বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল নিয়ে বিপাকে ৬৭ সংগঠন

সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি স্বেচ্ছাসেবীরা

সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি স্বেচ্ছাসেবীরা
রাসেল হাসান ॥

মানবিকতা ও সমাজিকতার দায় থেকেই করোনাকালীন অক্সিজেন সংকট মেটাতে কাজ করছে চাঁদপুরের ৬৭টি সংগঠন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীর করোনা পজিটিভ নাকি নেগেটিভ তা যাচাই না করে ফোন পেলেই নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন জেলার ৬ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী।

সংগঠনগুলোর কাছে থাকা অক্সিজেন সিলিন্ডার একজন রোগীকে সেবা দিলেই ফুরিয়ে যায় এর গ্যাস। পরে খালি বোতল ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের। চাঁদপুর জেলা সদরে একটি মাত্র দোকান থাকায় অক্সিজেন যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দোকান মালিক। জেলার কোনো কোনো সংগঠন ছুটছে কুমিল্লা, চট্টগ্রামেও। লকডাউনে সড়কে গাড়ি না থাকায় ভোগান্তি এখন চরমে।

সিলিন্ডার রিফিলে অক্সিজেনের দুষ্প্রাপ্যতা তো আছেই সেই সাথে স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। এক প্রকার বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাসেবী উদীয়মান তরুণরা আড়াই শ' টাকার অক্সিজেন গ্যাস রিফিল করতে হয় ৫শ' থেকে ৮শ' টাকায়।

জেলায় ৬৭টি সংগঠন (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) কাজ করছে ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস নিয়ে। ফোন করলেই শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় ভোগা রোগীর বাসায় দৌড়ে যান স্বেচ্ছাসেবীরা। এই ৬৭টি সংগঠনের মজুতকৃত সিলিন্ডারের সংখ্যা ৮ শতাধিক। ৮শ' সিলিন্ডারই প্রতিদিন কারো না কারো বাড়ি যাচ্ছে। কোনো রোগীকে দেড় থেকে দু'ঘণ্টা সেবা দিলেই ফুরিয়ে যায় সিলিন্ডারের গ্যাস। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বাড়ে গ্যাস রিফিলের দুশ্চিন্তা। খালি বোতল সাময়িক কিছু সময় পড়ে থাকে সংগঠনের কার্যালয়ে।

হঠাৎ যখন একটি ইমার্জেন্সি ফোন আসে ‘রোগীর অবস্থা আশংকাজনক, এক্ষুণি লাগবে অক্সিজেন’ তখনই মানবিক এই তরুণরা খালি সিলিন্ডার নিয়ে ধরা দেন চাঁদপুর জেলার একমাত্র অক্সিজেন রিফিলকারী প্রতিষ্ঠান এফ.এস. মেটালের কাছে। স্বেচ্ছাসেবীদের রাজি করিয়ে আড়াই শ' টাকার গ্যাস এফ.এস. মেটাল নিচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ' টাকা। তারুণ্যের উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত মানবিক এই তরুণরা কখনো অর্থ নিয়ে ভাবেননি। তাদের কাছে পকেটের টাকার চেয়ে রোগীর জীবনটাই যে মুখ্য। তাই শুধু ৫শ' কেন গ্যাস রিফিল সিরিয়ালে অগ্রাধিকার পেতে ৮শ' টাকা দিয়েও জরুরি সিলিন্ডার ভর্তি করছেন কেউ কেউ।

