প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৯
সাহিত্যপাতায় প্রকাশিত কবিতা

দেবদাস কর্মকারের কবিতা
রুদ্ধ ক্যানভাস
একটি জন্মে বলে যেতে পারিনি কতো কথা
আবার যদি জন্ম নেই এই গাঙুরের দেশে
বটের ঝুরির কাছে নদী, ভোরের একটু আগে
যেমন আকাশ থাকে তেমনি রঙের ক্যানভাসে
রেখে যাওয়া সবটুকু নিঃশ্বাস
সারি সারি মানুষের মুখ সারি সারি ঘর
বিস্তৃত ধানি মাঠ পুকুরের জল
কতো কতো প্রিয় জন, অনেক মুখোশ কতো অজুহাত
কেমন রহস্য বদল, যারা সহজ সরল
ঠিক যেন তারা শুধুই বেঁচে থাকার দোষে দুষ্ট আজীবন
দেশ জুড়ে যখোন নামে ধস সত্য মিথ্যার পথ
মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে একটি শতক
খোঁড়া পায়ে হেঁটে হেঁটে যায় যদি বহু দূর
বোবাকালা ধ্বনিহীন গড়াতে গড়াতে সহস্র বছর।তখন মধ্য রাত জেগে উঠে যদি সমস্ত মনন
তখনও এমনি নদী ভাঙা ভাঙা তুলো মেঘ
জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় সমস্ত আকাশ
তোমার শিয়রে কীভাবে তাকিয়ে দেখি তোমার ঘুমের মুখ
হয়নি যে কথা বলা একটি জনম
একটু ভোরের আগে যেমন আকাশ
জন্ম যদি নেই আরও একবার এমন ভাটির দেশে
যেখানে বটের ঝুরির কাছে নদী
হয়তো তুমি নেই সেইখানে আর।০২ এপ্রিল ২০২৫, ঢাকা, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, বসন্তকাল।
করুণ নগ্ন অক্ষরে লেখা মানুষের নাম
জানালার পাশে তরুণ সবুজ পাতা ইচ্ছে হয় ছুঁই তার ফুল
মাটিতে গেঁথেছে যেন আঙুল আমার
বালি খুঁড়ে দেখি ভিজে আছে শিকড়, ব্যথিত
শিরা উপশিরা
কতো কতো নষ্ট প্রতিবেশী নির্মূল করে ডালপালা
দাম্ভিক মুখোশে ঢালে শিকড়ে গরল
অপমান ক্ষত, অতীত বিন্দু থেকে নেমে আসে নিচে
শব্দের ভেতরে শব্দ, মুহূর্ত মাটি জলে অভিশাপ
একখণ্ড শশ্রু মণ্ডিত ভণ্ড বেঁচে থাকে শরীর মণ্ডলে
ঈশ্বরের বুক ছিন্নভিন্ন হয় বুঝি কোন দাহে
তারপর অদ্ভুত কুঞ্চন
কি আশ্চর্যের মানব শরীর
এই আশ্চর্যের দেশে মনেও রাখেনি কেউ
আরশির ভাঙা কাচে জেগে উঠে যে মুখ
জীবন ব্যাপিয়া কতো ছন্দ এতো অন্ধকার
অন্তিম সূর্যের লাল রঙে শ্মশ্রুমণ্ডিত মুণ্ড
গমকে উন্মাদ নারীর পরাকাষ্ঠা, সমূহ সব স্মৃতি
তরুণ সবুজ পাতার পাশে কী বিপরীত,
অথচ আশ্চর্য !
একদিন ঢালবর্ম সব ধূলো হয়ে নিচে পড়ে থাকে
কবরের গায়ে করুণ নগ্ন অক্ষরে লেখা থাকে শত মানুষের নাম।২৭ মার্চ ২০২৫, ঢাকা,১৩ চৈত্র ১৪৩১, বসন্তকাল।
আমার রোমাঞ্চ ধমনী
কুয়াশার জল দিয়ে কী করে মুছে ফেলি বিষ
গড়িয়ে গড়িয়ে যায় ধ্বনিপূঞ্জ শূন্য থেকে সপ্ততলে
আমার রোমাঞ্চ ধমনীতে শঙ্কিত চীৎকার
শূন্যের মধ্যে যেন অদ্ভুত বিষণ্নতা
সবুজ ঘাসে ঢেকে যায় মাটি, আঘ্রাণ নেই তার
সন্ধ্যা বলেশ্বরের স্রোত রেখা বুকের ভিতরে রাখি
বৃক্ষ কোষের উৎস থেকে চিনেছি শরীর
ইন্দ্রিয়বিহীন নই আমি
তুমিও শুধু শ্রুতি নও শরীরবিহীন
তোমাকে ভালবেসে মর্যাদা না দিয়ে যদি বাঁচি
তবে আমার রোমাঞ্চ ধমনীকে শত ধিক,
ভাবি প্রিয় এ ভূমি জুড়ে কেন এতো অন্ধকার
চোখ খুলে বসে আছে কোটি কোটি মানব শরীর
মাধুরী ডুবেছে বলে অন্ধ সব জাতকুলশীল !যখোন মেঘ যায় ফেটে সপ্তর্ষির কোল থেকে দূরে
তোমার অঞ্জলি ভরে কতো যে রূপালি রুধির
যখনি ঘূর্ণিপাক তখনই বসি গিয়ে পাশে
নিবিড় জ্যোৎস্নায় ছেয়ে যায় শালুকের মুখ, চরাচর
ডুব দেই জলে কি পবিত্র অবয়বে পাশে থাকো বলে
সমস্ত সমতলে ঊর্ধ্বে অবতলে পাহাড়ে সমুদ্রে
অবিকল পূর্ণ তুমি
কোথায় দাঁড়াব আমি আজন্ম যে লুকিয়েছি
অন্তরে তুলে রাখা বীজ।২১ মার্চ ২০২৫, ঢাকা ৭ চৈত্র ১৪৩১ বসন্তকাল । গাজা পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
ধিক্ জানালাম তোদের আমি
নামেই যারা রাজা
থাকতে তোরা ধ্বংস কেন
মানুষসহ গাজা?তোরা যারা বিশ্ব চালাস্
মানবতার ছলে
মারতে মানুষ ফিলিস্তিনের
বিবেক তোদের বলে?নারী-শিশু কী দোষ তাদের
কী করেছে নর?
যে ভূমি দেয় স্রষ্টা নিজে
তা কেড়ে তুই বড়ো!সংখ্যা নিয়ে বড়াই যাদের
শিরদাঁড়া তার কোথায়?
মারছে মানুষ অন্ধ তোরা
বলতে কি তা থোতায়?আজকে তোরা শক্তি ধরিস্
ধরবে রে কাল গাজা
মনে রাখিস্ ফেরত পাবি
করলি তোরা যা যা।এ পৃথিবী নয় দানবের
এ পৃথিবী শিশুর
এ পৃথিবী মোহাম্মদের
কৃষ্ণ বুদ্ধ যিশুর।আর ঘুমে নয় আর ঘরে নয়
আর নয় খান খান হুঁশ
রাখতে হবে সবার মনে
আমরা সবাই মানুষ।