প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির ভার্চুয়াল সভায় জেলা প্রশাসক
চাঁদপুর সেতুর টোল বাতিলের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে
চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা গতকাল ১৬ আগস্ট সোমবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। সভায় জেলায় বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিশেষ করে চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধ হওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসক আশার কথা জানান।
|আরো খবর
সভার শুরুতে জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমাদের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে এখন আমরা সাময়িক স্বস্তিতে আছি। কিন্তু যতোক্ষণ পর্যন্ত না এটিকে একটা ভালো পর্যায়ে না দেখবো ততোক্ষণ পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
সভায় জেলা প্রশাসক সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ ও আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব-উল-করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিভিল সার্জন জানান, জেলায় সংক্রমণের হার কমেছে। আক্রান্তের হার ২৫ ভাগে নেমে এসেছে। যেটি এতোদিন অনেক উপরে ছিলো। এছাড়া গত ১৫ দিনে এ জেলায় করোনা পজিটিভ রোগী ৪৩ জন মারা গেছেন। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বা চাপ কমে আসছে। তিনি জানান, আজ সোমবার জেনারেল হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা হচ্ছে ১শ’ ১২ জন। যা গত সপ্তাহে অনেক বেশি ছিলো। তিনি আরো জানান, টেস্টিং কীট সঙ্কট রয়েছে। আশাকরি সেটি কেটে যাবে। আর টিকা নতুন কাউকে দেয়া যাবে না আপাতত। তবে সিনোফার্ম দ্বিতীয় ডোজ যারা নেবেন তারা ২৬ আগস্ট পর্যন্ত পাবেন।
জেলা প্রশাসক আইসিইউ ও হাসপাতালের ভেন্টিলেটর সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব-উল-করিম বলেন, আইসিইউ কবে চালু হবে তা বলতে পারছি না। তবে আইসিইউর জন্যে ২ জন চিকিৎসক ও ২ জন নার্সকে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ের জন্যে পাঠাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। চিঠির আলোকে আজ সোমবার তারা সেখানে গেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, হাসপাতালের এসব বিষয় নিয়ে আমি প্রথমে অনেক কথা বলেছি, নিজের কিছু করার কর্তব্য বলে করেছি এখনো করছি। এছাড়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায়ও জেলা প্রশাসক আছেন। কিন্তু আপনাদের আন্তরিকতার অভাব দেখছি। আমাকে জানাতে পারেন অনেক বিষয়। কিন্তু তা আপনারা করেন না। যাক যেভাবে ভালো সেভাবে করেন। রোগীরা বা অন্যেরা যেনো বলতে না পারে তারা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দেখছে।
সভায় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, শহর রক্ষাবাঁধের জন্যে যে স্থায়ী ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কাজ হওয়ার কথা, সেটি বোধহয় সহসা তথা এ অর্থবছরে হচ্ছে না। অথচ একই রকম প্রকল্প লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরেরটা হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এমনটা কী কারণে? আর এমন হলে তো আমরা ২ বছরই পিছিয়ে যাবো। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেন। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রীর সাথে এসব শেয়ার করুন। তিনি এ ব্যাপারে অনেক আন্তরিক শুরু থেকেই। চাঁদপুরকে রক্ষা করতে তিনি অনেক বেশি কাজ করেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২১ আগস্ট পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় আসবেন। জেলা প্রশাসক রাজরাজেশ্বর, রঘুনাথপুরসহ বেশ ক’টি এলাকার ভাঙনরোধ বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো প্রকৌশলী জানান, রাজরাজেশ্বরে স্থায়ী কোনো কাজ করা সম্ভব না। সেখানে কাজ করলে থাকবে না। কারণ উল্টো দিকটায় পদ্মা আরও বেশি উত্তাল। জেলা প্রশাসক জানান, এসব নিয়ে সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলতে হবে। কী করে বাড়িঘর সেখানে রক্ষা করা যায় তা করতে হবে। না হয় সেখানের মানুষের দুর্দিন বাড়বে। এছাড়া চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ বাঁধে ইমার্জেন্সি কাজ করা যায় এমন জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখার জন্যে তিনি বলেন।
চাঁদপুর সেতুর টোল বাতিলের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে আনেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রকৌশলী জানান, এ অর্থ বছরে এটি ৩ বছরের জন্যে ৮ কোটি ৮ লাখ টাকা ইজারা দেয়া হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের গণদাবি, এই টোলপ্রথা উঠে যাক। এখন এটা ইজারা দিয়েছেন, তাই বলে টোল আদায় বিলুপ্ত করা যাবে না, তা ঠিক না। এ ব্যাপারে সচিব মহোদয়ের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তোমরা জনপ্রতিনিধিদের ডিও নিয়ে এবং জনমানুষের দাবি উপস্থাপন করে আবেদন করো। আমরা দেখবো। তাই ইজারা দিলে জনস্বার্থের জন্যে তা বাতিল করা যাবে না, এটি ঠিক না। তিনি খুব শীঘ্রই এমন একটা আবেদন তৈরি করে এবং তার সাথে কী কী দরকার সেটা করার নির্দেশ দেন। সমন্বয় সভায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তাদের অনেক কাজের খবর, অর্থ বরাদ্দ, যুবকদের উন্নয়ন এসব বিষয়ে প্রচার নেই বলে সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
জেলা প্রশাসক চাঁদপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আগেও বলেছি, এখনো বলি, এসব বিষয়ে আন্তরিক হোন। এছাড়া সভায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মডেল মসজিদ, খাদ্য, কৃষি, পরিসংখ্যান, পল্লী উন্নয়ন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন বিভাগের উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এদিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে জেলেদের হালনাগাদ এবং নির্ভুল তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসক ছাড়াও সভায় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আসম মাহবুবুল উল আলম লিপন, ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়র আবুল খায়ের, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, ডিডি এনএসআই শাহ আরমান আহমেদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং অন্যান্য বিভাগের প্রধানরা সভায় যুক্ত ছিলেন।