গ্যাস রিফিল সমস্যা বা রিফিলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এ দু'টি সমস্যার চাইতেও আরো একটি বড় সমস্যা ইদানিং কালে স্বেচ্ছাসেবীদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম দিকে কাজ করা সংগঠনগুলো যে সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে রোগীকে ৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিলেও গ্যাস শেষ হতো না, সাম্প্রতিক সময়ে সেই সংগঠনগুলোই ওই একই সিলিন্ডারে রোগীকে ৭০ থেকে ৮০ মিনিটের বেশি সার্ভিস দিতে পারছেন না। রোগীকে সার্ভিস দেয়ার ঘণ্টা খানেক পরই রোগীর বাড়ি থেকে খবর আসে, সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ, আরেকটি বোতল লাগবে। কিছু কিছু নতুন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানেই না একটি সিলিন্ডার একবার রিফিল করলে যে তা ৩ থেকে চার ঘণ্টা সার্ভিস দিতে পারে।

মূলত সমস্যা কোথায়? বাকি তিন ঘণ্টার গ্যাস কি উধাও হয়ে গেল? সিলিন্ডারে কমে যাওয়া অদৃশ্য গ্যাসের রহস্য উদ্ঘাটনে গত দুই দিন ধরে অনুসন্ধান চালায় চাঁদপুর কণ্ঠ। বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য।

কথা বলা হয় চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে পুরানো অক্সিজেন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কচুয়া উপজেলার 'আলোর মশাল'-এর সাথে। যারা এ পর্যন্ত ৯০ জন রোগীকে দিয়েছেন ফ্রি অক্সিজেন সেবা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুখ সায়েম জানান, আগে ঘণ্টায় ২০ মিনিট করে সার্ভিস দিলে একবার রিফিল করা সিলিন্ডার ৫ ঘণ্টাও চলতো। বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট পর্যন্ত সার্ভিস দেয়া যায়। অবশ্য কুমিল্লা থেকে গ্যাস রিফিল করলে আগের মত ৫ ঘণ্টাই সার্ভিস পাওয়া যায়।

শুধু কচুয়ার আলোর মশাল সংগঠনই নয়, জেলার অন্তত ১৫টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে পাওয়া যায় একই অভিযোগ। সকলেরই মতামত, যতই দিন যাচ্ছে ততই সিলিন্ডার কম সার্ভিস দিচ্ছে। দ্রত সময়ে ফুরিয়ে যাচ্ছে গ্যাস। চাঁদপুর ছাড়া অন্য কোথাও থেকে গ্যাস রিফিল করলে এ সমস্যায় পড়তে হয় না।

বোঝা গেলো সমস্যাটা চাঁদপুরের কোথাও। কথা বলা হয় চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের নিকটস্থ এফএস মেটালের সাথে। দোকানের স্বত্বাধিকারী মোঃ ইব্রাহীম গাজী প্রথম কথোপকথনে জানালেন, আমরাতো ঠিক মতই দিচ্ছি। ওনাদের সিলিন্ডার কেন ৯০ মিনিটে শেষ হয়ে যায় তাতো বলতে পারবো না।

এবার কথা বলা হয় চাঁদপুর জেলা সদরের অন্যতম সামাজিক সংগঠন 'তারুণ্যের অগ্রদূত'-এর প্রতিষ্ঠাতা ভিভিয়ান ঘোষের সাথে। তিনি বলেন, চাঁদপুরে ওই একটি মাত্র দোকানেই রিফিল করতে পারে সিলিন্ডার। এতে যা গ্যাস পান তা দিয়ে আগে ৪ ঘণ্টা চললেও বর্তমানে ৮০-৯০ মিনিটেই গ্যাস ফুরিয়ে যায়। 'কেন এমন হয়' প্রশ্ন করলে ভিভিয়ান বলেন, আমাদের সিলিন্ডার রিফিল হয়েছে বলা হলেও সিলিন্ডারে অক্সিজেনের চাপ কমিয়ে দেয়া হয়। পূর্বে গ্যাসের ২ হাজার প্রেশার পেতাম। তা দিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা সার্ভিস চলতো। কিন্তু ৫শ’-৬শ’ টাকা নিয়েও বর্তমানে প্রেশার দেয়া হচ্ছে ১ হাজার, ৮শ', ৭শ' বা তারও কম। গ্যাসের প্রেশার কম থাকায় গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে যায়।

