রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত: ডোপ টেস্টে ধরা পড়ল মাদকাসক্তি
  •   সাতক্ষীরায় ব্যবসায়ীর ২৩ লাখ টাকা ছিনতাই: স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ
  •   চাকা পাংচার হওয়ায় এনজিও কর্মকর্তার মৃত্যু
  •   বরগুনায় টিকটক নিয়ে পারিবারিক কলহ: স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী আত্মহত্যার চেষ্টা
  •   মানব পাচারের চক্রের বিরুদ্ধে বিজিবির সফল অভিযান: কিশোরী উদ্ধার, তিন আটক

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২৮

শনিবার সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সেবা কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলছে জীবনদীপ

বিমল চৌধুরী
সেবা কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে চলছে জীবনদীপ

মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে--প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার এই কালোজয়ী গান অনেককেই উদ্বুদ্ধ করেছে এবং প্রেরণা জুগিয়েছে মানুষের কল্যাণে কাজ করার। সমাজে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানসিক তৃপ্তি লাভ করেন। তেমনি একজন মানুষ হলেন চাঁদপুরের সর্বজন পরিচিত বহুগুণে গুণান্বিত সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিনয় ভূষণ মজুমদার। তিনি ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মানব কল্যাণ সেবামূলক সংস্থা 'জীবনদীপ'। যা আজ চাঁদপুর জেলাসহ বিদেশের কয়েকটি স্থানে সেবা মূলক কার্যক্রমের জন্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। জীবনদীপ প্রতিষ্ঠালগ্নে মুমূর্ষ রোগীদের মাঝে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তার সেবা কার্যক্রম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জীবনদীপ অসহায় দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান (মামলা পরিচালনা), বিনামূল্যে দন্ত চিকিৎসা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে মানুষের সহায়তা প্রদানে দেহদান (চোখের কর্নিয়া, কিডনি, ত্বক, অস্থি মর্জা, লিভার, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনে) কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। জীবনদীপের দেহদান কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে চাঁদপুরের বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যাক্তি আর্ত মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণোত্তর দেহদানে নিজেদের অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেছেন, যা আইনিভাবে দেহদানের প্রতিশ্রুতি হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। যারা দেহদানের মত মহৎ কাজে নিজেদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাঁরা হলেন : বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার সাহা, তদীয় পত্নী মুক্তিযুদ্ধকালীন কণ্ঠযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রাপ্ত কৃষ্ণা সাহা , বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, তদীয় পত্নী মানবাধিকার নেত্রী লীলা মজুমদার, অরুণেন্দ্র কিশোর চক্রবর্ত্তী, স্বপ্না ভট্টাচার্য, গোবিন্দ সাহা, সোহেল আহমেদ ভূইয়া, শিখা রাণী চক্রবর্তী, শোভা রাণী বিশ্বাস, কানু দেবনাথ, সাগরিকা মজুমদার, হ্যাপী রাণী সাহা প্রমুখ। জানা যায়, ঢাকা পিজি হাসপাতালে জীবনদীপের হয়ে ১ জন দেহদান করেন এবং ১৩ জন মরণোত্তর দেহ দানে চুক্তিবদ্ধ হন। আর্তমানবতার সেবায় অনেক ভালো কাজে সহায়তা প্রদানকারী জীবনদীপের শনিবার সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চাঁদপুরে শহরে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য 'অঙ্গীকারে'র বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সন্ধ্যায় চাঁদপুর শহরস্থ ফিডার রোডে অবস্থিত (সেবা সিটি সেন্টার সংলগ্ন) জীবনদীপের নিজস্ব কার্যালয়ে আলোচনা সভা, স্বেচ্ছায় রক্ত দাতাদের উৎসাহীকরণে সম্মাননা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্টানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতি একান্তভাবে কামনা করেছেন জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদার। তিনি জানান, কোনো এক সময় মুমূর্ষ অসহায় রোগীদের প্রয়োজনে এক ব্যাগ রক্তের জন্যে তার পরিজনরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ঘুরে বেড়াতেন, এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহে তাদের অনেক কষ্ট পেতে হতো। বর্তমান সময়ে এখন আর সেই অবস্থা নেই, মানুষ আগে রক্ত দিতে ভয় পেতো, কিন্তু বর্তমানে আর ভয় পান না। আমাদের সমাজে অনেক ভালো মনের তরুণ যুব সমাজ আছে, যারা স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে উৎসাহবোধ করেন, কিন্তু আমরা সেই সকল উৎসাহী যুবকদেরকে চিনতে বা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি না। জীবনদীপ সেই কাজটিই করছে। জীবনদীপ মানবতাবাদী তরুণ যুবকদেরকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহী করতে চেষ্টা করছেন। তাদের দেওয়া রক্তে যেন একজন মুমূর্ষ রোগী প্রাণ ফিরে পায় এবং রক্তের অভাবে একজন রোগীও যেন মৃত্যুবরণ না করেন সেই লক্ষ্য নিয়েই জীবনদীপ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সমাজে যত দান আছে তার মধ্যে বৃহৎ দান হলো স্বেচ্ছায় রক্তদান। রক্তদানের উপরে কোনো দান আছে কিনা আমার জানা নেই। মানুষ অর্থের বিনিময়ে সকল কিছু পেতে পারেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করতে পারেন না। আমরা যেখান থেকে যে অবস্থায়ই রক্ত সংগ্রহ করি না কেন, তাও কোনো না কোনো ব্যক্তির দেওয়া রক্ত। রক্তের কোনো দাম হয় না, তা অতি মহামূল্যবান বা অমূল্য সম্পদ। যার রক্তের প্রয়োজন হয় সেজনই বুঝতে পারেন রক্তের সীমাহীন মূল্যের