প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:২৭
ট্রাক্টরে শেষ হচ্ছে ফসলি জমি
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো।। এ যেন মগের মুল্লুক! কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না যন্ত্র দানব ট্রাক্টরের চলাচল। এগুলোর চলাচলে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে রাস্তাঘাটের, অন্যদিকে ফসলি জমির মাটি নিয়ে আসার কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। অভিযোগ রয়েছে, কৃষি জমির মাটি ক্রয়-বিক্রয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র জড়িত। কৃষি জমির মাটি কেটে ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে ফেলতেও কোনো দ্বিধা করছেন না এই চক্র। অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি এবং জমির বিক্রিত মাটি তুলে আনতে গিয়ে ট্রাক্টর পাশের জমিগুলোরও বেহাল দশা করছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার সেই চক্রের এক সদস্য। এই চক্রের কাজ হলো, কৃষকদের নানাভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে জমির মাটি বিক্রির জন্যে রাজি করানো। এরপর তারা ট্রাক্টর দিয়ে বিক্রিত জমির মাটি জমি থেকে তুলে আনতে গিয়ে আশপাশের জমিগুলির মাটিও নষ্ট করে ফেলে যন্ত্র দানব টাক্টর দিয়ে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবেক সরকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার ইতিপূর্বে আব্দুর রাজ্জাকের এমন কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু জরিমানা দিয়েও থেমে থাকেনি আব্দুর রাজ্জাকের কর্মকাণ্ড। এ বছরও পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ইছাপুরা এবং সাহাপুর গ্রামের বহু কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করে চলছেন তিনি। এ রকম আরো অনেক ব্যক্তি রয়েছেন উপজেলা জুড়ে। কৃষক জসিম উদ্দীন শেখ জানান, মাটি কাটার ফলে ফসলি জমিগুলো উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি অন্য জমির ওপর দিয়ে এস্কেভেটর ও ট্রাক্টর চলাচল করছে। মাটি বহনকারী গাড়ি থেকে সড়কে মাটি পড়ে গ্রামাঞ্চলের শাখা সড়কসহ উপজেলার প্রধান সড়কগুলো মাটির প্রলেপে ঢেকে যাচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি কিংবা কুয়াশা পড়লে সড়কে বিভিন্ন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ছে। এসব মাটির অধিকাংশই যাচ্ছে ইটভাটায়। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, এই ব্যক্তি স্থানীয় কিছু কৃষককে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। গ্রামের সহজ সরল কৃষকরা ফসল উৎপাদনের কথা চিন্তা না করে মাটি বিক্রি করছেন। কিন্তু মাটি একজনের জমি থেকে বিক্রি করা হলেও সেই মাটি ট্রাক দিয়ে পরিবহন করার জন্যে অন্য অনেক কৃষকের জমি ব্যবহার করছে। ফলে কৃষি জমির মাটির উর্বরতা ও বিদ্যমান ফসল নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইছাপুরা গ্রামের তাজুল ইসলাম গাজী ও সাখাওয়াত হোসেন জানান, আমরা এই ব্যক্তির কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। আমরা তাকে বাধা দিলে সে রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখায়। এই ব্যক্তির হাত থেকে রক্ষা পায়নি স্থানীয় ইলশেপাড় পত্রিকার ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি রুহুল আমিন খান স্বপনের জমিও। এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য নিতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার প্রতিবেশীরা জানান, তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র সরে গেছেন। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ আর এম জাহিদ হাসান জানান, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।