ভিভিয়ান ঘোষের কথার সূত্র ধরে দ্বিতীয়বার কথা বলা হয় এফ.এস. মেটালের মালিক ইব্রাহীম গাজীর সাথে। ‘স্বেচ্ছাসেবীদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা নিলেও অক্সিজেন কেন কম দিচ্ছেন' এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কথার জড়তায় ভোগেন ইব্রাহীম গাজী। নানান অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন, প্রথম কয়েকটি সিলিন্ডারকে ২ হাজার প্রেশার দিলেও পরবর্তী সিলিন্ডারগুলোকে প্রেশার কম দেন। কারণ হিসেবে বলেন, তার গ্যাসের পর্যাপ্ত মজুত দেই। যা আছে তা দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে হয়।

'শেষ পর্যন্ত প্রেশার কতটুকু কম দেন’ এমন প্রশ্নে ইব্রাহীম গাজী বলেন, ২ হাজার থেকে কমতে কমতে ৬শ’-৫শ’ প্রেশারও দেই। বড় বোতল থেকে ছোট বোতলে গ্যাস দিতে গেলে একটু-আকটু এমনেই কম যায়। যা দেই স্বেচ্ছাসেবকরা তা নিয়েই চলে যায়। কেউ কোনো কমপ্লেইন করে না। 'ওরা বুঝে না বা বিপদগ্রস্ত তাই কমপ্লেইন করছে না। তাই বলে আপনি ওদের সেই সরলতার সুযোগ নিবেন' এমন প্রশ্নে নিশ্চুপ ছিলেন ইব্রাহীম গাজী।

'সবাইকে সন্তুষ্ট করতে সিলিন্ডারে গ্যাস যেহেতু কম করে দিচ্ছেন, দামে কম নিচ্ছেন কি-না' জানতে চাইলে ইব্রাহীম গাজীর উত্তর 'না'। বাজারে কোনো পণ্য পরিমাপে কম দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ মনিটরিং সেল বা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) হস্তক্ষেপ করেন, কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে উচ্চ দাম নিয়েও গ্যাসের মাপের যে অনিয়ম চলছে তাতে হস্তক্ষেপ করবেন কে?

এটিতো শুধু গ্যাসের দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার তথ্য। এবার অনুসন্ধান শুরু হয় সিলিন্ডার রিফিলের দ্বিগুণ বা তিনগুণ দাম নিয়ে। করোনাকালীন সময়ে সারাদেশেই অক্সেজেনের চাহিদা বেশি। তাই রিফিল মূল্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু দাম যখন তিনগুণ পেরিয়ে চারগুণের কাছে তখনতো তা মরার উপর খাড়ার ঘা প্রবাদটির মতই হয়ে যায়।

কথা বলা হয় চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের ফ্রি অক্সিজেন সেবাদানকারী সংগঠন যুব জাগরণ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোঃ আক্তার হোসেনের সাথে। কথা হয় মতলব দক্ষিণের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অঙ্গীকার বন্ধু সংগঠনের আল আমিন মিয়াজি ও নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের আরিফুল ইসলাম শান্তের সাথে। প্রত্যেকেরই অভিযোগ, চাঁদপুরে প্রতি সিলিন্ডার রিফিল করতে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা করে দিতে হয়। অভিযোগের তীর আবারো চাঁদপুর এফ.এস. মেটালের ইব্রাহীম গাজীর দিকে।

'রিফিলে কেন এত টাকা খরচ হয়' জানতে চাইলে শাহরাস্তি সজাগ ফাউন্ডেশনের এম.এ. হাসান আহমেদ বলেন, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে প্রতি সিলিন্ডারে দুই শ' টাকা খরচ হলেও চাঁদপুরে নিচ্ছে ৫শ' থেকে ৬শ' টাকা। দোকানদারকে জিজ্ঞাস করলে বলেন, উনার গ্যাসের যোগান নেই। কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই চাঁদপুরে দাম বেশি।