কথা। তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতি ৩ মাস অন্তর রক্ত দান করতে পারেন, তাতে তার শারীরিক অবস্থা ভালো থাকে। আমাদের শরীরে প্রতি নিয়ত রক্ত কণিকা উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন হওয়া রক্ত কণিকা আবার নিজে নিজেই নিঃশেষ হয়ে যায়। উৎপাদিত রক্তকণিকা দেহে বেঁচে থাকে না। তাই সুস্থ মানুষ রক্ত দিলে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না বরং তার দেওয়া রক্তে অন্য একজনের প্রাণ রক্ষা পায়। তিনি জীবনদীপের সেবামূলক কার্যক্রমসহ রক্তদান ও বিচার বিভাগের অধীনে থাকা সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নে লিগ্যাল এইড সম্পর্কে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করণের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিবসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কচুয়ায় লিগ্যাল এইড বা আইনি সহায়তা বিষয়ে মতবিনিময় সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে তৎকালীন নারী ও শিশু বিশেষ আদালতের মাননীয় জজ আ. মান্নান সাহেব, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিচার বিভাগের প্রায় ১৪ জন বিচারক উপস্থিত ছিলেন। লিগ্যাল এইডের সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশে প্রায় ২৬০০ বিজ্ঞ আইনজীবী লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত রয়েছেন। যারা অসহায় মানুষদেরকে আইনি সহায়তা দিয়ে মামলা পরিচালনা করতে তৎপর রয়েছেন। চাঁদপুরেও প্রায় ৪০ জন আইনজীবী রয়েছেন, যারা স্থানীয় লিগ্যাল এইডের মামলাগুলো নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮ জন রয়েছেন জীবনদীপের সাথে সম্পর্কিত। যারা নিঃস্বার্থভাবে জীবনদীপের হয়ে কাজ করছেন। অসহায় মানুষের কল্যাণে আইনী সহায়তা প্রদানে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটিতে জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদারও অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদার বলেন, জীবনদীপের সেবামূলক কার্যক্রম শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সংগঠনটির কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ছড়িয়ে পড়েছে। জীবনদীপ বিভিন্ন সময়ে বিজয় মেলা মঞ্চ থেকে শুরু করে , জেলা কমিউনিটি পুলিশিং দিবস সহ বিভিন্নস্থানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় রক্তদান, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, রক্ত দাতাদের উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্ন অনুষ্টানের মধ্যে দিয়ে জাতীয় দিবসগুলো পালন করে আসছে যথাযথ মর্যাদার সাথে। জীবনদীপের আজ যা কিছু অর্জন তা সবই সম্ভব হয়েছে মানবিক সেবা প্রদানে উৎসাহী উদীয়মান তরুণ যুব সমাজ ও চাঁদপুরবাসীর জন্যে। তিনি আরো বলেন, ছাত্রজীবনে থাকা অবস্থায়ই মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্যে নিজের মাঝে একটা তাগিদ অনুভব করতেন। তারই প্রেক্ষিতে ছাত্রজীবন থেকেই ক্ষুদ্র পরিসরে স্বেচ্ছায় রক্তদানের মধ্যে দিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারীদের স্মরণে ১৯৭৪ সালে আমার নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী রক্ত বিক্রি করে জগন্নাথ হলে শহীদমিনার স্থাপন করি। পরবর্তী সময় তারই প্রেক্ষিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর চাঁদপুরে মানব উন্নয়ন সেবা মূলক সংস্থা জীবনদীপ প্রতিষ্ঠা করি। যা আজ সর্ব মহলে সেবা কার্যক্রম মূলক সংগঠন হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। মুমূর্ষ অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার তাগিদে চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমে ১৯৮৮ সালে বিবেকানন্দ যুব সংঘ প্রতিষ্ঠা করি। প্রতিষ্ঠা পর্ব থেকে শুরু করে সংগঠনটি স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে চাঁদপুরের সকল মহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি বিবেকানন্দ যুব সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে চাঁদপুরে কর্মরত চিকিৎসক ও সুধীজনদের সহায়তায় প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করি। যার কার্যক্রম চাঁদপুরে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে। বিবেকানন্দ যুব সংঘ থেকে শুরু করে জীবনদীপ দুঃস্থ অসহায় মানুষের সুস্থতায় বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ব্যাগ রক্ত দান করেছেন। যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত। ১৩ ডিসেম্বর জীবনদীপের কাতার শাখা ব্যাপক আয়োজনে বাংলাদেশের বিজয় দিবস ও কাতারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কাতারে রক্তদান কর্মসূচি পালন করে। জীবনদীপ কাতার শাখার প্রধান মো. সাইফুদ্দিন খান ও আরমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রবাসী ভাইয়েরা স্বেচ্ছায় রক্তের গ্রুপ নির্ণয়সহ বিনামূল্যে রক্তদান করেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ও জীবনদীপের অকুতোভয় তরুণ যুবক ভাইয়েরা তাদের রক্তদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। প্রতদিনই তারা তাদের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সকলের মাঝে। আগামী দিনগুলোতেও যাতে জীবনদীপ সফলতার সাথে নিঃস্বার্থ সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন সেজন্যে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর চাঁদপুর বড় স্টেশনের মোলহেডে মানব উন্নয়ন সেবা মূলক সংস্থা জীবনদীপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখছেন জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদার। পাশে স্বেচ্ছায় রক্তদান করছেন জীবনদীপের প্রতিষ্ঠাতা বৈভব মজুমদার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়