প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতৃবৃন্দ সকাল ১০টার মধ্যেই চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের ডাঃ নুরুর রহমান কনফারেন্স হলে উপস্থিত হয়ে নিজেদের উপস্থিতি রেজিস্ট্রেশন পূর্বক কাউন্সিলরদের জন্যে রাখা সম্মেলনের লোগো সম্বলিত সাইড ব্যাগ, চাবির রিং, কলম প্যাডসহ নানা উপহার সামগ্রী গ্রহণ পূর্বক অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্মেলনস্থলে গিয়ে আসন গ্রহণ করেন। সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ সম্মেলনস্থলে আসলে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদানপূর্বক স্বাগত জানান। পরে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এ সময় চাঁদপুরের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণা সাহা, শিপ্রা মজুমদার, স্বজন সাহা, বুলি চক্রবর্তীসহ শিপ্রা দাসের নেতৃত্বে উপস্থিত সকলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ সময় প্রীতি রাণী সাহা ও মৃদুল চৌধুরীর কণ্ঠে বেজে উঠে শঙ্খ ও উলুধ্বনি। প্রদীপের প্রজ্জ¦লিত আলো, শঙ্খ, উলুধ্বনি আর সমবেত উপস্থিতির তুমুল করতালিতে ডাঃ নুরুর রহমান কনফারেন্স হল মুখরিত হয়ে উঠে। এমন সুশৃঙ্খল আয়োজনে সকলেই মোহিত হয়ে পড়েন। উপস্থিত সকলে এমন আয়োজনের জন্য জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সম্মেলনের সুন্দর আয়োজনে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মেলনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা রেখেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সোচ্চার থাকতে হবে। এজন্যে প্রয়োজন ঐক্য আর যুবকদের সম্মিলিত প্রয়াস। আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তির বলির পাঠা হচ্ছি আমরা। তাই বলে তো আমরা কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে হাত মিলাতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী সরকারের সাথে থেকেই আমাদের সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাসহ আমাদের দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার, হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন, হিন্দু সুরক্ষা আইনসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
তিনি শারদীয় দুর্গোৎসবে যে ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানিয়ে আরো বলেন, আমাদেরকে জনসম্পৃক্তি সৃষ্টি করতে হবে। যদি তা না পারি তাহলে কোনো আন্দোলনই হয়তো বাস্তবায়ন হবে না। তিনি আরো বলেন, আজ দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা চাইলেই অনেক কথা বাস্তবতার আলোকে প্রকাশ্য বলতে পারি না। আমাদেরকে সন্তর্পণে পথ চলতে হবে। আমাদের কথা সরকারের কাছে পৌঁছাতে হবে। এজন্য সাংগঠনিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজ পূজা উদ্যাপন পরিষদ যেভাবে কাজ করছে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে আমাদের সাথে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রয়েছে। আমরা সকলে মিলেই আমাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার আদায়ে সোচ্চার হবো। তিনি পূজা পরিষদের সফলতা কামনা করেন।
সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জেএল ভৌমিক ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব দে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়ের সভাপ্রধানে প্রথম অধিবেশনে বিগত বছরের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ।
সম্মেলনের সফলতা কামনা করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহ- সভাপতি লায়ন দিলীপ কুমার ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল চৌধুরী, লিটন কুমার দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, চাঁদপুর সদর উপজেলা সভাপতি সুশীল সাহা, হাইমচর উপজেলা সভাপতি বিবেক লাল মজুমদার, হাজীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি রুহিদাস বণিক, শাহরাস্তি উপজেলা সভাপতি নিখিল চন্দ্র মজুমদার, কচুয়া উপজেলা সভাপতি ফনিভূষণ চন্দ্র তাফু, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সভাপতি হিতেষ শর্মা, মতলব দক্ষিণ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার সাহা ও মতলব উত্তর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব রনজিত সাহা মুন্না। করোনাকালীন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের যে সকল নেতৃবৃন্দ পরলোকগমন করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শোক প্রস্তাব আনেন সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্ত্তীকে সভাপতি করে নতুন কমিটির নেতা নির্বাচনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু করেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে কোনো প্রার্থী না থাকায় শতভাগ কণ্ঠভোটে নতুন করে আগামী দু’ বছরের জন্য বর্তমান সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ পুনরায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বচিত হন। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করলে তুমুল করতালির মধ্যে দিয়ে নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে স্বাগত জানান জেলা উপজেলা ও পৌর কমিটির পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। নব নির্বাচিত কমিটি তাদের দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা কামনাপূর্বক শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস এখনো বিরাজমান থাকায় এবং ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় স্বল্প পরিসরে সম্মেলন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শহরে কোনো বর্ণাঢ্য র্যালি বা বড় ধরনের শোডাউন হতে দেখা যায়নি।