বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৩

আবারও শুরু হয়ে গেলো

সুধীর বরণ মাঝি
আবারও শুরু হয়ে গেলো

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। আমাদের জাতীয় সম্পদগুলোর মধ্যে ইলিশও একটি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরিতেও আমাদের জাতীয় সম্পদ, জাতীয় মাছ ইলিশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আজকে কয়েক বছর পর্যন্ত ইলিশের চরম সংকট চলছে। আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ বহুদিন আগে থেকেই নিম্নবিত্ত পরিবারের রান্নাঘরের খাদ্য তালিকা থেকে উঠে গেছে। ইলিশ মধ্যবিত্তের তালিকা থেকেও উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইলিশ এখন উচ্চবিত্তের খাদ্য তালিকার পছন্দের নাম। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির অতিমাত্রার লোভের কারণে গত কয়েক বছর যাবৎ এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। জেলেরা আগামীদিনের কথা একবারের জন্যেও না ভেবেই নির্বিচারে মা ইলিশ নিধন করে চলছে। যা অনেকটাই নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারার মতো।

মা ইলিশ রক্ষার দায়িত্ব আমার আপনার সবার। আমাদের ভৌগোলিক সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে হলে মা ইলিশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানের তিন-চার দিন নৌকাবিহীন নদী দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম এবং এবার মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল এবং আগামীদিনে আমরা ইলিশের স্বাদ নিতে পারবো ভেবেছিলাম । কিন্তু সেই আশাকে হতাশায় পরিণত করে গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শুরু হওয়ার ৪ দিন পার হওয়ার পর ৫ দিনের মাথায় শুরু হয়ে গেলো মা ইলিশ ধ্বংসের মহোৎসব। মা ইলিশ নিধনের মাধ্যমে শুধু জেলেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সর্বনাশ হচ্ছে দেশেরও। এক ইলিশে তেইশ লক্ষ ডিম। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা মেতে উঠেছে মা ইলিশ, ডিমওয়ালা ইলিশ নিধনে। এই জেলেরা কি রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসনের চেয়ে অধিক ক্ষমতাধর, নাকি প্রশাসনের দুর্বলতায় জেলেরা এই হীন কাজে মেতে উঠে?

মা ইলিশ রক্ষার অভিযান চলাকালে অসাধু ব্যবসায়ী এবং অতিলোভী জেলেরা বিশেষ করে ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, লক্ষ্মীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাওয়া, গজারিয়া, চাঁদপুরের মতলব, রাজরাজেশ্বর, হাইমচর, কাটাখালী, চরভৈরবী, মাঝিরবাজার, সাহেবগঞ্জ, ফেরিঘাট, ঈশানবালাসহ আরো কিছু কিছু স্থানে রাতের আঁধারে অবাধে নিধন করে যাচ্ছে মা ইলিশ এবং ডিমওয়ালা ইলিশ। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল করতে কঠোরতা, জবাবদিহিতা এবং সচেতনতার বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে মা ইলিশ রক্ষা করার অভিযানকে সফল করতে হবে যে কোনো মূল্যে।

মা ইলিশকে যদি প্রজনন মৌসুমে রক্ষা করতে না পারি, তবে ইলিশ আর নদীতে পাওয়া যাবে না, ইলিশ পাওয়া যাবে জাদুঘরে। আমরা আমাদের ইলিশকে জাদুঘরে দেখতে চাই না। ডুবোচর এবং ভাসমান চরের কারণে নদীতে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, পক্ষান্তরে মায়ানমারে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে । নদী দূষণ, শব্দ দূষণ এবং নদী দখল ইলিশসহ মিঠা পানির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড়ো বাধা। ইলিশসহ মিঠা পানির অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নদী দূষণরোধ এবং নদীকে দখলমুক্ত রাখতে হবে। কিছু দিনের নৌকাবিহীন নদীর সৌন্দর্য হবে আগামী দিনের মাছে পূর্ণ নদী, যা আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা। মা ইলিশ এবং ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের ইলিশের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং এতে জেলেদের মাঝে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে। আমরা সকলেই ইলিশের স্বাদ নিতে পারবো। মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করতে হলে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে, মা ইলিশ রক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপের কঠোর হস্তে সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। অভিযানে কেউ যেন কোনো প্রকার অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে, সেই দিকে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি আামাদের নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীকেও ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করার জন্যে কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে। আমাদের জাতীয় সম্পদ মা ইলিশ রক্ষার অভিযানের সময় আমাদের জলসীমায় যেন ভারতীয় জেলেরা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং জনসচেতনতাই পারে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানকে সফল করে তুলতে।

১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সব ধরনের ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, বিপণন ও মজুদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিগত বছরগুলোতে দেখা গিয়েছে, মা ইলিশ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলেও কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে মা ইলিশ সংগ্রহ করে থাকে, যা ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্যে বড় বাধা। উক্ত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রশাসনের অপর্যাপ্ত পদক্ষেপের ফলে অসাধু জেলেদের মা ইলিশ সংগ্রহ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে কালোবাজারি রোধ করে ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং তৎসংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করছি। মা ইলিশ রক্ষার জন্যে জেলেদের নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উঠান বৈঠক করতে হবে। জেলেদের বোঝাতে হবে, এই মা ইলিশ তাদের সন্তানের মতো। সন্তানকে যেভাবে লালন পালন করতে হয়, ঠিক একইভাবে মা ইলিশের যত্ন নিলে এই ইলিশও তাদের অভাব ঘোচাবে। নির্বাচনী গানের মতো মা ইলিশকে নিয়েও গান রচনা করে প্রতিটি চ্যানেলে সংবাদের আগে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। মিডিয়া কর্মীদের আরও ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সফলতা কামনা করি। আমরাও ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে চাই, ইলিশের পুষ্টিগুণ পেতে চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়