প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
আমার প্রিয় শিক্ষক
খাইরুন নাহার
আমি সৌভাগ্যবান যে আমার শিক্ষাজীবনে বেশ কিছু ভালো শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পেরেছি। সকল শিক্ষকের প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল। মাত্র একজন শিক্ষককে বাছাই করা আসলেই কঠিন। তবে আমার জীবনে যে সকল শিক্ষকের আদর্শ ও শিক্ষা খুব গভীরভাবে ছাপ ফেলেছে তাদের মাঝে অন্যতম হলেন খালেক স্যার। মোহম্মদ আব্দুল খালেক স্যার মতিঝিল মডেল হাই স্কুলে গণিত বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। গণিতের শিক্ষকের কথা ভাবলেই অনেকের মাথায় যে রাগী ও বেত হাতে দাঁড়ানো একজন শিক্ষকের চিত্রটি আসে খালেক স্যার কিন্তু মোটেও এমন ছিলেন না। তিনি ছিলেন ছাত্রদের প্রতি সর্বদা আন্তরিক এবং সবাইকে সাহায্য করতে উৎসাহী। গণিতের শিক্ষক হিসেবে তিনি আসলেই অতুলনীয়। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন সৎ চরিত্রের সহজ-সরল জীবনে বিশ্বাসী মানুষ, যাকে দেখে ছাত্ররা নীতিবান হতে উৎসাহী হতো।
স্যার তার ছাত্রদেরকে খুব সহজভাবে বোঝাতে পারতেনÑযা একজন আদর্শ শিক্ষকের অন্যতম গুণাবলি। গণিতের মতো কঠিন বিষয়, যা অনেকের কাছেই আতঙ্কের, এমন একটি বিষয়ও স্যার আমাদেরকে এতো উৎসাহ এবং দক্ষতা নিয়ে পড়িয়েছেন যে তার সকল ছাত্রই তার কাছে চিরমুগ্ধ থাকবে। স্যারের সুদীর্ঘ সময়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ছিলো। আমার মনে আছে যে তার কাছে পড়ার সময় স্যার বলতেন যে, এখন এতো নাম্বার পেজ খুলে এতো নাম্বার অঙ্কটা করে দেখাও তো! একবার আমার এক সহপাঠী স্যারকে প্রশ্ন করেছিলো যে স্যার আপনি কোন্ পেজে কোন্ অংক আছে তা মুখস্ত কীভাবে করলেন? জবাবে স্যার হেসে বলেছিলেন, ‘বাবা, আমি অংক মুখস্ত করি নাই। তবে দীর্ঘ ২৫ বছর একই বই পড়াতে থাকলে এর কোথায় কি আছে তা এমনিতেই মনে থাকে!’
স্যার কখনই তার কোনো ছাত্রকে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে চাপ দেননি, আর দিবেনই বা কেনো তিনি তো টাকার জন্যে পড়াতেন না। আমার মনে আছে যে স্যার মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। এমনকি মাঝে মাঝে দেখতাম যে এতো বয়স হওয়া সত্ত্বেও স্যার স্কুল থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছেন! তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি, ছাত্রদেরকেও ধর্মের কথা বলতেন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে। মতিঝিল মডেলে পড়ার সময় অনেক ছাত্র ছিলো যারা বিভিন্ন শিক্ষককে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলতো, তবে তাদের মাঝে কেউই কখনই খালেক স্যারকে নিয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি। তিনি এমন এক শিক্ষক যিনি সকলের মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন।