প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫১
আগুনের নদী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বারো.
‘স্যার কাজটা হয়েছিলো ঠিকই। কিন্তু একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’ ইরফান ডিআইজি আজহারুল ইসলামকে হোয়াটস অ্যাপে জানালো।
‘কী হয়েছে ইরফান?’ উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ডিআইজির।
‘একটা পাখিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেই পাখিটা যেটা কানাডা থেকে উড়াল দিয়ে এসেছিলো। অচিন পাখি।’
‘নিশ্চয়ই আগের কোনো পাখির সাথেই ঘর বেঁধেছে।’
‘স্যার।’
‘দেখো, এটা হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ। যে কোনো পাখিকেই তুমি প্রযুক্তির মাধ্যমে কোথায় আছে, কার সাথে বাসা বেঁধেছে সবই বের করে ফেলতে পারবে। এরপর তোমার প্রয়োজনমতো খাঁচায় ভরে ফেলবে।’
‘ইয়েস স্যার।’
‘আমার মনে হচ্ছে এর মাঝে কোনো রহস্য আছে। রোগীটা মারা যায়নি।’
‘কী বলেন স্যার!’
‘রোগী এখনও মরেনি। তাহলে পত্রিকায় খবর বেরিয়ে যেতো। এতো পরিচিত ঘুঘু পাখি, সে হাসপাতালে মারা গেলে অবশ্যই কোনো না কোনো নিউজ পোর্টালে তুমি খবর পেতে, টিভি মিডিয়ায় আসতো। তুমি কি তা দেখেছো?’
‘না স্যার। আপনার কথায় যুক্তি আছে।’
‘হ্যাঁ, খোঁজ করো আগের বাসায়ই আছে।’
‘কী বলেন স্যার, পাখি শিকারের আক্রমণে যে বাসা থেকে পালিয়ে যায় সেই বাসায় ভয়ে আর ফেরে নাকি?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ইরফান।
ওদিকে হাসির শব্দ পাওয়া গেলো। তারপর খুবই আস্থার সাথে বলা হলো, ‘কিছু কিছু পাখি আছে যেমন ধরো বাজপাখি, অনেক বিশাল, কাউকে ভয় পায় না। শিকারীর বন্দুকের নল তাকে স্পর্শ করবে এটা সে ভাবতেই পারে না। সুতরাং সে তার আগের বাসায়ই ফিরে আসবে। আর দেখো তোমার হারানো পাখিটাও হয়তো সেখানেই গেছে জোড় মিলাতে।’
‘এটা কীভাবে সম্ভব স্যার! যার জীবনটা বাজপাখিটার ইঙ্গিতে নির্যাতনের শেষ সীমায় পৌঁছেছে সে কীভাবে আবার ওই পাখিটার সাথেই মিলবে?’
‘দেখো তাকে হয়তো যাদুমন্ত্র করা হয়েছে। তার মাথায় হয়তো এমন মন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে যে, সে আগের সব ভুলে গেছে। বাজপাখিটার ইশারায় চলছে সে। এমনও তো হতে পারে।’
‘স্যার। স্যালুট আপনাকে। আমি দুটো পাখিকেই আমার ঘরে ফেরত আনতে চাই। সেটা যেভাবেই হোক। আমি ব্যর্থ হতে চাই না। ওই দুটি পাখি ছাড়া আমার কর্মজীবন অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’
‘সে কারণেই তো তোমার নাম ০৪৪। এগুলো শুধু ডিজিট নয়, চার চারটি পিলার। খুঁটি। তুমি দেশের খুঁটি, তোমার ওপর আমার রয়েছে অপরিসীম বিশ্বাস। তাই তুমি ছাড়া কেউ এটা ভাবতে পারে না। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে না দেশের জন্যে? তুমি অবশ্যই পারবে।’
‘স্যার। ওভার।’
‘ওভার এন্ড আউট।’
ডিআইজি সাহেবের সাথে কথা শেষ হতেই প্রশ্ন করলো অধরা, ‘কী বললেন স্যার?’
‘আমাকে একটু ভাবার সময় দাও। আমাকে পরিকল্পনা করার সময় দাও। দেখি ভাবতে ভাবতে কী বেরিয়ে আসে।’
‘ঠিক আছে, তোমার ডিস্টার্ব করবো না। তবে শোনো মোনালিসা কিন্তু আজ চমৎকার রান্না করেছে কিচেনে।’
‘কী বলো? আমরা তো হোটেলে খাবো, রান্না করলো কেনো।’
‘তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে বলে।’
‘তাই তো। কই দেখি নিয়ে আসতে বলো তো।’
ইরফানের সামনে রান্না করা খাবার এলো। ইরফান বলে উঠলো, ‘উহ, কী চমৎকার ঘ্রাণ!’
ইরফানসহ সবাই খেতে শুরু করলো। ইরফান খাওয়া শেষ করে মোনালিসার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তোমার রান্না চমৎকার হয়েছে। আসলেই তুমি ভাগ্যবান।’
হাসলো অধরা। ‘আরে মেয়েরা ভাগ্যবান হয় না।’
‘কেনো? হতে পারে না?’
‘হতে পারে, তবে ভাগ্যবান হয় ছেলেরা। আর মেয়েরা হয় ভাগ্যবতী।’
অধরার উত্তর শুনে এবার মোনালিসাও হেসে উঠলো। তার মনে হলো দুঃখ-যতনার দিনগুলোর শেষে কতদিন পর সে এভাবে হেসেছে তার কোনো হদিস আছে?
মোনালিসার হাসি দেখে অধরার চোখের কোণ ভিজে গেলো। মোনালিসা অধরার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘অধরা তুমি কাঁদছো কেনো?’
‘আসলে তোমার চোখেমুখে আনন্দ দেখে আমার সেই আনন্দে অশ্রু ঝরছে। মানুষ জীবনে যদি দুঃখের পর একটু সুখ পায় তা দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। তখন আমার খুশিতে কান্না পায়।’ অধরা জবাব দিলো।
এবার কথা বলে উঠলো ইরফান। মোনালিসাকে বললো, ‘তোমার একটা খুশির খবর আছে।’
মোনালিসা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো, ‘আমার সব খুশির খবর মৃত্যুতে রূপান্তর হয়ে গেছে ভাইয়া। সে আর কখনোই ফিরে আসবে না।’
‘ভাগ্য বলে একটা কথা আছে না। আল্লাহ মানুষকে অনেক কিছু ফিরিয়ে দিতে পারে, যদি ভাগ্যে লেখা থাকে।’ ইরফান রহস্যময় হাসি হাসলো।
‘আমার জীবনে আর কখনোই তুষারপাত হবে না। তুষার মরে গেছে। সে লাশ হয়ে গেছে।’ মোনালিসা হতাশ গলায় বললো। (চলবে)