প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
নড়বড়ে টিনের ঘর। জং ধরে গেছে টিনের চালায়। নেই দরজা। ঘুণে ধরা জানালা খুলে পড়ার উপক্রম। টয়লেটের অবস্থাও করুণ। গরমে হাঁসফাঁস করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সামান্য বৃষ্টিতেই শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় শ্রেণিকক্ষের মেঝে। এমনই চিত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার। ১৬ বছর আগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে সেখানে একটি একতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের অনুমোদন হয়। কিন্তু অজ্ঞাত জটিলতায় অদ্যাবধি মাদ্রাসাটিতে সেই ভবন নির্মাণ হয়নি। শিক্ষার পরিবেশ না পেয়ে এই মাদ্রাসার শিক্ষক ও পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা ঘরের বাঁশের খুঁটিগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষে নেই ফ্যান। মাদ্রাসায় নেই কোনো সীমানা প্রাচীর। সীমানা প্রাচীর না থাকায় নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সমস্যা দেখা দিয়েছে। গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ মাদ্রাসার মধ্যে। একটি মাত্র টয়লেটের অবস্থাও শোচনীয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদানের মতো পরিবেশ নেই বললেই চলে। নানা সমস্যার কারণে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
২০০৪ সালে মাদ্রাসাটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজস্ব তহবিল থেকে মাদ্রাসাটির জন্যে একতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন অনুমোদিত হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা ভবনের কাজটি আর হয়নি।
করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সমস্যা না হলেও কিছুদিন আগে মাদ্রাসা খোলার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আগের মতোই দেখা গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ফারুক মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুর কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসাটি গত ৭৫ বছর যাবৎ সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোথাও এ ধরনের জরাজীর্ণ মাদ্রাসা আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, যে দেশে ৭৫ বছর বয়সে একটি আলিম মাদ্রাসায় পাকা ভবন হয়নি, সেই দেশ উন্নয়নশীল দেশ, সেটা কিভাবে বলা যায়।
মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা অত্যন্ত আবেগাপ্লুতভাবে এই প্রতিনিধিকে বলেন, উপজেলার অন্যান্য মাদ্রাসার তুলনায় আমাদের এই মাদ্রাসায় অষ্টম, দাখিল এবং আলীম পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হয়। এখানে ছাত্র-ছাত্রীও অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের একটি ভবন নাই, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে আমাদের ক্লাস করতে হয়। তারা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাদ্রাসার জন্য একটি ভবনের দাবি করেন।
লক্ষ্মীপুর এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা বলেন, তারা বাংলাদেশের অনেক জেলার অনেক স্থানে ঘুরেছেন, তারা কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন জরাজীর্ণ ভবন দেখেননি বলে দাবি করেন। তারা অত্যন্ত আস্থার সাথে বলেন, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি এ চাঁদপুর জেলার। তিনি একজন সফল শিক্ষামন্ত্রী। মাদ্রাসার এই করুণ পরিস্থিতি তিনি উপলব্ধি করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবেন বলে তাদের বিশ^াস।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল খায়ের মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে আমি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের গত ২৫ বছরে অনেক টেবিলে একটি ভবন করে দেয়ার জন্যে চিঠি লেনদেন করেছি। কিন্তু কেন যে ছাত্র-ছাত্রী পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও এই মাদ্রাসায় ভবন হচ্ছে না তা আজও ভেবে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, মাদ্রাসার অবস্থা সত্যিই খুব শোচনীয়। নারী শিক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া তিনি বলেন, মাদ্রাসার টিনের ঘরগুলো একেবারেই জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীরা এখন আর এখানে পড়ালেখা করতে চাইছে না, তারা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাদ্রাসাটিতে কোনোরকম পাকা ভবন না হওয়ার পেছনে অধ্যক্ষ এবং মাদ্রাসা কমিটির ব্যর্থতাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। তারা বলেন, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কোথাও এমন মাদ্রাসা নেই, যেখানে একটি পাকা ভবন নেই। মাদ্রাসাটির বয়স ৭৫ বছর পেরিয়ে গেছে। গত ৭৫ বছরে এই মাদ্রাসায় এডহক কমিটি অথবা নিয়মিত কমিটি যা কিছুই হয় একটি পরিবারের কাছেই সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা জায়গা মতো কোনো রকম তদবির করে না বলে এখানে কোনো ভবন হচ্ছে না।
উল্লেখিত মাদ্রাসাটির জরাজীর্ণতার বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলী রেজা আশরাফীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সত্যিই ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে পাঠগ্রহণ করে এবং ঐ মাদ্রাসার শিক্ষকরা অত্যন্ত বিচক্ষণ ও মেধাবী, তাই পড়ালেখাও ভালো হয়। কিন্তু তারা পরিবেশগত দিক থেকে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। জরুরিভিত্তিতে সেখানে ভবন নির্মাণ দরকার। তিনি উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করে সেই মাদ্রাসায় একটি ভবন করে দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান।