যাপন করবে। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দিনে অর্জিত হয়েছিলো বাঙালির কাক্সিক্ষত বিজয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিলো বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন। এ আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতিতে ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। এদিন বাঙালি পায় একটি স্বাধীন ভূখ- এবং স্বাধীন পতাকা। আর এ বিজয়েরই আজ ৫০ বছরপূর্তি।
এ দেশের সর্বস্তরের মানুুষ একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর প্রস্তুতি নিতে থাকে পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করার। ২৫ মার্চের কালো রাতে হানাদার বাহিনী এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাদের এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও পৈশাচিক কর্মকা- দেখে বিশ্ববাসী হতভম্ব হয়ে পড়ে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীর বাঙালি পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে ১৬ ডিসেম্বর অর্জন করে মহান বিজয়। বাঙালি পায় স্বাধীন জাতি সত্তার পরিচয়, পায় লাল সবুজের পতাকা। মহান এ বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে থাকে প্রতি বছর।
মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা সদরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। আজ ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে চাঁদপুর শহরে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’ পাদদেশে ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হবে। এরপর অঙ্গীকার বেদীতে সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হবে।
অন্যান্য কর্মসূচি : ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৮টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুলিশ, আনসার ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, রোভার স্কাউটস, স্কাউটস, গালর্স গাইড ও কমিউনিটি পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য শিশু কিশোর সংগঠনের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ। কুচকাওয়াজের পর শিশু-কিশোরদের শরীর চর্চা, ডিসপ্লে প্রদর্শন, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থী কর্তৃক বিজয় ফুল তৈরি, শরীরে ধারণ ও পুরস্কার বিতরণ।
বেলা ১১টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, সুবিধাজনক সময়ে জাতির শান্তি, অগ্রগতি ও শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও মূক-বধির স্কুলে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করতে হবে। দুপুর ২টায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ পরিদর্শনে উন্মুক্ত থাকবে। সাড়ে ৩টায় চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে কলেজ ছাত্রী ও মহিলাদের ক্রীড়া অনুষ্ঠান। বেলা আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ অনুষ্ঠান। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শপথ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবে চাঁদপুর।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজয় মেলা মঞ্চে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সার্বজনীন ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর পৌরসভার উদ্যোগে শহরের শপথ চত্বর, ইলিশ চত্বর ও পৌর ভবন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এছাড়া আড়াইশ' শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল ভবন ও জেলা প্রশাসকের বাসভবনসহ বিভিন্ন সরকারি বাসভবন আলোকসজ্জা করা হয়েছে।