‘আসলেই কি কুমিল্লায় প্রতি সিলিন্ডার রিফিলে খরচ মাত্র ২শ' টাকা’? এমন তথ্যের সত্যতার জন্য কথা বলা হয় কুমিল্লা শহরের খন্দকার এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু তাহেরের সাথে। তিনি জানান, আজও তিনি ২ হাজার বোতল রিফিল করেছেন প্রতি বোতল ২শ' টাকা করে। 'করোনাকালীন প্রতি বোতল মাত্র ২শ' টাকা রিফিল করলে তার লাভ থাকে কি-না' জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে প্রতি বোতলে ৪০-৫০ টাকা লাভ থাকে।

আপাতত ধরেই নিলাম চাঁদপুরের অক্সিজেন হয়তো খাঁটি অক্সিজেন তাই তার দামটা একটু বেশি। কিন্তু তাতেও মিলছে না সমাধান। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আরেকটি প্রশ্ন। ‘কোম্পানি দাম বাড়ালেতো সকল গ্রাহকের ক্ষেত্রে দাম বাড়ার কথা। দাম কি সবার জন্যই বেড়েছে নাকি শুধুই স্বেচ্ছেসেবীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা?’ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আবারো মাঠে নামে চাঁদপুর কণ্ঠ।

'করোনার ক্রান্তিকালেও প্রতিনিয়ত অক্সিজেন রিফিল করতে হয় জেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে। তারা কোথায় রিফিল করেন? তাদের খরচইবা কত?’ এ দু'টি প্রশ্ন নিয়ে কথা বলা হয় চাঁদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজার বিশ্বজিত পালের সাথে। তিনি জানান, তারা চাঁদপুরেই অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করেন। প্রতি বোতলে আগে ২শ' টাকা খরচ হতো, এখন খরচ হয় ২৫০ টাকা!

একই প্রশ্নে কথা বলা হয় চাঁদপুর মিডল্যান্ড হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের সাথে। তারাও রিফিল করেন চাঁদপুরেই। বর্তমানে খরচ হয় প্রতি বোতলে ২৭০ টাকা। বোঝার আর বাকি রইলো না জেলার সকল প্রাইভেট হসপিটালের চিত্র একই।

'একই দিনে প্রাইভেট হসপিটালের অক্সিজেন সিলিন্ডার যদি ২৫০ টাকায় রিফিল হয়, তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে কেন নেয়া হচ্ছে ৫-৬শ' টাকা?' জানতে চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে তৃতীয় বারের মত কথা বলা হয় এফ.এস. মেটালের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহীম গাজীর সাথে। প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললেন, আরে ভাই অক্সিজেনের দাম বাড়ছে। কেন বুঝেন না আপনি! আমরা ঢাকা থেকে কম দামে আনতে পারলেই না কম দামে স্বেচ্ছাসেবীগরে দিতে পারমু। আমাগোই খরচ হয় ৫শ' টাকা, আমি এর চেয়ে কম দামে রিফিল করি ক্যামনে?

বুঝা গেলো তিনি রেগে আছেন। দীর্ঘ আলাপচারিতায় নানা কথার বাহানায় শান্ত করে ইব্রাহীম গাজীকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কীভাবে হয় এত খরচ? কোথা থেকে আসে তার অক্সিজেন? বড় খরচের খাতগুলো কী?’ প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ‘ইউনিয়ন অক্সিজেন' নামক একটি কোম্পানি তাকে অক্সিজেন সরবরাহ করে। আগে প্রতি সিলিন্ডার রিফিলে কোম্পানির খরচ ছিলো ২শ' টাকা। এখন পার সিলিন্ডারে ১শ’ টাকা বাড়িয়ে ৩শ' টাকা করা হয়েছে। সিলিন্ডার চেকার নামে কোম্পানির কিছু লোক থাকে। সিলিন্ডার ছাড়াতে তাদের পূর্বে ঘুষ দিতে হতো ৩ হাজার টাকা, এখন দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। সাথে ট্রাক ভাড়াতো আছেই।

ইব্রাহীম গাজীর কথার সত্যতা খুঁজতে এবার ঢাকার নারায়ণগঞ্জ 'ইউনিয়ন অক্সিজেন' কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস অফিসার জোবায়ের হোসেনের সাথে কথা বলে চাঁদপুর কণ্ঠ। জানতে চাওয়া হয় বর্তমানে তাদের প্রতি অক্সিজেন রিফিল চার্জ কত? তিনি জানান, প্রতি সিলিন্ডার অক্সিজেন রিফিল খরচ পূর্বে ছিলো ৭০-৮০ টাকা। এখন চাহিদা বাড়ায় সিলিন্ডার প্রতি নেয়া হচ্ছে মাত্র ১শ’ টাকা।

‘আপনাদের কোম্পানিতে চেকার নামে কি কোনো টিম আছে? প্রতি ট্রাক মাল ছাড়াতে যাদেরকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়?’ এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হলেন 'ইউনিয়ন অক্সিজেন' কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস অফিসার। বললেন, এক ট্রাক মালের দামইতো ৪-৫ হাজার টাকা। তা ছাড়াতে আবার ৫ হাজার টাকা ঘুষ দেয় ক্যামনে? আমার কোম্পানিতে মাল ডেলিভারি আমি দেই। ডেলিভারির সময় আমি কোনোদিন একটি টাকা ঘুষ নিয়েছি এমন তথ্য যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি নাকে খৎ দিয়ে চাকরিই ছেড়ে দিবো।

এতক্ষণে সবকিছু পরিষ্কার। বুঝা গেলো গ্যাসের দাম বাড়েনি বরং জেলার শত শত স্বেচ্ছাসেবীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এফএস মেটাল চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ব্যবসা। চাঁদপুর পৌরসভায় প্রশাসনের নাকের ডগায় করোনাকালীন মুহূর্তে অক্সিজেন রিফিলের নামে নীরবে ব্যবসা করে গেলেও তা নিয়ে মুখ খোলেনি কেউ। স্বেচ্ছাসেবীরা সাময়িক প্রতিবাদ করেও ফল পায়নি। ইতোমধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলার পপুলার স্বেচ্ছাসেবী টিমের মনিরুজ্জামান বাবলু সহ বেশ কয়েকজন উদ্যোগ নিয়ে পৃথক ট্রাক ভাড়া করে চট্টগ্রাম থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এভাবে স্বেচ্ছাসেবীদের একক সংগ্রাম আর কতদিন চলবে?

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, আপনাদের অনুসন্ধানে এ কথা স্পষ্ট যে, ওই দোকানটাই স্বেচ্ছাসেবীদের জিম্মি করে এই ধান্দাবাজিগুলো করছে। আমাদের পৌরসভার সংগঠনগুলো যেন এমন লাঞ্ছনার শিকার না হয়, তাই আমি পৌরসভা থেকে কিছু গাড়ির ব্যবস্থা করছি। সব সংগঠনের খালি সিলিন্ডার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে রিফিল করে নিয়ে আসবে। সংগঠনগুলো শুধু চট্টগ্রামের রিফিল খরচটাই দিবে। যাতায়াত ভাড়া আমার পক্ষ থেকে আমি ব্যবস্থা করবো। করোনাকালীন সময়ে এই সেবাটুকু আমি দিতে চাই।

তবে পৌর মেয়র সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, কোনোক্রমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাসা-বাড়িতে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে না। রোগীকে হসপিটালে ভর্তির পরামর্শ দিতে হবে। হসপিটালে যদি অক্সিজেন সংকট হয় তবে সেখানে সিলিন্ডার সরবরাহ করলে রোগী ও স্বেচ্ছাসেবী উভয়ের জন্য ভালো হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়